সড়ক বিভাজকে লাগানো গাছে ফুল ফোটাতে ব্যর্থ হয়ে আবার বেসরকারি অর্থায়নের দিকেই ঝুঁকছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় দুই বছর আগে হাতে নেওয়া প্রকল্পটিতে আশানুরূপ সফলতা না আসায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, মুঠোফোন অপারেটর, ইলেকট্রনিকস ও প্রিন্ট মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছে সংস্থাটি। এই বিষয়ে আগামীকাল বুধবার নগর ভবনে প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে বসবে ডিএসসিসি। কর্মকর্তারা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সড়কের সৌন্দর্য বাড়ার পাশাপাশি ব্যয়ও কিছুটা কমবে।

সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর বিভাজকে বাগানবিলাস ফুলগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আগে এসব সড়কের সৌন্দর্যবর্ধন করা হতো বেসরকারিভাবে। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব দু-চারটি বিজ্ঞাপন প্রচার করত। এতে সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি এ খাতে রাজস্ব ব্যয় থেকে মুক্তি পেত সিটি করপোরেশন। কিন্তু মেয়র নির্বাচিত হয়ে নগর ভবনে আসার এক বছরের মাথায় এ-সংক্রান্ত সব চুক্তি বাতিল করে এ প্রকল্প হাতে নেন ডিএসসিসির মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন।

সড়ক বিভাজকের ফুলগাছ নিয়ে খবর প্রকাশের পর সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন মেয়র। আগের মতো বেসরকারিভাবে সৌন্দর্যবর্ধনের সিদ্ধান্ত নেন। করপোরেশনের পক্ষ থেকে চিঠির মাধ্যমে বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, মুঠোফোন অপারেটর, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, প্রিন্ট মিডিয়াসহ সংশ্লিষ্ট ৯৫টি প্রতিষ্ঠানকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাল ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মো. বিলালের সভাপতিত্বে সভা আহ্বান করা হয়েছে। ওই সভায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান অথবা উপযুক্ত ব্যক্তিকে উপস্থিত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, ডিএসসিসি নাগরিক সুবিধাদি নিশ্চিত করাসহ বিশেষত সড়ক মিডিয়ানের (বিভাজক) সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে করে থাকে। তাছাড়া রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায় ও বিদেশ থেকে আগত মেহমানগণের পক্ষ থেকেও দৃষ্টিনন্দন ও মননশীলভাবে সড়ক বিভাজক সজ্জিতকরণের বিষয়টি লক্ষ্য করা হয়ে থাকে। এসব কাজে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে করপোরেশনকে সহয়তা করে থাকে।

প্রকল্প সূত্র জানিয়েছে, বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ডিএসসিসির প্রায় আট কিলোমিটার সড়কে ফুলগাছ লাগানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সড়কগুলোর মধ্যে রয়েছে গোলাপশাহ মাজার থেকে কাকরাইল নাইটিঙ্গেল মোড়, বঙ্গবাজার থেকে শেরাটন হোটেল, মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগ মোড়, রমনা থানার সামনে থেকে সবজি বাগান এলাকা এবং মতিঝিলের বলাকা চত্বর এলাকা। এর আগে এসব সড়কে বেসরকারিভাবে সৌন্দর্যবর্ধন করা হতো। বিনিময়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব বিজ্ঞাপন প্রচার করত। এতে সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি এ খাতে রাজস্ব ব্যয় থেকে মুক্তি পেত সিটি করপোরেশন।

এ বিষয় ডিএসসিসির প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসূফ আলী সরদার বলেন, আগের মতো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সড়ক বিভাজকের সৌন্দর্যবর্ধনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বিষয়টি জানানোর জন্য আমরা শতাধিক প্রতিষ্ঠানকে চিঠি দিয়েছি। তাদের উপস্থিতিতে নগর ভবনে বৈঠক হবে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের জুনে ডিএসসিসির সড়কগুলো সবুজায়নের পাশাপাশি সৌন্দর্যম-িত করে তুলতে ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে এক বছর মেয়াদি প্রকল্প হতে নেয় সংস্থাটি। যা ২০১৭ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এর আগে ২০০৪ সালে অবিভক্ত সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সড়কের সৌন্দর্যবর্ধনের দায়িত্ব বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেওয়া হয়েছিল। তখন থেকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সড়কদ্বীপে গাছ লাগিয়েছে, ঝরনা ও ভাস্কর্য স্থাপন করেছে।

"