reporterঅনলাইন ডেস্ক
  ২৮ এপ্রিল, ২০২৪

স্বাভাবিক হচ্ছে না ইসরায়েল ও পাকিস্তানের সম্পর্ক

গাজায় সংঘাত শুরুর পর পাকিস্তানের মানুষের মধ্যে চরম ইসরায়েল-বিদ্বেষ দেখা দিয়েছে

ইরানের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসি গত ২২ এপ্রিল পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে পা রাখেন। তার এ সফর অবাক করেছে অনেককে। এ তালিকায় রয়েছে এমন অনেক পক্ষ, যারা চাইত না রাইসি আসলেই এ সফরে যান। বিস্মিত হয়েছেন পাকিস্তানের অনেকেও।

পাকিস্তান ও ইরান প্রতিবেশী। দীর্ঘ সময় ধরে দুই দেশের মধ্যে শান্তিপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। তবে সম্প্রতি মুখোমুখি অবস্থানে যায় তেহরান ও ইসলামাবাদ। চলতি বছরের শুরুর দিকে একে-অন্যের সীমান্ত এলাকায় পাল্টাপাল্টি বিমান হামলা চালায় দুই দেশ। এতে এক নজিরবিহীন পরিস্থিতি দেখা দেয়।

১৭ জানুয়ারি পাকিস্তানে প্রথম বিমান হামলা চালায় তেহরান। পাকিস্তানে অবস্থান করা ইরানবিরোধী সশস্ত্র গোষ্ঠী জাইশ আল-আদলের অবস্থান লক্ষ্য করে এ হামলা চালানো হয় বলে জানিয়েছিল দেশটি। হামলায় দুই শিশু নিহত ও তিনজন আহত হয় বলে দাবি করে ইসলামাবাদ। পরে ইরানে বেলুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের লক্ষ্য করে পাল্টা বিমান হামলা চালায় পাকিস্তান। এতে নিহত হন ৯ জন।

এ ঘটনার পর অল্প সময়ের জন্য পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থবির ছিল। পরে তা আবার স্বাভাবিক হয়েছে। এর কয়েক মাস পরেই ইসলামাবাদ, লাহোর ও করাচি সফরে গেলেন ইরানের প্রেসিডেন্ট। তার সফরের আগে ইসলামাবাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের নামও দেওয়া হয়েছে ‘ইরান অ্যাভিনিউ’।

এমন পরিস্থিতিতে একটি প্রশ্ন সামনে আসছে। তাহলো, সম্প্রতি একটি গুঞ্জন বাড়ছিল যে, ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার কথা ভাবছে পাকিস্তান সরকার। এ গুঞ্জন যদি সত্যি হয়, তাহলে রাইসির পাকিস্তান সফর তার ওপর কী প্রভাব ফেলবে?

সৌদি আরবের সঙ্গে পাকিস্তানের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশই যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র। জ্বালানি তেলসমৃদ্ধ সৌদি আরব থেকে বড় বিনিয়োগ পেতে মরিয়া ইসলামাবাদ।

পাকিস্তানের ২৫ লাখ জনগণও সৌদি আরবে কাজ করেন। তাদের পাঠানো অর্থ পাকিস্তানের নড়বড়ে অর্থনীতি টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

অন্যদিকে তেহরানের সঙ্গেও সম্পর্ক বাড়াতে চায় ইসলামাবাদ। এর লক্ষ্য এ অঞ্চলে কৌশলগত ভারসাম্য ধরে রাখা। আরেকটি লক্ষ্য, দেশটির সঙ্গে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বৃদ্ধি। ইব্রাহিম রাইসির আশা পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে বাণিজ্য বেড়ে বছরে হাজার কোটি ডলার হবে। এ ছাড়া পাকিস্তানের অন্তত ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বাসিন্দা শিয়া সম্প্রদায়ের। তাদের বড় একটি অংশ প্রতি বছর ধর্মীয় আচার পালনে ইরানে যায়।

পাকিস্তান ও ইরানের মধ্যে আরেকটি মিল রয়েছে। তাহলো, বর্তমান পরিস্থিতিতে দুই দেশই ইসরায়েলের সমালোচক। রাইসির পাকিস্তান সফর শেষে এক যৌথ বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতি ব্যবস্থা নিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে। লক্ষ্য, ইসরায়েলের দুঃসাহসিকতা ও প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে দেশটির অবৈধ তৎপরতা বন্ধ করা।

চলতি মাসের শুরুতে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালায় ইসরায়েল। এ হামলার প্রসঙ্গেই নিরাপত্তা পরিষদের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে ইরান-পাকিস্তান যৌথ বিবৃতিতে। তবে ইরান যে পরে পাল্টা জবাবে ইসরায়েলে তিন শতাধিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছিল, সে বিষয়টি বিবৃতিতে টানা হয়নি।

ইসলামাবাদ যদি তেহরানের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নের বিষয়টি বিবেচনায় না-ও নিত, তবু পাকিস্তান-ইসরায়েল সম্পর্ক স্বাভাবিক হওয়ার যে জোরালো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছিল, বর্তমান পরিস্থিতিতে এর ছিটেফোঁটাও নেই। গাজায় ইসরায়েলের নির্বিচার হামলা এর অন্যতম কারণ। পাকিস্তানের মানুষ আগে কখনো ইসরায়েলকে এতটা ঘৃণার চোখেও দেখেননি।

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
পাকিস্তান,ইসরায়েল,গাজা
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close