শ্রীমঙ্গল (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধি
ভুয়া দলিলে দুই ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে লাপাত্তা
মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে জাল দলিলে দুটি ব্যাংক থেকে সাত লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে লাপাত্তা হয়েছেন এক গ্রাহক। আইনগত কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়া একই জমির ভুয়া দলিল সৃষ্টি করে দুটি ব্যাংক থেকে এসব অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক কর্মকর্তাদের যোগসাজশের অভিযোগ উঠেছে। ব্যাংক দুটি হচ্ছে আইএফআইসি ও ন্যাশনাল ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখা।
ঋণ নিয়ে পলাতক হওয়ায় ভুয়া দলিলের প্রকৃত মালিকদের জমি নিলামে তুলে এখন ব্যাংক টাকা আদায়ের চেষ্টা করছে। জমির প্রকৃত মালিকরা ব্যাংকের বিরুদ্ধে আদালতে পাল্টা একাধিক স্বত্ব মামলা করায় অর্থ উদ্ধারে নিলাম সেই জমি নিলাম করা যাচ্ছে না।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, শ্রীমঙ্গল পৌরসভার কালিঘাট রোডের ভূসিমাল ব্যবসায়ী পরিচয়ে জনৈক আছাবুর রহমান বিগত ২০০৮ সালে উপজেলার আশিদ্্েরান ইউনিয়নের রামনগর মৌজার ৬৯৩/০৫ নম্বরযুক্ত এক সাফকবলা দলিলের ১৫ শতাংশ জমির জাবেদা নকল দলিল জামানত দিয়ে আইএফআইসি ব্যাংকের শ্রীমঙ্গল শাখায় ঋণের আবেদন করেন। এই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আইএফআইসি ব্যাংক পক্ষে বিগত ২০০৮ সালের ২ সেপ্টেম্বর ১৫ শতাংশ জমির দাখিলকৃত দলিলের বিপরীতে ৩৯৯৯৮ নং পত্রে ব্যাংকটি আছাবুর রহামনের অনুকূলে ৬ লাখ টাকার ঋণ মঞ্জুর করে। এই টাকা উত্তোলন করেই আছাবুর রহমান লাপাত্তা হয়ে যান। জানা গেছে, ঋণ নিতে গ্রাহক আছাবুর যেসব কাগজপত্র ব্যাংকে জামানত দিয়েছেন তার সবই জাল।
টাকা উদ্ধারে মৌলভীবাজার অর্থঋণ আদালতে ২০১০ সালে অর্থঋণ জারি মোকদ্দমা দায়ের করেন। এতে আছাবুর রহমান ও তার স্ত্রী ফাতেমা বেগমকে বিবাদী করা হয়। জমির প্রকৃত মালিকরা তাদের জমি নিয়ে এই ছয়-নয়ের খবর তখনো জানতে পারেনি। ফলে প্রকৃত মালিকদের অজান্তেই আদালত ব্যাংকের অনুকূলে ডিক্রি জারীও করেন এবং ব্যাংকের পাওনা সুদ-আসলে ৮ লাখ ৬ হাজার ৫১০ টাকা ও খরচ আদায়ে স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় নিলামের খবর ছাপা হলে জমির আসল মালিকরা বিড়ম্বনায় পড়েন। কিন্তু জমির দলিলাদি, মৌজা ও প্রকৃত জমির মালিকানা সংক্রান্ত জটিলতার ও তাদের বাধার মুখে নিলাম কার্যক্রম ভেস্তে যায়। এ ব্যাপারে আইএফআইসি ব্যাংক শ্রীমঙ্গল শাখায় যোগাযোগ করা হলে ব্যবস্থাপক তারিকুজ্জামন বলেন, বিষয়টি তার সময়ের নয়। তা ছাড়া বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন রয়েছে, ব্যাংকের লিগ্যাল অফিসারের কাছে নথিপত্র রয়েছে। এর বেশি কিছু বলতে অপারগতা জানান তিনি।
সোনালী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক বনমালী রায় জানান, সে সময় আছাবুর তার ব্যাংকে ওয়াক্ত নামাজ পড়াতেন। সে সুবাদে আছাবুর রহমান শাখার স্টাফদের সাথে সখ্য গড়ে তোলেন। এর একপর্যায়ে তিনি ১ লাখ টাকা ঋণ গ্রহণ করে। এরপর সে লাপাত্তা হওয়ার পর জানতে পারি তার দেয়া কাগজে ত্রুটি রয়েছে।
গত বছর ৪ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সিলেট যুগ্ম জজ আদালত আছাবুর রহমানকে ৩ বছরের কারাদন্ড প্রদান করেন। বর্তমানে ব্যাংকটির ফাইলে আছাবুরকে পলাতক হিসাবে দেখানো হয়েছে।
"