নাঈমুল হাসান, টঙ্গী (গাজীপুর)
ছয় বছরেও শেষ হয়নি ‘অস্থায়ী’ কাল
বেদখলে টঙ্গী পৌর অডিটোরিয়াম * বন্ধ পাঠ ও সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড
উপরে পাকা গেটে লেখা ‘পৌর অডিটোরিয়াম, টঙ্গী পৌরসভা’; আর নীচে ‘টঙ্গী পুলিশ ক্যাম্প’। এ দৃশ্য দেখে প্রথমে যেকারো খটকা লাগার কথা। আশির দশকে নির্মিত এ অডিটোরিয়ামটি সকলের কাছে টঙ্গী পৌর অডিটোরিয়াম হিসেবে পরিচিত। এক সময় টঙ্গীর সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মিলনমেলার স্থান ছিল এই অডিটোরিয়ামটি। এর ভেতরে থাকা একমাত্র পাঠাগারে পাঠ পিপাষু লোকজন, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত আসা যাওয়া করত। ছয় বছর আগে অডিটোরিয়ামটিতে অস্থায়ী ভিত্তিতে গাজীপুরের শিল্প পুলিশ-২-এর থাকার অনুমতি দেন তৎকালীন টঙ্গী পৌরসভার মেয়র আজমত উল্লাহ খান। তারপর এই অর্ধযুগ পেরিয়ে গেলেও শেষ হয়নি ‘অস্থায়ী’ ক্যাম্পের সময় কাল। কবে শেষ হবে তা জানেন কেউ। ফলে স্থবির হয়ে পড়েছে টঙ্গীর সামাজিক-সাংস্কৃতিক কর্মকা-।
স্থানীয় ও পূর্ববর্তী কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অডিটোরিয়াম স্থাপনের প্রথম দিকে এর সব আয়-ব্যয়ের হিসাবের সমান ভাগ পেত টঙ্গী সরকারি কলেজ ও সাবেক টঙ্গী পৌরসভা। তখন এ অডিটোরিয়ামের সব প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করত টঙ্গী পৌরসভা এবং কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধার দায়িত্ব পালন করত টঙ্গী সরকারি কলেজ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ছয় বছর আগে অডিটোরিয়ামের ভেতর ‘অস্থায়ী ক্যাম্প’ স্থাপনের পর শিল্প পুলিশের তত্ত্বাবধানে এর ভেতর কোন ধরনের সামাজিক কিংবা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিচালনা হয়নি। শিল্প নগরী হিসেবে পরিচিত টঙ্গী এলাকার শিল্প কলকারখানাগুলোর নিরাপত্তার জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে টঙ্গী অডিটোরিয়ামটিতে পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য অনুমতি দেয় তৎকালীন টঙ্গী পৌরসভা। নিরাপত্তার জন্য শিল্প পুলিশকে অস্থায়ী ক্যাম্প দেওয়া হলেও পুলিশই রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো। সংগঠনগুলোর দাবি টঙ্গী অডিটোরিয়াম থেকে অবিলম্বে শিল্প পুলিশের ক্যাম্প প্রত্যাহার করে যেন নতুন করে একটি সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মান করা হয়। এর প্রতিবাদে টঙ্গী সরকারী কলেজের শিক্ষার্থীরা ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো পৃথকভাবে মানববন্ধন ও বিভিন্ন দফতরে স্মারকলিপি প্রদান করলেও পুলিশের দখলে থাকা অডিটোরিয়াম মুক্ত করতে সংশ্লিষ্টদের কার্যকর কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এ বিষয়ে টঙ্গী সরকারি কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের প্রায় ২০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য এই অডিটোরিয়ামটি অত্যাবশ্যকীয় হয়ে পড়েছে। শিক্ষার্থীদের সুপ্ত প্রতিভা বিকাশের জন্য এই অডিটোরিয়াম থেকে শিল্প পুলিশের ক্যাম্পটি প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য আমরা বিভিন্ন দফতরে চিঠি দিয়েছি।
সম্মিলিত সাংস্কৃতি জোট টঙ্গী শাখার সভাপতি শেকানুল ইসলাম শাহী এ ব্যাপারে বলেন, টঙ্গীতে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর একমাত্র আশ্রয়স্থল ছিল টঙ্গী অডিটোরিয়ামটি। তাছাড়া অডিটোরিয়ামের ভিতরে আটকা পড়েছে টঙ্গীর একমাত্র পাঠাগারটি। কিন্তু বর্তমানে সেখানে শিল্প পুলিশের ক্যাম্প থাকায় পাঠাগার ও অডিটোরিয়াম দুটোই অচল হয়ে পড়ে রয়েছে।
তিনি আরো বলেন, আদমজীর সঙ্গে অডিটোরিয়ামের জায়গাটি নিয়ে দীর্ঘদিন যাবৎ তৎকালীন পৌরসভা ও বর্তমান সিটি করপোরেশনের মামলা চলছিল। গত বছর ওই মামলায় আদালত সিটি করপোরেশনের পক্ষে রায় দিয়েছে। তাই আমরা চাই জনগণের সম্পত্তি জনগণকে ফিরিয়ে দেওয়া হোক। অডিটোরিয়াম থেকে পুলিশ ক্যাম্প অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে পূরনো জরাজীর্ণ ভবনটি ভেঙ্গে নতুন করে বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য দাবি জানান তিনি।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এমএ মান্নান মুঠোফোনে এ ব্যাপারে বলেন, পুলিশ ক্যাম্প প্রত্যাহারের আমরা পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলোচনা করে শিল্প পুলিশের জন্য স্থায়ী একটি জায়গা নির্ধারণ করা হবে আশা করছি এবং খুব শিঘ্রই এই বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। অন্যদিকে অডিটোরিয়াম নিয়ে চলমান মামলায় সিটি করপোরেশনের পক্ষে রায় দিয়েছে আদালত। কিন্তু পরবর্তীতে কলেজ কর্তৃপক্ষ আদালতে আপিল করেছে। মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে আমরা অবশ্যই অডিটোরিয়ামটি ভেঙ্গে নতুন করে একটি বহুমাত্রিক সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।
শিল্প পুলিশের পুলিশ সুপার শোয়েব আহম্মেদ বলেন, ‘জায়গার অভাবে ছয় বছর ধরে অস্থায়ী ক্যাম্প হিসেবে অডিটোরিয়ামটি ব্যবহার করছি। জেলা প্রশাসনের নিকট জায়গার আবেদন করেছি, জায়গা পেলেই ক্যাম্প স্থানান্তর করা হবে। আমরাও চাই সাংস্কৃতিক কর্মকা- সুষ্ঠভাবে চলুক।’
স্থানীয় সংসদ সদস্য জাহিদ আহসান রাসেল প্রতিদিনের সংবাদকে জানান, দ্রুত এ ব্যাপারে একটি সিন্ধান্ত নেওয়া হবে।
"