রায়হান সিকদার, লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম)

  ২৯ এপ্রিল, ২০১৯

চট্টগ্রাম-লোহাগাড়া

আটকে আছে নৈশপ্রহরী নিয়োগ এক মাসে ৫ বিদ্যালয়ে চুরি

চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় হঠাৎ করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের চুরির ঘটনা ঘটছে। গত এক মাসে উপজেলার একাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটেছে। নৈশ্যপ্রহরী না থাকার সুযোগে বিদ্যালয়ে চুরি বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিমত। তবে নানা জটিলতায় আটকে নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগ।

উপজেলায় সর্বমোট ১০৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। তার মধ্যে নৈশ্যপ্রহরী আছে মাত্র ২১টিতে। চুরি ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকরা ও উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার লোহাগাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। শিক্ষক ও থানা সূত্রে জানা যয়, ১৪ মার্চ রাতে লোহাগাড়া মজিদের পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে চুরি হয়। চোর বাউন্ডারি ওয়ালের গেইট ও অফিস কক্ষে তালা ভেঙ্গে স্টীলের একটি আলমিরা নিয়ে যায়। এ সময় আলমিরাতে রক্ষিত গুরত্বপূর্ণ কাগজপত্র মেজেতে এলোমেলো ভাবে পড়ে থাকতে দেখা যায়। ঘটনার পরের দিন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। একইদিন লোহাগাড়া আইডিয়াল স্কুলে চুরির ঘটনায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হামিদুল হোসাইন লোহাগাড়া লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন লোহাগাড়া থানার ডিউটি অফিসার।

একইভাবে ১১ মার্চ রাতে উপজেলা সদর ফয়েজ শফি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অফিস কক্ষে চুরির ঘটনা ঘটেছে। চোরেরা জানালা ভেঙ্গে ভেতরে ঢুকে আলমিরার ফাইলপত্র তছনছ করে। এ সময় সৌর বিদ্যুতের বড় ১টি ব্যাটারি, ১টি বৈদ্যুতিক পাকাসহ বেশ কিছু জিনিপত্র নিয়ে যায়। পরের দিন থানায় লিখিত অভিযোগ করেন প্রধান শিক্ষক দেব প্রসাদ বড়–য়া। এর আগে ৮ এপ্রিল রাতে একই বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা ঘটেছে। তখন সিলিং ফ্যানসহ বেশ কিছু ব্যবহার্য জিনিসপত্র ও গুরত্বপূর্ণ ফাইলপত্র চুরি যায়। এ ব্যাপারে পরদিন থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন প্রধান শিক্ষক। এর আগে ৬ এপ্রিল তৈয়ব আশরাফ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চুরির ঘটনা ঘটেছে। সেখানে ৩টি ফ্যান, ১টি ব্যাটারি, ১টি প্যানেল ও গুরুত্বপূর্ণ ফাইলপত্র খোয়া যায়। এ ব্যাপারে গত ৯ এপ্রিল বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবোধ কান্তি সিকদার লোহাগাড়া থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। এছাড়াও গত ৩ এপ্রিল উপজেলা সদর ফয়েজ শফি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় হল রুমে উপজেলা শিক্ষা অফিসের মালামাল চুরি হয়। ২০১৭ ও ২০১৮ সালের ৫ম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষার উত্তরপত্র, ২টি টাইপ মেশিন, ২০১৬-২০১৭ সালের ৪০-৫০ বান্ডি বই (প্রতি বান্ডিলে ৫০-১০০টি বই), ৪টি সিলিং ফ্যান ও বেশ কিছু পুরনো জিনিসপত্র নিয়ে যায়। এদিকে এই চুরির ঘটনায় আতংক বিরাজ করে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের মধ্যে। গত ১০ এপ্রিল লোহাগাড়া উপজেলায় মাসিক সভায় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চুরির ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে লোহাগাড়া থানার অফিসার ইনচার্জকে নির্দেশ দেন চট্টগ্রাম-১৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজাম উদ্দিন নদভী। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৪ সালে একবার দপ্তরি কাম নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে ছিল। তৎকালীন শিক্ষা অফিসার মেরাজ উদ্দিন একটি স্কুলের শিক্ষিকার কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণের সময় হাতেনাতে তাকে গ্রেফতার করে দুদক। এতে তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। ফলে দপ্তরি কাম নৈশপ্রহরী নিয়োগ বন্ধ হয়ে যায়। ২০১৭ সালের দিকে পুণরায় এ প্রক্রিয়া চালু হলেও এখনো লোহাগাড়া উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ওমর ফারুক জানান, চুরির বিষয়ে আমরা জানার পর উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে অবহিত করেছি। নিয়োগ সম্পর্কে তিনি বলেন, চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে। তার কাছ থেকে অনুমতি পেলেই নিয়োগ সম্পন্ন হবে। লোহাগাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উমরাহ্ করার জন্য ছুটিতে আছেন। চুরি বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ পরিদর্শক তদন্ত মো. জহির উদ্দিন বলেন, এসব চুরির ঘটনায় তদন্ত চলছে। জড়িতদের দ্রুত গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলেও তিনি জানান।

তিন আগে লোহাগারায় যোগদানের কথা উল্লেখ করে ইউএনও তৌসিফ আহমেদ প্রতিদিনের সংবাদকে বলেন, স্থানীয় গ্রাম পুলিশ, মেম্বার-চেয়ারম্যান ও বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সঙ্গে বসে চুরি রোধে কি করা যায় তা ঠিক করা হবে। আর নৈশ্যপ্রহরী নিয়োগ প্রক্রিয়াকেও সচল করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close