রফিকুল ইসলাম রাজা, নড়িয়া (শরিয়তপুর) থেকে ফিরে

  ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮

নড়িয়ায় পদ্মার ভাঙন

হুমকিতে মুলফৎগঞ্জ বাজারের দেড় হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোর দিক দিয়ে শরিয়তপুরে সমৃদ্ধ উপজেলা নড়িয়া। এখানকার অসংখ্যক মানুষ পাড়ি জমিয়েছে প্রবাসে। তাদের পাঠানো অর্থে এ অঞ্চলে গড়ে উঠেছে নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা কেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক মাসে পদ্মার ভাঙনে ভিটেমাটি হারিয়ে এখন নিঃস্ব ও মানবেতর জীবনযাপন করছেন শত শত পরিবার।

স্থানীয় ও প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, জেলার নড়িয়া উপজেলাটি প্রাচীন জনপদ। সমৃদ্ধ এ জনপদের ঐতিহ্য এখন একে একে পদ্মার বুকে বিলীন হচ্ছে। গত ২ মাস ধরে ভয়াল পদ্মার আগ্রাসী থাবায় বিলীন হচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, বাজার, মসজিদ, মন্দিরসহ মানুষের ভিটেমাটি বাদ যাচ্ছে না।

নড়িয়া পৌর এলাকার প্রাচীনতম বাজার মূলফৎগঞ্জ। এ বাজারকে কেন্দ্র করে পুরো এক কিলোমিটার জায়গাজুড়ে গড়ে উঠেছিল অট্টালিকা। কিন্তু ভাঙনের ফলে এসব ভবনের কোনোটি নদীর একবারে পাড়ে, কোনোটি অর্ধেক চলে গেছে নদীর মাঝে, কোনোটির শুধু ভিটে পরে আছে। শুধু চারদিকে নদী ভাঙনের ক্ষতচিহ্ন। ধ্বংস স্তূপ, পদ্মার প্রবল স্রোত এবং শো শো শব্দে কাঁপন ধরাচ্ছে মানুষের মনে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শরিয়তপুরের মানচিত্র থেকে পদ্মায় নড়িয়া উপজেলার হারিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে হাজারো মানুষ হাজির হচ্ছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নড়িয়ার পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় ভিড় করছেন তারা।

পদ্মার ভাঙন দেখতে আসাদ প্রতিদিনের সংবাদের সঙ্গে আলাপ কালে জানান, ‘ভাঙনের এ দৃশ্য দেখলে মনে অনেক দুঃখ লাগে। শত শত গ্রাম হারিয়ে যাচ্ছে পদ্মার বুকে। শহরের বড় বড় অট্টালিকা নিমিশেই হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষের ঘরবাড়ি ভেঙে যাচ্ছে। মানুষ কাঁদছে তাদের কান্না দেখে আমাদেরও কান্না চলে আসে।’ এদিকে, নড়িয়া পৌর এলাকার বিস্তীর্ণ জনপদের সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলো বিলীন হচ্ছে পদ্মার গর্ভে। পৌর এলাকার ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের নতুন ভবনটির অর্ধেক নদীগর্ভে চলে যেতে শুরু করে এক সপ্তাহ আগে। গত বুধবার বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পদ্মা নদীর ভয়াবহ ভাঙনে নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নতুন ভবন ৯০ শতাংশ নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়।

নড়িয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স জান্নাত বলেন, গত ৬ তারিখ থেকে আমাদের হাসপাতাল এলাকায় ভাঙন শুরু হয়। বর্তমানে ২টি ভবন নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন প্রতিরোধে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পুরো অংশটি দুই-একদিনের মধ্য বিলীন হয়ে যেতে পারে।

এদিকে, পদ্মা ভাঙনের কবলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে উপজেলার নতুন নতুন এলাকা ও স্থাপনা। এইসব এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছে। যেকোনো সময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে মুলফৎগঞ্জ বাজারের প্রায় বারোশ থেকে দেড় হাজার ছোট-বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।

এলাকাবাসী জানায়, গত ৩ দিনে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির সামনের রাস্তা, মুলফৎ বাজারের শতাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ ২০০ বসতঘর ও ২ শতাধিক একর আবাদী জমি পদ্মার গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। গত ৩ মাসে জাজিরা নড়িয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পদ্মার ভাঙন অব্যাহত আছে। সম্প্রতি এর তীব্রতা বেড়ে গিয়ে গত ১০ দিনে উপজেলার ২টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকার ৪নং ওয়ার্ডের বেশির ভাগই বিলীন হয়ে যায়। ভয়াবহ পদ্মা নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নতুন ভবনটি নদীগর্ভে প্রায় ৯০ শতাংশ বিলীন হয়ে গেছে। এ ছাড়াও ভাঙনের কবলে পড়ে কয়েকটি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ, গাজি কালুর মেহমান খানা, ক্লিনিক, শপিংমল, মূলফৎগঞ্জ বাজারের প্রায় ২০০ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তবে ভাঙন প্রতিরোধে জিও ব্যাগ ফেলতে দেখা যায় নদীর মধ্যে ট্রলারে করে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close