বেড়া (পাবনা) প্রতিনিধি

  ১৮ আগস্ট, ২০১৮

বেড়ায় ভাঙন আতঙ্কে ১৫ হাজার পরিবার

পাবনার বেড়া উপজেলার চরপেঁচাকোলা গ্রামের প্রবীণ লোক মজিদ মোল্লা। গত এক যুগে দুই দফা নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন। এক সময় ২০ বিঘা জমি ও সাজানো ঘরবাড়ি ছিল তার। এখন কিছুই নেই, সবই যমুনায় বিলীন হয়েছে। পরিবার পরিজন নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছেন। বেড়া পৌর সদরে রিকশা চালিয়ে কোনো রকম চলছে তার ৫ সদস্যের সংসার। ‘অনেক জমিজমা গাছপালা আছিল এহন আর কিছুই নাই। সর্বনাশা যমুনা নদী আমাগো শেষ সম্বলটুকুও কাইরা নিছে।’ বলেই কেঁদে ফেললেন মজিদ মোল্লা। একই অবস্থা চিতুলিয়া ও চরপেঁচাকোলা গ্রামের আবুল মোল্লা, ছালাম মোল্লা, মোজাই মোল্লা, আরশেদ মোল্লা, অহেল মোল্লা, নূর মোহাম্মদ, ওয়াদুদ মন্ডল, চাঁদ মিয়া শেখ, মনিরুল ইসলামসহ অনেকেরই।

স্থানীয় ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, বেড়া পাউবো বিভাগ যমুনার সবচেয়ে বেশি ভাঙন প্রবণ তারটিয়া ও দেওয়ান তারটিয়ায় প্রায় ৭০৫ মিটার স্থায়ী ভাঙন রোধের কাজ করেছে। এতে ওই এলাকার ভাঙন বন্ধ হয়ে গেছে। এর ভাটিতে চিতুলিয়া ও চরপেঁচাকোলা গ্রামে যমুনার স্রোত সরাসরি আঘাত করায় ভাটিতে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়। গত এক মাসে বাড়িসহ প্রায় আড়াই শতাধিক বসতবাড়িসহ প্রায় ৫০০ একর ফসলি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নদী ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলো বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে। বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ থেকে যমুনা নদী কোথাও ৫০ ফুট কোথাওবা ১০০ ফুট দূর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ যমুনা নদীতে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রিতদের মাঝে ভাঙন আতঙ্ক বিরাজ করছে।

অস্থায়ী ভাঙন রোধে বেড়া পাউবো বিভাগ প্রায় ৯ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলেছে যা প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই অপ্রতুল। হুড়াসাগর ও যমুনা নদীর মোহনা থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ না হলে ভাঙন রোধ সম্ভব নয় বলে চরপেঁচাকোলা গ্রামের মেম্বর মিজানুর রহমান জানিয়েছেন।

এ দিকে গত রোববার দুপুরে চরপেঁচাকোলা গ্রামবাসী ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হুড়াসাগর ও যমুনা নদীর মোহনায় সমবেত হয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন। তারা নদী ভাঙন এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানান।

এতে বক্তরা অভিযোগ করে জানান, চরপেঁচাকোলা গ্রামের কোল ঘেষে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোনের ফলে ভাঙন বন্ধ হচ্ছে না। তারা বলেন, নদীর উত্তর পাড়ের পায়না গ্রামের সরকার দলের কিছু কিছিু নেতার নেতৃত্বে প্রতিদিন গভীর রাত থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত ৫০-৬০টি দেশি ড্রেজার ও ভলগেটের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছে। বালু উত্তোলনে বাধা দিলেই মারতে আসে, তাদের মোহনগঞ্জ ও বেড়া বাজারে যাওয়া বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে প্রশাসনের কাছে লিখিত আবেদন করে কোনো প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না বলে তারা অভিযোগ করেছেন।

চরপেঁচাকোলা গ্রামের প্রবীণ ব্যক্তি আলহাজ মাওলানা আ. সোবহান জানান, গত ১৫ বছরে যমুনা নদী প্রায় ৫ কিলোমিটার পশ্চিমে সরে এসেছে। এতে অনেক গ্রাম, মসজিদ, হাটবাজার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাজার হাজার একর ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। প্রায় ২৫ হাজার পরিবার সহায় সম্বল হারিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নিয়েছে। যাদের আর্থিক সামর্থ আছে তারা অন্যত্র জমি কিনে ঘরবাড়ি তৈরি করে বসবাস করেছে। যাদের আর্থিক সামর্থ নেই তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে আশ্রয় নিয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে।

হাটুরিয়া-নাকালিয়া ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ড মেম্বর চরপেঁচাকোলা গ্রামের বাসিন্দা মিজানুর রহমান বলেন, হুড়াসাগর ও যমুনা নদীর মোহনা থেকে ড্রেজার ও ভলগেটের সাহায্যে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করা না হলে চরপেঁচাকোলা গ্রামের ভাঙন ঠেকানো যাবে না। ভাঙনরোধে বেড়া পাউবো বিভাগ যে পরিমাণ বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ফেলেছে তা প্রয়োজনের তুলনায় একবারেই অপ্রতুল।

বেড়া পাউবোর উপসহকারী প্রকৌশলী ভাঙন রোধ প্রকল্পের সাইড ইঞ্জিনিয়র মো. ওসমান গনি জানান, চরপেঁচাকোলায় ভাঙন রোধে এ পর্যন্ত প্রায় ৯ হাজার বালু ভর্তি জিও ব্যাগ নদীতে ডাম্পিং করা হয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর বরাদ্দ চেয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পাওয়া গেলে আবার ভাঙন রোধ কাজ শুরু করা হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close