রৌমারী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি

  ১২ জানুয়ারি, ২০২৪

রৌমারীর ব্রহ্মপুত্র চর

কোনো বাধাই মানছে না অবৈধ বালু ব্যবসায়ীরা

কুড়িগ্রামের রৌমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের চরে বালু তুলে বিক্রয় করছে প্রভাবশালীরা। বছরে কয়েক কোটি টাকার বালু উত্তোলনের পর নিষিদ্ধঘোষিত ছয় চাকার ট্রাক্টর (কাকড়া) গাড়িতে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পৌঁছে দিচ্ছেন তারা।

এদিকে অবৈধ বালু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালিয়ে অর্থদণ্ড দিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ও সহকারি কমিশনার (ভূমি)। তারপরও চরের জমিতে অবৈধভাবে বালু ব্যবসা বন্ধ হয়নি বলে অভিযোগ নদীপাড়ের বাসিন্দাদের।

জানা গেছে, উপজেলার ফলুয়ারচর ঘাট, চর বাঘমারা, জামাইপাড়া, বলদমারাঘাট, খেদাইমারী, হরিনধরা, তেলিরমোড়, যাদুরচর, চর কাজাইকাটা, শান্তিরচর, তেকানী ঝগড়ারচর, পাখিউড়া, ওহেদনগর, মিয়ারচর মুখতোলা, গাছবাড়ী, বাগেরহাট, গয়টাপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকায় ও সোনাভরী, হলহলিয়া, জিনজিরাম ও ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলন করা হয়। বছরে উত্তোলন করা বালুর বাজার মূল্য প্রায় পাঁচ কোটি টাকা। পরে এই বালু উপজেলার ছয় চাকার ট্রাক্টরে (কাকড়া) করে নিয়ে বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন প্রভাবশালীরা।

প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ফলুয়ারচর গ্রামে গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর অবৈধভাবে বালু উত্তোলনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড করা হয়। বিভিন্ন কেন্দ্রে এ সব ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন রৌমারীর ইউএনও ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাহিদ হাসান খান। কিন্তু কোনোভাবেই ব্রহ্মপুত্র নদের চর ও ফসলীজমি কেটে বালু বিক্রি থামছে না।

সরেজমিনে উপজেলার ফলুয়ারচর ফেরীঘাট এলাকায় দেখা গেছে, নিষিদ্ধ ট্রাক্টর ভরার জন্য বালু কাটছে এক্সকাভেটর (ভেকু) ও শ্রমিকরা। প্রতিটি গাড়িতে ১০০ বর্গফুট বালু নিয়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে। গাড়ি প্রতি কমপক্ষে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা খাজনা নেয় স্থানীয় ওইসব প্রভাবশালীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বালু ব্যবসায়ী বলেন, উপজেলায় অবৈধ বালু উত্তোলনের যে কয়েকটি স্পট আছে, তাতে এক মৌসুমে কমপক্ষে ৫ কোটি টাকার বালু কেটে ও উত্তোলনকরে বিক্রি করা যায়।

নদীভাঙনে শিকার একাধিক ব্যক্তি জানান, ফসলীজমি ও ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে ফসলি জমি, নদী পাড়ের বসতঘর ও বিভিন্ন স্থাপনা নদী ভেঙে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। ভাঙন রোধ করতে ব্যবহৃত কোটি কোটি টাকার ব্লক ও জিও ব্যাগ ধসে যাচ্ছে। এছাড়া প্রতিদিন এতোবার ভারি ইঞ্জিনচালিত যান চলাচলের কারণে রাস্তার ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

বন্দবেড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়াডের ইউপি সদস্য বিপ্লব হোসেন (ফরিদ) বলেন, ফলুয়ারচর বালু উত্তোলনকারী এবং বালু ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের কোনো বাঁধাই মানছে না। তারা আবাদি জমি গভীর গর্ত করে যাতে পার্শের জমি ভেঙ্গে যায়। এভাবে চলতে থকলে আগামী বন্যায় ফুলুয়ারচর, পালেরচর, কুটিরচর গ্রামগুলো নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।

উপজেলা স্বাস্থ ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, ট্রাক্টর দিয়ে অবাধে রাস্তা ঘাটে উম্মুক্তভাবে বালি মাটি পরিবহন করায় রৌমারীতে শ্বাসকষ্ট রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। শিশুরা শ্বাসকষ্ট রোগে বেশি ভুগছে।

রৌমারী ইউএনও ও সহকারি কমিশনার (ভূমি) নাহিদ হাসান খান বলেন, অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধে এ বছর বেশ কয়েকটি অভিযান করা হয়েছে। আগামীতেও এ অভিযান অব্যাহত থাকবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close