মহাদেবপুর (নওগাঁ) প্রতিনিধি

  ১৪ অক্টোবর, ২০২১

অনুমোদনহীন ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা

নওগাঁর মহাদেবপুরে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠছে বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এসব প্রতিষ্ঠানে নেই প্রয়োজনীয়সংখ্যক চিকিৎসক, টেকনোলজিস্ট, নার্স ও চিকিৎসা সরঞ্জাম। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ধার করা পাটটাইম চিকিৎসক দিয়ে চলছে অপারেশনসহ নানা রোগের চিকিৎসা। অনেক সময় ভুল অস্ত্রোপচার ও অপচিকিৎসার শিকার হচ্ছেন রোগীরা।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, ক্লিনিকগুলো কসাইখানায় পরিণত হয়েছে। প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগ নীরব থাকায় ক্লিনিক মালিকরা দিন দিন আরো বেপরোয়া হয়ে উঠছে। আর ক্লিনিক-মালিকরা বলছেন, সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করেই তারা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এলাকায় গড়ে উঠেছে ৯টি বেসরকারি ক্লিনিক ও ১৪টি ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এরই মধ্যে সাতটি ক্লিনিক ও ৯টি ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স রয়েছে বলে নওগাঁর সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। দুটি ক্লিনিক ও পাঁচটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার সরকারি অনুমোদন ছাড়াই চলছে বছরের পর বছর। কম্পিউটারাইজড, পূর্ণাঙ্গ ডিজিটাল ও অত্যাধুনিক নামে সাইনবোর্ড সর্বস্ব এসব ক্লিনিকে মানুষ রোগ নিরাময়ের জন্য গিয়ে অপচিকিৎসার জালে আটকা পড়ছেন। ভূল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু হলেও টাকার বিনিময়ে দফারফা করে নিজেদের নিরাপদে রাখার অভিযোগও রয়েছে কয়েকটি ক্লিনিকের বিরুদ্ধে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী যেসব শর্ত মেনে লাইসেন্স পাওয়ার কথা বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানেরই তা নেই। অদক্ষ নার্স এবং টেকনিশিয়ান দিয়ে চলছে পরীক্ষা নিরীক্ষা।

উপজেলার খোর্দ্দকালনা গ্রামের জহির উদ্দিন সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি উল্লেখ করেন, গত পহেলা মার্চ শহরের থ্রী-ষ্টার ক্লিনিক ও তমিজ উদ্দিন ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তার স্ত্রীর পেটে টিউমার অপারেশনের জন্য ভর্তি করান। অপারেশন শেষে ৫ মার্চ ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেন। পরদিন আবারও অসুস্থ হয়ে পড়লে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে জানান পেট কাটা হলেও টিউমার বা অন্য কোনো অপারেশন করা হয়নি। অভিযোগ প্রাপ্তির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন ইউএনও।

সরেজমিনে অলিম্পিক ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, সরকারি অনুমোদন ছাড়াই দুবছর থেকে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। ওই ক্লিনিকের পরিচালক বিপ্লব হোসেন জানান, লাইসেন্স এর জন্য আবেদন করেছেন। স্বাস্থ্য বিভাগ এখনও পরিদর্শন করেননি।

অবৈধ ক্লিনিক পরিচালনার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসলামীয়া জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক বেলাল ইসলাম জানান, তিনি আবেদন করেছেন কিন্তু এখনো লাইসেন্স পাননি। বর্তমানে তার ক্লিনিকে পাঁচজন রোগী ভর্তি আছেন। নিউ খালেদা ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার গিয়ে কোনো চিকিৎসককে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ক্লিনিকের মালিক ফয়জুল ইসলাম নিজের পক্ষে সাফাই গাইলেও অনিয়মের কথা স্বীকার করে জানান, নিময় অনুযায়ী উপজেলার কোনো ক্লিনিকেই চিকিৎসক, ডিপ্লোমা নার্স, টেকনোলজিস্টসহ প্রয়োজনীয় জনবল নেই।

জানতে চাইলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থ্যা গ্রহণের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর তালিকা প্রেরণ করা হয়েছে।

নওগাঁর সিভিল সার্জন ডা. এবিএম আবু হানিফ বলেন, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার পরিচালনা করতে হলে আইন মেনেই করতে হবে। এ ব্যাপারে মহাদেবপুর ইউএনও মিজানুর রহমান মিলন বলেন, শিগগিরই মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close