সাজিদুল ইসলাম শোভন, কালিয়া (নড়াইল)

  ২২ মার্চ, ২০২৪

কালিয়ার চাপাইল মুলশ্রী বাগুডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়

অ্যাডহক কমিটিতে ‘অনিয়ম’ শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা রাস্তায়

নড়াইলের কালিয়া : কমিটি বাতিলের সঙ্গে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি * প্রধান শিক্ষকের দাবি, ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেই অ্যাডহক কমিটি * ইউএনও বলছেন, কমিটি গঠন ও সভাপতি করা বিষয়ে অবগত নন

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি নির্বাচন বন্ধ করে ‘পকেট’ অ্যাডহক কমিটি গঠনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় প্রধান শিক্ষক মোসা. মাহফুজা খাতুনকে অপসারণসহ অ্যাডহক কমিটি বাতিলের দাবিতে ক্লাস বর্জন করে মানববন্ধন করেছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার উপজেলার চাপাইল মুলশ্রী বাগুডাঙ্গা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক আটকে চাপাইল-তেরখাদা সড়কে এ মানববন্ধন হয়। বেলা ১১টায় শুরু হয়ে ঘণ্টাব্যাপী চলা এ প্রতিবাদ কার্যক্রমে বিদ্যালয় এলাকার বাগুডাঙ্গা, মুলশ্রী, চাপাইল ও চরমধুপুর গ্রামের বাসিন্দারাও অংশ নেয়।

অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক তার পছন্দের ব্যক্তিকে সভাপতি বানানোর জন্য গোপনে অ্যাডহক কমিটি গঠন করেছে। এতে বিদ্যালয়ের কাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পাশাপাশি শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার অর্ধশত বছরের পুরোনো এ বিদ্যালয়ে চলতি বছরের গত ১৬ জানুয়ারি নতুন পরিচালনা কমিটির নির্বাচনের কথা ছিল। এজন্য অভিভাবকদের চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ ও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়। তফসিল অনুযায়ী, অভিভাবক ও দাতা সদস্য পদে নির্বাচনে আগ্রহী প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিয়ে মনোনয়নপত্র বাছাই বন্ধ করেন প্রধান শিক্ষক। বাছাইয়ের তারিখ পরবর্তী সময়ে জানাবেন বলে মনোনয়ন জমাদানকারি সদস্য পদপ্রার্থীদের জানিয়ে দেন তিনি।

এদিকে গত বুধবার প্রধান শিক্ষক কমিটির সদস্য প্রার্থীসহ স্থানীয়দের জানান, বিদ্যালয়ের পরিচালনার জন্য বাগুডাঙ্গা গ্রামের মো. বায়েজিদ মোল্লাকে সভাপতি করে একটি অ্যাডহক কমিটি করা হয়েছে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ স্থানীয় মানুষের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।

মানববন্ধনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামান হিটু, অভিভাবকদের মো. জামিল হোসেন শেখ, নুর আলম কাজী, মো. সেলিম শিকদার, মহিবুল শেখসহ অন্যরা। শিক্ষার্থীদের মধ্যে বক্তব্য দেয় দশম শ্রেণির তামিম কাজী, মালিকা মমতাজ, নবম শ্রেনীর আনিকা ফেরদৌসী ও অষ্টম শ্রেণির সায়মা ইসলাম, মৌমিতা ইসলাম, সাথীয়া আক্তার, আরমিনা খানম, রাশিদুল ইসলাম দিপু প্রমুখ।

নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সদস্য মো. কামরুজ্জামান হিটু বলেন, কমিটিতে তাকে সদস্য করার বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না। একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচন বন্ধ করে প্রধান শিক্ষক ষড়যন্ত্র করেছেন। তিনি পদ থেকে ইস্তফা দিয়ে অ্যাডহক কমিটি বাতিলসহ প্রধান শিক্ষকের অপসারণ দাবি করেন।

নিয়মানুযায়ী, বিদ্যালয়ে অ্যাডহক কমিটি গঠনের জন্য পদাধিকার বলে প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে একজন শিক্ষক প্রতিনিধি ও একজন অভিভাবক সদস্য প্রতিনিধি নির্বাচন করে দেবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। পরে প্রধান শিক্ষক এলাকার নেতৃস্থানীয় ব্যক্তি ও বিগত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে আলাপ করে তিন সদস্যের নাম প্রস্তাব করবেন। এর মধ্যে একজনকে কমিটির সভাপতি নির্বাচন করবে শিক্ষা বোর্ড।

জানতে চাইলে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মো. বায়েজিদ মোল্লা বলেন, ‘আমার কোনো দোষ নেই। আমাকে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’ তিনি রাজনৈতিক ষড়য়ন্ত্রেও শিকার বলে দাবি করেছেন।

অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষক মোসা. মাহফুজা খাতুন বলেন, বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটি ইউএনওর সঙ্গে কথা বলেই করা হয়েছে। এতে কোনো অনিয়ম দেখছেন না তিনি।

জানতে চাইলে ইউএনও রুনু সাহা বলেন, ‘ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এক দিন ফোন করে আমাকে অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে নাম প্রস্তাবের অনুমতি চান। কিন্তু এরপর আমি অবগত নই।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close