বদলগাছী (নওগাঁ) প্রতিনিধি

  ২২ মার্চ, ২০১৯

বদলগাছীতে স্কুল মাঠ দখল করে হাট, দুর্ভোগে শিক্ষার্থীরা

নওগাঁর বদলগাছী সদরে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয় নামে দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠ ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের রাস্তা দখল করে চলছে হাটবাজার। এতে শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক ও কোমলমতি শিক্ষার্থীরা চরম বিপাকে পড়েছে।

গত বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিদ্যালয় দুটির মাঠ ও রাস্তা দখল করে কাঁচা তরিতরকারির পাইকারী হাট বসিয়ে কেনা বেচা চলছে। দুর দুরান্ত থেকে আগত পাইকারেরা বড় বড় ট্রাক ও ভটভটি এনে স্কুল মাঠ দখল করে রেখে কাঁচামাল লোড-আনলোড করছে। সেই সাথে উপজেলার কৃষকেরা ট্রাক, ভটভটি ও ভ্যান যোগে কাঁচা তরিতরকারী ও বিভিন্ন মালামাল এনে ওই বাজারে বিক্রি করছে। বদলগাছীর নতুন ব্রিজ মোড় থেকে শুরু করে স্কুল মাঠ ও থানার গেট পর্যন্ত দখল করে সপ্তাহে শনিবার ও বুধবার হাট-বাজার বসে। হাট বারের দিন দুই স্কুলের প্রায় সাড়ে ৯ শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলে আসতে চরম ভোগান্তির শিকার হয়। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীরা ভ্যান গাড়ি, ভটভটি, সাইকেল ও ট্রাকসহ লোকজনের ভিড়ের মধ্য দিয়ে এপাশ ওপাশ কাটিয়ে কোন রকমে স্কুলে যাতায়াত করে। যে কোন মূহুর্তে ঘটতে পারে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।

সরকারি মডেল পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হাট-বাজারের ভিড়ের মধ্যে দিয়ে ঠেলা ঠেলি করে স্কুলে যাতায়াত করলেও মেয়ে শিক্ষার্থীরা পড়েন চরম বিপাকে। এ কারনে অনেক অভিভাবকেরা হাট-বাজারের দিন তাদের ছেলে মেয়েদের স্কুলে যেতে দিতে চায় না। কারন স্কুলে যাতয়াতের পরিবেশের অভাবে সপ্তাহে দুই দিন যদি শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে না পারে তাহলে বৎসরে প্রায় ১ শত দিন তারা ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন দিবস ও এসএসসি পরীক্ষা চলাকালিনসহ প্রায় ৬ মাস পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ক্লাস থেকে বঞ্চিত থাকে। বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা চরম উদ্বিগ্ন হলেও স্কুল কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই। এমন কি থানা পুলিশের গেট পর্যন্ত দখল করে হাট-বাজার চললেও পুলিশ প্রশাসনেরও কোন মাথা ব্যাথা নেই।

এ বিষয়ে মডেল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন জানান, স্কুলের কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষক শিক্ষিকাদের হাট-বাজারের দিন চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। তিনি আরো বলেন আমার স্কুলের গেটের সামনে হাঁস-মুরগীর হাট বসায় বাচ্চাদেরকে নিয়ে দূর্গন্ধের মধ্যেই ক্লাশ চালিয়ে যেতে হয়। বিষয়টি নিয়ে বহুবার হাট-বাজার কর্তৃপক্ষকে অভহিত করেও কোন লাভ হচ্ছে না। কারন স্কুল কর্তৃপক্ষের চেয়ে হাট-বাজার কর্তৃপক্ষ শক্তিশালী বলে মন্তব্য করেন তিনি।

এ বিষয়ে পাইলট উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুরেশ সিংহ জানান, ইতি পূর্বে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, মানববন্ধন ও হাট-বাজার কর্তৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে তৎকালীন এমপি আকরাম হোসেন চৌধুরী একাধিকবার চেষ্টা করেও কোন লাভ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে লিখিত ভাবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি প্রদান করেও কোন ফল হয়নি। তিনি আশা করেন বিষয়টি এখন সরকারে স্থানীয় প্রশাসনসহ শিক্ষামন্ত্রনালয় সুদৃষ্টি দেবেন।

থানার সামনে রাস্তা থেকে শুরু করে গেইট পর্যন্ত হাট-বাজার চলা প্রসঙ্গে বদলগাছী থানার ওসি জালাল উদ্দীনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, স্কুল মাঠ ও থানার সামনে হাট-বাজার বসার বিষয়টি নিয়ে ইজারাদারদের একাধিকবার নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু তারা শুনছেন না। থানার গেট পর্যন্ত হাট চলায় হাটের দিন কোন গাড়ি বের করতে পারিনা। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার আইন-শৃংখলা বিষয়ক সভায় বলেছি কিন্তু কোন কাজ হয়নি। তবে আমি হাট কমিটিকে বলেছি থানার যেটুকু জায়গা রয়েছে তা দুই এক দিনের মধ্যে বাঁশ দিয়ে ঘিরে নেব।

ইউএনও মাসুম আলী বেগ জানান, স্কুল মাঠে হাট-বাজার বসায় শিক্ষার্থীদের চলাচলের সমস্যা সৃষ্টি হয়, বিষয়টি তিনি অবগত রয়েছেন। হাট স্থানান্তর করতে যে জায়গার প্রয়োজন সে জায়গা পাওয়া যাচ্ছে না। এবিষয়ে উর্দ্ধতনদের সঙ্গে অনেক আলোচনা হয়েছে কিন্তু কোন ফল হচ্ছে না। তবে মাননীয় সংসদ সদস্য হাট স্থানান্তরের ব্যাপারে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন সে মোতাবেক সংশ্লিষ্ট সকলের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close