এন কে বি নয়ন, ফরিদপুর

  ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪

‘আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে’ মন্তব্যের অভিযোগে ইউএনও’কে প্রত্যাহারের নির্দেশ

ছবি : প্রতিদিনের সংবাদ

ফরিদপুরের সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুনকে তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ইউএনও'র বিরুদ্ধে 'আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে’ এমন মন্তব্য করার অভিযোগ উঠেছে।

বুধবার (১১ ডিসেম্বর) দুপুরে ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের মতবিনিময় সভায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছাত্র প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল ইউএনও'র বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।

এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও আল মামুনকে বুধবারের মধ্যে প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসককে (ডিসি) নির্দেশ দেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. মো. মোখলেস উর রহমান। এছাড়াও বৃহস্পতিবারের মধ্যে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানা গেছে।

জানাগেছে, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি এবং জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সদস্যগণের সাথে মতবিনিময় সভা করেন জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী। এ সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজল সদরপুর ইউএনও'র বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, সম্প্রতি জেলার সদরপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণসভায় দিল্লি না ঢাকার প্রশ্নে আমি বক্তব্যে দেই। বক্তব্যে দিল্লির কোনো প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশ চলবে না বলে মন্তব্য করি। এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইউএনও আল মামুন। অনুষ্ঠান শেষে তিনি (ইউএনও) আমাকে ডেকে নিয়ে তার হাবভাবে এবং আমাদের কৌশলে বোঝানোর চেষ্টা করেন, আওয়ামী লীগ উইল বি কাম ব্যাক, টুডে অর টুমোরো (আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, আজ অথবা আগামীকাল)। মতবিনিময় সভায় ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি আনিসুর রহমান সজলের এমন অভিযোগের ভিত্তিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান তাৎক্ষণিকভাবে ইউএনও আল মামুনকে প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. কামরুল কামরুল হাসান মোল্যাকে নির্দেশ দেন।

জানতে চাইলে অভিযুক্ত সদরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আল মামুন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ সঠিক নয়। আমি এমন কোনো কথা বলিনি। ওনাদের সাথে কথা বলার সময় ঘটনাস্থলে বিএনপি, জামায়াতের একাধিক নেতা উপস্থিত ছিলেন।

এ ব্যাপারে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেসুর রহমান বলেন, আজকের (বুধবার) মধ্যে এই ইউএনও উইথড্র (প্রত্যাহার) হবে এবং বৃহস্পতিবার তাকে সাসপেনশন করা হবে।

এ বিষয়ে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের কমিশন প্রধান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরী বলেন, ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধির অভিযোগের ভিত্তিতে সচিব সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। তার সিদ্ধান্তের সঙ্গে আমি একমত পোষণ করি।

এদিকে, সদরপুর উপজেলার রাজনৈতিক ব্যক্তিসহ বিভিন্ন স্তরের মানুষ ইউএনওর পক্ষে কথা বলেন এবং এমন সিদ্ধান্তের বিষয়ে তারা প্রতিবাদ জানান।

বুধবার রাতে সদরপুর উপজেলা বিএনপির অস্থায়ী কার্যালয়ে তাৎক্ষণিক এ বিষয়ে প্রতিবাদ জানান সদরপুর উপজেলা বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সদরপুর উপজেলা শাখার নেতৃবৃন্দ। তারা বলেন, ইউএনওকে নিয়ে প্রকাশিত বক্তব্য ও অভিযোগের বিষয়ে জানাচ্ছি যে, সদরপুরে শহিদদের স্মরণ সভায় ও সভাশেষে ইউএনও আল মামুনকে এ ধরনের কোনো বক্তব্য দিতে শুনিনি। বিষয়টিকে আমাদের কাছে উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত হিসাবে মনে হয়। আমরা সদরপুরের ইউএনও আল মামুনকে প্রত্যাহারের নির্দেশ দেওয়ার বিষয়ে তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। তার বিরুদ্ধে অসত্য অভিযোগ ও মৌখিক প্রত্যাহারের আদেশ ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য অনুরোধ করাসহ সত্যতা যাচাইপূর্বক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।

এসময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, সদরপুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক কাজী বদরুজ্জামান, সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী, সদস্য সচিব তরিকুল ইসলাম কবির, যুগ্ম-আহ্বায়ক বাহালুল মাতুব্বর, বাবুল হোসেন, বাংলাদেশ জামায়েত ইসলামি সদরপুর শাখার আমির মো. দেলোয়ার হোসেন, বিএনপি যুবদলের প্রস্তাবিত আহ্বায়ক মো. বিল্লাল হোসেন, ছাত্রদল নেতা তুষার মাহমুদ, সদরপুর উপজেলা সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের সভাপতি রুমন মাতুব্বর, সদরপুর উপজেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রতিনিধি হাসিব সিয়াম প্রমুখ।

পিডিএস/এমএইউ

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
ফরিদপুর,সমন্বয়ক,ইউএনও,জামায়াত,বিএনপি
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close