শৈলকুপা (ঝিনাইদহ) প্রতিনিধি
ঝিনাইদহের শৈলকুপা
উদ্বোধনের ৫ বছরেও খোলা হয়নি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স
ঝিনাইদহের শৈলকুপা উদ্বোধনের সাড়ে পাঁচ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কমপ্লেক্স ভবনটি। উপজেলার পৌরসভার হলমার্কেট এলাকায় ভবনটির প্রধান ফটকের তালা ও গ্রিলে ধরেছে মরিচা। ভবনটি চালু নিয়ে বরাবরের মতো আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, বর্তমানে কমপ্লেক্স ভবনের প্রধান ফটক ঝুলছে তালা। গ্রিলগুলোতে ধরেছে মরিচা, প্রতিটি তলায় ধুলাবালুর আস্তরণ। কোথাও জমে আছে বৃষ্টির পানি। ভেঙে আছে জানালার গ্লাস। আসবাব, শৌচাগার, টাইলস দেখে বোঝার উপায় নেই মাত্র কয়েকবছর আগেই উদ্বোধন করা হয়েছে ভবনটি।
শৈলকুপা উপজেলার পৌরসভার হলমার্কেট এলাকায় তিন তলা বিশিষ্ট ওই ভবনটি চালু করতে নেওয়া হয়নি কোনো উদ্দ্যোগ। বীর মুক্তিযোদ্ধারা আক্ষেপ করে বলছেন, ‘তারা জীবিত অবস্থায় ভবনটি ব্যবহার করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে সন্দিহান।’ অন্যদিকে ভবনটি চালু নিয়ে বরাবরের মতোই আশ্বাস দিয়েছেন স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
জানা গেছে, উপজেলায় তালিকাভুক্ত ৮ শতাধিক বীর মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তুলে ধরে সকলকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা শহরের সিনেমা হল রোডে ওই ভবনটি নির্মাণ করে সরকার। ২০১৯ সালের জুলাই মাসে ভবনটি উদ্বোধন করেন তৎকালীন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য নির্মিত তিন তলা ভবনে রয়েছে সভাকক্ষ, পাঠকক্ষ, উপজেলা কমান্ডারের অফিস কক্ষ এবং বরাদ্দের জন্য রাখা হয়েছে বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ভবনের দোকান ভাড়ার আয় থেকে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের দৈনন্দিন ব্যয় মেটানো, রক্ষণাবেক্ষণ, একই সঙ্গে ভবিষ্যতের জন্যও সঞ্চয় করার কথা থাকলেও ৫ বছর পার হলেও ভবনটিতে একদিনের জন্যও মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয়নি। মুক্তিযোদ্ধারা বলছেন, নেতৃত্বের দ্বন্দে¦ই বন্ধ রয়েছে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স। অন্যদিকে নির্বাচিত কমিটিও নেই। কমিটি থাকলে এমনটা হতো না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বীর মুক্তিযোদ্ধা অভিযোগ করে বলেন, সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন মালিথা ও সাবেক ডেপুটি কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা ইসরাইল হোসেনের মধ্যে চরম দলীয় দ্বন্দ্ব থাকায় ভবনটি চালু হয়নি। এক পক্ষ আরেক পক্ষের ব্যবহারের দখল নিয়ে নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগীতা থাকায় মূলত কোনো পদক্ষেপ আসেনি। এছাড়া এই দ্ব›দ্বের কারণে দীর্ঘ ৯ বছরর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের কোনো নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়নি। তিনি বলেন, যেকোনা সভা, প্রতিদিনি আড্ডা দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের অফিস বা ভবন নেই। নিজেদের বিশাল ভবন থাকলেও ব্যবহার করতে পারছিনা। তাই ভবনটি সংস্কার করে দ্রুত চালু করার দাবি জানান তিনি।
বীর মুক্তিযোদ্ধা লুৎফর রহমান টুলু বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন নেই। তাই সংসদ পরিচালনার কোন কমিটি নেই। এজন্য ভবন রক্ষণাবেক্ষণের পিয়ন-নাইটগার্ড নেই। এছাড়া নির্বাচিত কমিটি ছাড়া কেউ কাউকে মানতে নারাজ। তাই কেউ কমপ্লেক্স ভবন যথাসময়ে খোলা-বন্ধ করাসহ মূল্যবান সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নিতে চান না। এ জন্য মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনটি বন্ধ রয়েছে। তাই মুক্তিযোদ্ধাদের পদচারণা নেই, থাকলে ভবনটির প্রাণ ফিরে পেত। ভবন থাকতো পরিষ্কার পরিচ্ছন, এমনকি নতুন প্রজন্মের মানুষগুলো সেখানে গিয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে পারতো।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা সোবহান হোসেন বলেন, ‘উদ্বোধনের পরদিন থেকে ভবনটিতে এক সেকেন্ডের জন্যও পরিচালিত হয়নি মুক্তিযোদ্ধাদের কার্যত্রম। জীবিত অবস্থায় মুক্তিযোদ্ধারা এই অট্টালিকা ভবন যদি ভোগদখল এমনকি ব্যবহার করে আত্নতৃপ্তি নাই পায়, তাহলে মৃত্যুর পর অট্টালিকা ভবন দিয়ে মুক্তিযোদ্ধার লাভ কি?’
সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মনোয়ার হোসেন মালিথা বলেন, ‘অনেক বছর ধরে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচিত কমিটি নেই। বর্তমানে ইউএনও ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার। কমিটি না থাকার কারণেই উদ্বোধনের পর থেকেই ভবনটি পড়ে আছে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ভারপ্রাপ্ত কমান্ডার স্নিগ্ধা দাস বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনের বিষয়ে সরকারীভাবে কোনো নির্দেশনা নেই। কমপ্লেক্স ভবনটিতে বসার বিষয়ে মুক্তিযোদ্ধারা আমার কাছে এসেছিলেন। শিগগির তাদের সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।’
"