গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি

  ২৩ জানুয়ারি, ২০১৯

রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলা

প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অব্যবস্থাপনা কিন্ডারগার্টেনমুখী অভিভাবক

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অব্যবস্থাপনার কারণে কিন্ডারগার্টেনমুখী হচ্ছেন রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলায় অভিভাবকরা। প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে সরকারি সব সুযোগ-সুবিধা থাকার পরও সন্তানকে কিন্ডারগার্টেনে দিচ্ছেন গ্রাম থেকে শহরের সাধারণ মানুষ। তবে উচ্চশিক্ষার আশায় সন্তানকে এসব স্কুলে ভর্তি করলেও অতিরিক্ত ব্যয়ে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।

গোয়ালন্দ উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, গোয়ালন্দ উপজেলায় ৫১টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে সহকারী শিক্ষক রয়েছে ২৮৩ জন। তবে প্রধান শিক্ষক রয়েছে ৪০টিতে, শূন্য আছে ১১টি পদ। এদিকে উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে ২৭টি। কোন কোন কিন্ডারগার্টেন স্কুলের রয়েছে একাধিক শাখা। কিন্তু বেশির ভাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে রয়েছে অব্যবস্থাপনা। কয়েকটি স্কুল রয়েছে মহাসড়কের পাশে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মহাসড়কের পাশের কিন্ডারগার্টেনে নেই দেয়াল। পদ্মা নদীসংলগ্ন উপজেলাটি হওয়ায় অনেক স্কুল রয়েছে নদী ভাঙনকবলিত এলাকায়। স্কুলগুলো একাধিকবার নদীভাঙনের শিকার হওয়ায় জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছে। স্কুলের নিজস্ব জায়গা না থাকায় ভবন উঠানো সম্ভব হচ্ছে না। অনেক স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের নিরাপদের জন্য দেয়াল দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। অনেক স্কুলে ভবন না থাকার কারণে শীত, রোদ ও বৃষ্টির মধ্যে চরম দুর্ভোগ শিকার করে পাঠদান চলছে। অনেক স্কুলের ভবন ঝুঁকিপূর্ণ থাকার কারণে পরিতেক্ত রয়েছে। শ্রেণি কক্ষের অভাবে পাঠদান দিতে হিমশিম পড়তে হচ্ছে। স্কুলের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে রয়েছে অনেক অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর অব্যবস্থাপনার কারণে ছাত্র-ছাত্রীর সংকটে পড়ছে। শিক্ষার্থীর অভাবে অনেক স্কুলে ৪০-৬০ জন শিক্ষার্থী দিয়ে পাঠদান করতে হচ্ছে। এই সুযোগে উপজেলায় আনাচে-কানাচে গড়ে উঠছে বাণিজ্যিকভিক্তিক কিন্ডারগার্টেন স্কুল। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো দুর্বলতার সুযোগে অভিভাবকদের প্রলোভন দেখিয়ে ভর্তি করছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলোতে। রয়েছে একাধিক শাখা। পাশাপাশি রয়েছে একাধিক কিন্ডার গার্টেন স্কুল। অনেক কিন্ডারগার্টেন স্কুল সরকারি কোনো নিয়মনীতি মানছেন না। লোভনীয় অফার, শতভাগ পাশের প্রতিশ্রুতি, জিপিএ-৫ পাওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি করছেন। এখানে শেষ নয়, ভর্তির পর বিভিন্ন নামে শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের নিকট থেকে নেওয়া হচ্ছে টাকা।

অভিভাবক স্মারক জাকির বলেন, আমরা আশ্বস্ত হতে চাই সন্তানদের নিয়ে। যে কারণে আমরা অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করে কিন্ডারগার্টেন স্কুলে সন্তানদের ভর্তি করছি। কারণ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার কোনো পরিবেশ নেই।

গোয়ালন্দ সরকারি কামরুল ইসলাম কলেজের সহকারী অধ্যাপক ফকীর আব্দুর বারেক বলেন, সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে আমরা সরকারি স্কুল রেখে কিন্ডার গার্টেন স্কুলে যাচ্ছি। কিন্তু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যদি নিয়মিত মনিটনিং করা হয় তাহলে পুনরায় অভিভাবকদের বিশ্বাস অর্জন করা সম্বব হবে।

গোয়ালন্দ লোটাস কিন্ডার কলেজিয়েট স্কুলের অধ্যক্ষ মো. মানুনর রশিদ বলেন, আমাদের স্কুলের নিয়মিত শিক্ষাদান, মাসিক পরিক্ষা, শরীর চর্চা, ক্রীড়া, স্কুলের পড়া স্কুলে তৈরি, সব কিছু মিলে প্রাইমারি স্কুলের চেয়ে আমাদের স্কুলের রেজাল্ট অনেক ভাল। মূলত এ কারণেই অভিভাবক সরকারি স্কুলের পরিবর্তে বেসরকারি স্কুলের দিকে ঝুঁকে পড়ছে। তবে অনেক কিন্ডার গার্টেন স্কুল যন্ত্রতন্ত্রভাবে তৈরি হয়ে চলছে। যাদের কারণে কিন্ডারগার্টেন স্কুলগুলো সুনাম নষ্ট হচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের কাছে আমাদের দাবি একটি নীতিমালার আওতায় কিন্ডার গার্টেন স্কুল গুলো থাকলে সকলের জন্য ভাল হতো।

রাজবাড়ী জেলা শিক্ষা অফিসার হোসনে ইয়াসমিন করিনি জানান, কিন্ডার গার্টেন স্কুলগুলো আমাদের আওতাধীন না। আমরা শুধু আমাদের আওয়াতাধীন প্রাইমারি স্কুলগুলো দেখভাল করি। তাদের নিয়ন্ত্রণ বা দেখাশুনার জন্য আমার জানা মতে নাই। কিন্ত তাদের একটি রেজিস্ট্রেশনের একটি নিয়ম আছে। যেসব স্কুলগুলো রেজিস্টেশনের জন্য নিয়ম মেনে আবেদন করে তাহলে দেওয়া যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close