শেরপুর প্রতিনিধি
বন্যায় কৃষকের ক্ষতি ১২২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা
শেরপুরের ঝিনাইগাতীতে প্রান্তিক কৃষকের ১২২ কোটি ৪৪ লাখ ক্ষতি হয়েছে বলে জানায় উপজেলা কৃষি বিভাগ। গত ৩ অক্টোবর রাতে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যার পানিতে বন্যার পানিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিমজ্জিত ছিল ধানের জমি। ফলে বেশির ভাগ আমন ফসলে পচন ধরেছে। এমনই অভিযোগ স্থানীয় কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, এ বছর আমন মৌসুমে ১৪ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ করা হয়েছিল। এবারের বন্যায় নিমজ্জিত হয়েছিল ৯ হাজার ৩৪০ হেক্টর জমির ধান। এরমধ্যে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৬৮১ হেক্টর ও আংশিক ক্ষতি হয়েছে ৫ হাজার ৮২১ হেক্টর জমির ধান। এ ছাড়া ১২৪ হেক্টর জমির সবজি ক্ষতি হয়েছে। এতে সব মিলিয়ে ধান চাষের ক্ষতি হয়েছে সম্ভাব্য মূল্য অণুযায়ী ১১৩ কোটি ৭৬ লাখ ৫১ হাজার ৬১৫ এবং সবজি চাষে ক্ষতি হয়েছে ৮ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
উপজেলার হাতিবান্ধা ইউনিয়নের ঘাগড়া লস্কর গ্রামের কৃষক মুনসুর আলী জানান, এবার আমন মৌসুমে দুই একর জমিতে ধান চাষ করেছিলেন তিনি। গত ৩ অক্টোবর রাতে ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের সৃষ্ট বন্যার পানিতে এক সপ্তাহের বেশি সময় ধরে নিমজ্জিত ছিল চাষ করা ধানের জমি। ফলে ধানের চারা পচে গন্ধ বের হচ্ছে। শুধু মুনসুর আলীর চাষ করা ধান পচে যায়নি; তার মতো শত শত কৃষকের ধানের জমি টানা কয়েক দিন পানিতে তলিয়ে থাকায় বেশির ভাগ আমন ফসলে পচন ধরেছে। আর এদিকে পানি কমতে থাকায় ফসলের মাঠ থেকে বের হচ্ছে ধানের চারা ও কাঁচা ধান পচা গন্ধ।
কৃষক মুনসুর আলী বলেন,‘আমার চাষ করা দুই এক জমির ধান পচে-গলে সব শেষ। দুই একর জমিতে ধান চাষ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৬০ হাজার টাকা। ট্রাক্টর (স্যালো চালিত ইঞ্জিন) দিয়ে জমি প্রস্তুত থেকে শুরু করে বীজ, কীটনাশক, ইউরিয়া সার মহাজনদেও কাছে বকেয়া নিয়ে ধান চাষ করেছি। সর্বনাশা বন্যায় ধান তলিয়ে ছিল সপ্তাহের বেশি সময়। একটি ধানের চারাও নেই, সব ফসল পইচ্চা পচা গন্ধ বের হচ্ছে। দুর্গন্ধে জমিতেই যাওয়া যায় না।’
রামেরকুড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রহিম বলেন, ‘আমার জীবনেও এতো পানি দেখেনি। এবারের বন্যায় আমার ঘর-বাড়ির ক্ষতির পাশাপাশি দেড় একর জমির ধান বালুর নিচে পড়ে শেষ হয়েছে। এখনও ঘর-বাড়ির মেরামতের কাজ শুরু করতে পারেনি। খুবই অসহায় অবস্থায় আছি।’
তেঁতুল গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন,‘ এবার আমি ১৫ কাটা (৭৫ শতাংশ) জমিতে ধানের আবাদ করছিলাম। আমার কান্দা জমির অর্ধেক ধানের চারা ঠিক আছে, আর সব শেষ। এখন শুধু জমি থেকে ধানের চারা পচা গন্ধ বের হচ্ছে।’
হাতিবান্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার ইউনিয়নের সিংহভাগ ফসল নষ্ট হয়েছে। ফসল নষ্ট হওয়ায় কৃষকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। সরকারি সহযোগিতা ছাড়া কৃষকেরা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হুমায়ুন দিলদার বলেন, ভারি বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ী ঢলে কৃষিখাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা সংশ্লিষ্ট কৃর্তপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে প্রাপ্ত প্রণোদনা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
"