আরিফুল ইসলাম, মুরাদনগর (কুমিল্লা)

  ২০ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

মুরাদনগর অনন্তপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়

দুই দিক মুখ করে ক্লাস করে শিক্ষার্থীরা

* এক কক্ষে দুই শ্রেণির পাঠ * শিক্ষক সংকটে পাঠদান ব্যাহত

কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রায় এক যুগ ধরে শ্রেণিকক্ষ সংকটে ভুগছে। ফলে একই কক্ষে দুইটি শ্রেণির শিক্ষা কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে স্কুলটির। আবার স্কুল মাঠে প্রায় সাত হাজার বর্গফুট আয়তনের একটি গর্ত থাকায় শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্কুল চলাকালে শিক্ষক ও অভিভাবকরা থাকেন আতঙ্কে। এতে করে যেকোনো সময় ঘটতে পারে প্রাণহানির মতো ঘটনা।

শ্রেণি কক্ষ সংকটটি স্কুলটির প্রধান সমস্যা হলেও বর্ষাকালে স্কুল মাঠ থাকে জলাবদ্ধ, শিক্ষক, টয়লেট ও বিশুদ্ধ পানি সংকট নিয়ে চালানো হচ্ছে পাঠদান। নানান সমস্যায় জর্জরিত এ বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের লোখাপড়ার দারুণভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এতে করে সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কার্যক্রমসহ শিক্ষা কার্যক্রম মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, বিদ্যালয়ের একটি কক্ষের অর্ধেক বেঞ্চে বসে উত্তর দিকে মুখ করে ক্লাস করছে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। বাকি বেঞ্চে বসে দক্ষিণ দিকে ব্ল্যাক বোর্ডের দিকে মুখ করে ক্লাস করছে চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থীরা। কিন্তু অনেক সময়ই বোঝা যায় না, কোন শিক্ষক কাদের ক্লাস নিচ্ছেন।

স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ১৯৬৮ সালে ৩৩ শতাংশ জমি নিয়ে স্থানীয় শিক্ষানুরাগী আইন উদ্দিন, সামছু উদ্দিন ও আবদুল কাদের স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন। বর্তমানে শিশু শ্রেণি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী স্কুলটিতে লেখাপড়া করছে। স্কুলটিতে ১৯৯৬ সালে চার কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মিত হলেও ভবনটির বর্তমান চিত্র খুবই জরাজীর্ণ। এর মধ্যে অফিস কক্ষসহ শ্রেণিকক্ষগুলোতে গাদাগাদিভাবে চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষার কার্যক্রম। অপর দিকে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী বেশি হওয়া ও শ্রেণিকক্ষ সংকট হওয়ায় প্রায় এক যুগ ধরে একই রুমে চলছে শিক্ষা কার্যক্রম। এতে করে গরম কালে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ছে। একটু বৃষ্টিতেই স্কুল চত্বরে হাটু পানি জমে বন্ধ হয়ে যায় যাতায়াতের পথ। ফলে গ্রামটিতে শিক্ষার হার দিন দিন কমে যাওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মাত্র তিনটি কক্ষে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম চলায় শিক্ষার্থীরা যেমন শিক্ষা গ্রহণের পরিবেশ হারাচ্ছে, তেমনি ব্যাহত হচ্ছে স্কুলের স্বাভাবিক পাঠদান কার্যক্রম। এ ছাড়াও অঙ্ক, ইংরেজি, বিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ের কোনো শিক্ষক না থাকায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে লোখাপড়া।

গত ৬-৭ বছর থেকে বিভিন্ন পরীক্ষায় ৮০ ভাগ শিক্ষার্থী পাস করে আসলেও বিদ্যালয়টির প্রতি কর্তৃপক্ষ সু-নজর দিচ্ছে না বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, শিক্ষার্থীর তুলনায় শ্রেণিকক্ষ কম ও বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক না থাকায় প্রতিনিয়ত বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। অচিরেই স্কুল মাঠে থাকা গর্তটি কর্তৃপক্ষ ভরাট করবে এমনটাই আশা শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের।

বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক কাউছারুল আলম ভূঁইয়া বলনে, প্রতিদিন একই শ্রেণিকক্ষে এক সঙ্গে দুইটি ক্লাস চলার কারণে শিক্ষার্থীরা শিক্ষকদের কথা শুনতে পারছে না, অপরদিকে শিক্ষকও ছাত্রদের পড়া শুনতে পায় না। এতে করে শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ ও সঠিক শিক্ষা প্রদান করা অসম্ভব হয়ে পরেছে। তা ছাড়া টয়লেট না থাকায় শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মেয়েরা নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বিদ্যালয়ের নানান সমস্যা আমি লিখিতভাবে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। অচিরেই যথাযথ ব্যবস্থা না নিলে বিদ্যালয়টি প্রাণ হারাবে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বিদ্যালয়টি নানান সমস্যায় জর্জরিত। জরুরি ভিত্তিতে সমস্যা লাঘবের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।’ এ বিষয়ে ইউএনও মিতু মরিয়ম বলেন, ‘বিদ্যালয়টির বেশ কয়েকটি সমস্যা রয়েছে। ইতোমধ্যে খোজ খবর নিয়েছি। অচিরেই সমস্যা লাঘব হবে আশা করছি।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close