মো. দেলোয়ার হোসেন, বাউফল (পটুয়াখালী)

  ০৯ জুলাই, ২০১৮

বাউফলে কাজ না করেই প্রকল্পের টাকা লুটপাট

স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ১ কোটি টাকা ফেরত

পটুয়াখালীর বাউফলে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দকৃত ১ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। গত ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ সমাপ্ত করার কথা থাকলেও উপজেলা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানদের মধ্যে দলীয় কোন্দল ও সমন্বয়ের অভাবে সময়মতো প্রকল্প দাখিল করা হয়নি।

এ ব্যাপারে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মজিবুর রহমান বলেন, ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রকল্প দাখিল করার জন্য একাধিকবার নোটিশ করা হলেও তারা কোনো প্রকল্প দাখিল করেনি। এ জন্য ওই ১ কোটি টাকা ফেরত দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে অধিকাংশ উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ শেষ না করেই বরাদ্দকৃত টাকার সিংহভাগ লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পগুলো হলো বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) রাজস্ব, কাজের বিনিময় খাদ্য (কাবিখা), কাজের বিনিময় টাকা (কাবিটা) সাধারণ ও বিশেষ বরাদ্দ, টেস্ট রিলিফ সাধারণ ও বিশেষ বরাদ্দ, প্রাইমারি স্কুলের সিলিভ ফান্ড, ক্ষুদ্র মেরামত ও লেট্রিন মেরামত।

জানা গেছে, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে চার কিস্তিতে ৫৭ লাখ ৩৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টাকায় ৪৪টি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কোনো প্রকল্পের কাজই দৃশ্যমান নয়। পরিবহন ও যোগাযোগ, কৃষি ও সেচ, স্যানিটেশন এবং শিক্ষা খাতে এ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। উপজেলা পরিষদের রাজস্ব আয় থেকে (হাট-বাজার ও বাসা ভাড়া) ৭২ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ৭৬টি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও অধিকাংশ প্রকল্পের টাকা দিয়ে কোনো কাজ না করেই টাকা লোপাট হয়েছে। এ বিষয়ে উপজেলা প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম বলেন, কাজ না করে টাকা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমরা কাজ তদারকি করেই বিলের টাকা দিয়েছি।

কাজের বিনিময় খাদ্য (সাধারণ) ৮৫ টন চাল দিয়ে ১৮টি প্রকল্প ও কাজের বিনিময় টাকা (সাধারণ) ৩৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে ১৯টি প্রকল্প, কাজের বিনিময় খাদ্য (বিশেষ) ১৪৭ টন চাল দিয়ে ১৮টি প্রকল্প ও কাজের বিনিময় টাকা (বিশেষ) ৫৭ লাখ ৬২ হাজার ১৯টি প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা থাকলেও সরেজমিনে গিয়ে অধিকাংশ প্রকল্পেরই কোনো অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি।

টেস্ট রিলিফ (সাধারণ) ৫৪ লাখ ৯ হাজার ৩৮০ টাকা ব্যয়ে ৬৬টি প্রকল্প এবং টেস্ট রিলিফ (বিশেষ) ৯৭ লাখ ৩৮ হাজার টাকা ব্যয়ে ৪১টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। বরঞ্চ প্রকল্পের কাজ কাগজে কলামে সমাপ্ত দেখিয়ে বিল পরিশোধ দেখানো হয়েছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) পীযুষ চন্দ্র দে বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরেই বিলের টাকা দেওয়া হয়েছে। যেসব কাজ শেষ হয়নি, আমি তার বিলের টাকা দিইনি। পরিপত্রের আলোকে ওই টাকা অ্যাকাউন্টে জমা রেখেছি। কাজ শেষ করার পরেই বিল পরিশোধ করা হবে। তবে কী পরিমাণ কাজের টাকা জমা রাখা হয়েছে, তা বলতে নারাজ তিনি। প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) রাজিব বিশ্বাসও একই সুরে কথা বলেছেন।

অন্যদিকে উপজেলা শিক্ষা বিভাগের আওতায় ২৩৩টি সরকারি প্রাথমিক স্কুলের অনুকূলে সিলিভ প্রকল্পের আওতায় প্রতিটি স্কুলে ৪০ হাজার টাকা করে মোট ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এই টাকা দিয়ে ওইসব স্কুলে শিক্ষা উপকরণ ও ক্ষুদ্র মেরামত করার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন। ৩০ জুনের মধ্যে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষা উপকরণ ক্রয় করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অথচ, আগাম বিল ভাউচার জমা দিয়ে সমুদয় টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। একই বিভাগের ১২টি প্রাইমারি স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামতের জন্য প্রতিটি স্কুলে ১ লাখ টাকা করে মোট ১২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। স্কুলগুলো হলো উত্তর কালাইয়া, আলী আকবর, মধ্য কেশবপুর, কালাইয়া কোটপাড়, দক্ষিণ রাজাপুর, সার্নেস্বর, উত্তর কপুরকাঠি, পশ্চিম ছিটকা, কেশবপুর এনএস, উত্তর পশ্চিম রামনগর, উত্তর মধ্য রাজাপুর ও কালিশুরী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর মধ্যে কোনো কোনো স্কুলে নামমাত্র কাজ করা হলেও অধিকাংশ স্কুলে কোনো কাজ না করেই সমুদয় টাকা উত্তোলন করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ ছাড়াও ১০টি প্রাইমারি স্কুলে লেট্রিন মেরামতের জন্য ২০ হাজার টাকা করে ২ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হলেও কাজ না করেই টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। ৩০ জুনের মধ্যে এসব সংস্কার কাজ করার নির্দেশ ছিল। স্কুলগুলো হলোÑ নিজ তাঁতেরকাঠি, উত্তর পূর্ব কাছিপাড়া, শিবপুর, পশ্চিম মাঝপাড়া, মধ্য নওমালা, দক্ষিণ মহাশ্রাদ্দি, দক্ষিণ বিলবিলাস, উত্তর সাবপুরা, উত্তর পাকডাল ও দক্ষিণ পোনাহুরা সরকারি প্রাথমিক স্কুল।

এ বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার রিয়াজুল ইসলাম বলেন, স্কুলের সিলিভ ফান্ডের টাকা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি। তদারকি করে টাকা দেওয়া হবে। স্কুলের ক্ষুদ্র মেরামত ও লেট্রিন সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাজ শেষ হওয়ার পরেই টাকা দেওয়া হয়েছে। তারপরেও কোনো অনিয়ম পাওয়া গেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist