ক্রীড়া প্রতিবেদক, আবুধাবি থেকে

  ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নিয়মের দেশেও অনিয়ম

বিশ্বের আর ১০টা উন্নত দেশের মতোই একটি সংযুক্ত আরব আমিরাত। রাজধানী আবুধাবি হলেও প্রাণকেন্দ্র দুবাই। এই শহরেই আরবদের সভ্যতা ও প্রাচীন সংস্কৃতির নিদর্শন পাওয়া যায়। কিন্তু কয়েক দশক আগের দুবাই আর এখনকার দুবাইয়ের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর।

বিরাণ ভূমির দেশে রং-বেরঙের লোকের অভাব নেই। স্বাভাবিকভাবেই বেশভূষাতেও ভিন্নতা। এদের বড় একটা অংশকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে সময়। জীবিকার তাগিদে তাদের যেন দম ফেলারও সুযোগ নেই। শ্রমিকদের জন্য তো এই দেশটা বিভীষিকাময়। ন্যূনতম ১২ থেকে সর্বোচ্চ ১৮ ঘণ্টাও কাজ করতে হয় খেটে খাওয়া দিনমজুরদের। রাতে ঠিকঠাক ঘুমানোরও সময় পান না তারা। অগত্যা কাজের স্থলে আসা-যাওয়ার সময় বাসে বসেই ঘুমাচ্ছে মানুষ।

অবশ্য সবাই যে এমন মানবেতর জীবনযাপন করছেন, না তা নয়। দুবাইটা কিছু মানুষের জন্য এই পৃথিবীর স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে। অন্তত যেসব মানুষের ব্যক্তিগত একটা গাড়ি আছে তারা একটু হলেও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনের চাকা ঘুরিয়ে যাচ্ছেন। তাদের অস্বস্তিতা অন্য জায়গায়। চাহিদার সীমা নেই বলে আরো ভালো অবস্থানের জন্য দৌড়ঝাঁপ দিচ্ছেন।

অন্যরা এগিয়ে গেলেও বাংলাদেশের প্রায় সব শ্রেণির পেশার মানুষ প্রত্যাশিত সুযোগটা পাচ্ছেন না। চাইলেও পারছেন না কর্মস্থলের ঠিকানা পরিবর্তন করতে। কালেভদ্রে দু-একজন আমলাতান্ত্রিক জটিলতা পেরিয়ে খুঁজে নিয়েছেন প্রত্যাশিত চাকরি। তৃপ্তির ঢেঁকুর নেই তাদেরও।

স্থানীয় আরবদের বসবাস শহরের বাইরে। দুবাই, আবুধাবি, শারজাহ, আজমান প্রায় সব রাজ্য মিলিয়ে প্রায় কোটি লোকের বাস। তাদের চলাফেরার ধরন দেখলে বোঝা কষ্ট এটা মুসলিম দেশ। কিন্তু একটা জায়গায় সবাই এক। কঠোর আইনকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল প্রায় সবাই। যত্রতত্র ধূমপান করতে দেখা যায় না লোকজনকে। রাজপথে উদাসীন চলাফেরা তো নেই-ই। ট্রাফিক সিগন্যাল দেখেশুনেই চলাফেরা সবার। চালকরাও বেশ সচেতন।

কারণ পান থেকে চুন খসলেই বিপদ! দিতে হবে মোটা অঙ্কের আক্কেল সেলামি। অবশ্য সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করার পরও জরিমানার খড়গে পড়তে হয়। তবে শুধু জরিমানা দিয়েই পার পান না চালকরা, অনেক সময় নিয়ম অমান্যকারী গাড়ির জেলও হয়ে থাকে এই দেশে।

সাধারণত বাংলাদেশের ফুটপাত খুব সংকীর্ণ হয়ে থাকে। হকার আর ভ্রাম্যমাণ দোকানিদের কারণে ঠিকঠাক হাঁটাও যায় না। তবে উন্নত দেশ বিধায় বাংলাদেশের সঙ্গে এখানকার পার্থক্যটা আকাশ-পাতাল। মরুর দেশের ফুটপাতগুলো বেশ প্রশস্থ। তবু হাঁটতে-চলতে মাঝেমধ্যেই বেগ পেতে হয় পথচারীদের। বিঘ্ন ঘটান সাইকেল আরোহীরা। চালকদের প্রায় সবাই খেটে খাওয়া মানুষ।

ধীরগতির বাহন বিধায় রাজপথে কিংবা মহাসড়কে সাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা আছে। তাই অলিগলি চষিয়ে বেড়াতে হয় সাইকেল আরোহীদের। তবে বেশির ভাগ সময়ই ফুটপাতের ওপর দিয়ে সাইকেল নিয়ে ছুটছেন তারা; যা আইনবিরুদ্ধ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সাইকেল আরোহীরা আইনের আওতাধীন নয়। কারণ এ দেশের মোড়ে মোড়ে এবং গাড়ির ভেতরে ক্যামেরা বসানো থাকলেও প্রযুক্তির ছোঁয়া না থাকায় বেঁচে যান সাইকেল আরোহীরা।

তবে সাইকেল চালানোরও নিয়ম আছে এখানে। সেই নিয়মের অবশ্য তোয়াক্কা করছেন না তারা। সুনির্দিষ্ট সুরক্ষিত গার্ড এবং হেলমেট পরিধান করে সাইকেল চালানোরই আইন বিদ্যমান আছে। সেটা ও পর্যন্তই। সাইকেল আরোহীরা নিয়মমতোই অনিয়ম করে আসছেন।

পিডিএসও/হেলাল

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
অনিয়ম,সংযুক্ত আরব আমিরাত,দুবাই
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close