নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ এপ্রিল, ২০২১

ডিসিসিআই আয়োজিত ওয়েবিনারে বক্তারা

পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই

বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। তাই দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। এ ছাড়া শিগগিরই ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ৯ সদস্যের ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’-বিষয়ক স্থায়ী কমিটি কাজ শুরু করবে। এর ফলে বাজার নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য সহনীয় পর্যায়ের রাখা সম্ভব হবে।

গতকাল রবিবার ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘পবিত্র রমজান মাসে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। এতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বিশেষ অতিথি ছিলেন।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘রোজা এলেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়ার প্রবণতা পরিলক্ষিত হয় এবং অনেক সময় পণ্যের সাপ্লাই ও চাহিদার সমন্বয় থাকে না।’

তিনি আরো বলেন, পণ্য পরিবহনে চাঁদাবাজি বন্ধে সরকারের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথেষ্ট সচেতনভাবে কাজ করছে। অসাধু ব্যবসায়ীরা যেন সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে বিএসটিআইসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ব্যবসায়ী সমাজকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসার আমন্ত্রণ জানান এবং ব্যবসায়ীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানান।

মন্ত্রী বলেন, ‘করোনা মহামারির কারণে দেশবাসীকে বাঁচাতে সরকার আগামী এক সপ্তাহের জন্য লকডাউনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে এবং সবাইকে তা মানতে হবে।’ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস বলেন, এটি একটি ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা, যার মাধ্যমে জনগণকে আসন্ন রমজান মাসে সুফল দেওয়া যাবে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এরই মধ্যে ৯ সদস্যের ‘বাজার মূল্য পর্যবেক্ষণ ও নিয়ন্ত্রণ’-বিষয়ক স্থায়ী কমিটি গঠন করেছে। যারা শিগগিরই তাদের কাজ শুরু করবে। লকডাউনের সময়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার আহ্বান জানান মেয়র। এ ব্যাপারে মাঠপর্যায়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হবে বলে।

মেয়র বলেন, ব্যবসায়ী সমাজের মতামত গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হবে এবং সবাইকে সঙ্গে নিয়ে রমজান মাসে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা যাবে। ঢাকা মহানগরী হাসপাতালের মাধ্যমে নগরের জনগণকে সিটি করপোরেশনের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা দেওয়া হচ্ছে এবং সামনের দিনগুলোয় এ সেবা আরো বৃদ্ধি করা হবে।

ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি রিজওয়ান রাহমান বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাবের পাশাপাশি অতিরিক্ত মজুদকরণের মাধ্যমে বাজারে পণ্যদ্রব্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, অপর্যাপ্ত ও সমন্বয়হীন বাজার মনিটরিং, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি এবং অতিরিক্ত পরিবহন-ব্যয় প্রভৃতি কারণে প্রতি বছর পবিত্র রমজান মাসের আগে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি জনসাধারণের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি করে।

তিনি বলেন, মহামারির ফলে গত বছরের শেষ ৯ মাসে আয় কমে যাওয়া ও কর্মচ্যুতির ফলে অধিকাংশ মানুষ ঋণ করে এবং সঞ্চয় ভেঙে জীবন নির্বাহ করেছেন। এ পরিস্থিতিতে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলে দরিদ্ররা নিদারুণ কষ্টে পড়বেন এবং খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। ঢাকা চেম্বারের সভাপতি আসন্ন রমজানে সার্বিক আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল ও জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার লক্ষ্যে রমজানে আমদানিনির্ভর ভোগ্যপণ্য বন্দর থেকে কাস্টম হাউস ও বন্দর কর্তৃপক্ষের সহায়তায় দ্রুত খালাসকরণ, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি ও যানজট নিয়ন্ত্রণে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, দেশের সব বাজারে দক্ষ ও পর্যাপ্ত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে নিয়মিত ন্যায্যমূল্য তালিকা হালনাগাদ করা এবং মূল্য তালিকা কার্যকর করা, অতি দরিদ্রদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় নগদ অর্থ প্রদান প্রভৃতির প্রস্তাব করেন।

মুক্ত আলোচনায় ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দীন মোহাম্মদ, কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সহসভাপতি এস এম নাজির হোসেন, বাংলাদেশ সুপার মার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কাজী ইনাম আহমেদ, জাতীয় ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের উপপরিচালক মঞ্জুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার, র‌্যাব-৩ অধিনায়ক রাকিবুল হাসান, বিএসটিআইয়ের পরিচালক (প্রশা.) তাহের জামিল এবং ডিএমপির এডিসি মিজানুর রহমান, বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি মো. গোলাম মওলা এবং মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি এনায়েতুল্লাহ প্রমুখ অংশ নেন। ডিএনসিসি কাঁচা ও সুপার মার্কেট ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যমান নিয়ন্ত্রণে সরকারের নির্দেশ যথাযথ পালন করা হবে।

ক্যাবের সহসভাপতি নাজের হোসেন বলেন, রমজানে ভোগ্যপণ্যের বাজার অসহনীয় হয়ে পড়ে এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমন্বিত উদ্যোগের মাধ্যমে সব সংস্থাকে সঙ্গে নিয়ে বাজার তদারকি বাড়ানোর প্রয়োজন।

বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজি মো. গোলাম মওলা বলেন, ‘পাইকারি পর্যায়ে করোনা পরিস্থিতিতে ভোগ্যপণ্যের মজুদের কোনো ঘাটতি নেই, শুধু ভোজ্য তেলের দাম আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাড়ায় সেটা স্থানীয় বাজারে বেড়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close