খেলা ডেস্ক

  ২৯ মার্চ, ২০১৭

তাসকিনের দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক

বাংলাদেশের প্রায় সব বোলারকেই কম-বেশি বিভীষিকা দেখিয়েছেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটসম্যানরা। ব্যতিক্রম ছিলেন শুধু তাসকিন আহমেদ। লঙ্কানদের ইনিংসের শেষ ওভারে তাই এই পেসারের হাতেই বল তুলে দিয়েছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ম্যাচের পঞ্চশতম ওভারে তাসকিনকেও অন্যদের ভাগ্য বরণ করতে হবে প্রথম দুই বল অন্তত তেমনই ইঙ্গিত দিয়েছিল। কিন্তু কে জানতো রানের ফুলঝুরি ছড়ানো স্বাগতিকদের এক বল বাকি থাকতেই গুটিয়ে দেবেন তাসকিন, একদিনের ক্রিকেটে বাংলাদেশের পঞ্চম বোলার হিসেবে তুলে নেবেন হ্যাটট্রিক। কাল ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এমনই বাজিমাত করলেন টাইগার বজ্রগতির পেসার। উচ্ছ্বসিত তাসকিন তো ডানা মেলে উড়বেনই!

রঙিন পোশাকে অভিষেক ম্যাচেই ক্রিকেটবিশ্বকে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তাসকিন। স্বপ্নের রাজকুমারের মতোই শুরু করেছিলেন রথযাত্রা। ভারতের পাঁচ ব্যাটসম্যানকে করেছিলেন বোতলবন্দি। কিন্তু ওই ম্যাচে বাংলাদেশের অসহায় আতœসমর্পণ অনেকটাই আড়াল করে দিয়েছিল তাসকিনের পাঁচ উইকেট নেওয়ার কীর্তিটা। ম্যাচটায় টাইগাররা হেরেছিল এটা ঠিক, কিন্তু সেদিনই আদর্শ এক পেসারের জন্ম হয়েছিল মিরপুরে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায় শুরুর পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ছুটছেন টাইগারদের ত্রাতা হয়েই। তার দুর্দান্ত নৈপুণ্য বাংলাদেশের বোলিং বিভাগের শক্তিতে যোগ করেছে অনন্য এক মাত্রা। কেন তিনি অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা কাল সেটার আরেকটা নমুনা দেখালেন রাজসিক এক হ্যাটট্রিক তুলে নিয়ে।

ডাম্বুলায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে মুদ্রা নিক্ষেপের সুবিধা অনুকূলে নিয়ে সতীর্থদের হাতে ব্যাট তুলে দেন উপুল থারাঙ্গা। লঙ্কান ব্যাটিংয়ের বিপরীতে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। হাত খুলেই খরচ করেছে বোলিং বিভাগ। মাশরাফি শুরুর দিকে রানের চাকার গতি কিছুটা রোধ করলেও পরে ‘পুষিয়ে’ দিয়েছেন। কিন্তু আগা-গোড়া একই ছিলেন তাসকিন। লেন্থ, সুইং, বাউন্সার এবং গতির সমণ¦য়ে নাকাল করে তুলেছিলেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানদের। তবে ৮ ওভারে উইকেট বলতে মাত্র একটিই পেয়েছিলেন। উইকেটটাও আবার যেন তেন ব্যাটসম্যানের নয়, টাইগারদের দুঃস্বপ্ন দেখানো ওপেনার কুশল মেন্ডিসকে সাজঘরে পাঠিয়েছিলেন তাসকিন। দারুণ এক কট অ্যান্ড বোল্ডে ডান-হাতি পেসার বিদায় করেন সেঞ্চুরিয়ানকে।

তাতে রীতিমত স্বস্তির নিঃশ্বাসই ফেলেছিল বাংলাদেশ। টাইগার ভক্তকূলকে এরচেয়েও বড় উপহারটা তাসকিন দিয়েছিলেন শেষ ওভারের রোমাঞ্চে। ততক্ষণে লঙ্কান স্কোর বোর্ড তিনশ রান ছাড়িয়েছে। তাসকিন যে কত রান দেবেন সেটাও রীতিমত উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছিল। প্রথম বলটি ভালোই করেছেন। কভারে ঠেলে দিয়েই একটি রান নিয়ে উইকেটে থাকা স্বীকৃত ব্যাটসম্যান আসেলা গুনারতেœকে স্ট্রাইক দেন নুয়ান কুলাসেকারা। দ্বিতীয় বলটি ছিল ফুলটস, সহজেই তা সীমানা ছাড়া করেন গুনারতেœ। কিন্তু শেষ হাসি হাসলেন তাসকিনই। তৃতীয় বলেই গুনারতেœকে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করেন। পরের বলে মুস্তাফিজুর রহমানের দারুণ এক ক্যাচে ফেরেন সুরঙ্গ লাকমাল। হ্যাটট্রিক করতে পারবেন তাসকিন? সবার মনেই প্রশ্নটা ছিল। পঞ্চম বলে নুয়ান প্রদীপের স্ট্যাম্প উপড়ে ফেলে তাসকিন করে ফেললেন দুর্দান্ত হ্যাটট্রিক!

বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে পঞ্চম বোলারের হ্যাটট্রিক এটা। দেশ বিবেচনায় নিলে টাইগারদের চেয়ে বেশি হ্যাটট্রক করার বোলার আছেন কেবল পাকিস্তান ও অস্ট্রেলিয়ায়। এই দুই দলেরই ছয়জন করে হ্যাটট্রিক করেছিলেন।

ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি বা টেস্ট। ক্যারিয়ারে হ্যাটট্রিকের স্বপ্ন যেকোনো বোলারেরই থাকে। ওয়ানডে ক্রিকেটে তাসকিনের আগে এই স্বপ্ন পূরণ করতে পেরেছেন মাত্র ৩৫ জন বোলার। মোট হ্যাটট্রিক ছিল ৪০টি। শ্রীলঙ্কার ফাস্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা একাই করেছেন তিনটি হ্যাটট্রিক। দুটি করে হ্যাটট্রিকের কীর্তি গড়েছেন পাকিস্তানের দুজন-ওয়াসিম আকরাম ও সাকলায়েন মুশতাক। এ ছাড়া দুটি হ্যাটট্রিক আছে শ্রীলঙ্কার প্রাক্তন পেসার চামিন্দা ভাসের। তবে একদিনের ক্রিকেটে প্রথম হ্যাটট্রিকটা ছিল পাকিস্তানের জালাল-উদ-দিনের। ১৯৮২ সালের ২০ সেপ্টেম্বর ওয়ানডে ইতিহাসে প্রথম হ্যাটট্রক করেছিলেন পাকবোলার।

বাংলাদেশের পক্ষে হ্যাটট্রিকের গৌরবে সবার আগে ভেসেছেন শাহাদাত হোসেন। হারারেতে ২০০৬ সালে হ্যাটট্রিকটি জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করেছিলেন এই পেসার। চার বছর পর এই জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেই মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে হ্যাটট্রিকের আনন্দে ভেসেছিলেন বাঁ-হাতি স্পিনার আবদুর রাজ্জাক। ২০১৩ সালে রুবেল হোসেনের হ্যাটট্রিকটি মিরপুরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। মিরপুরের দর্শক সাক্ষী হয়েছে তাইজুল ইসলামের হ্যাটট্রিকেরও। বাঁ-হাতি স্পিনার এই আনন্দে ভেসেছিলেন জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে।

অবশ্য পাকিস্তানের মোট হ্যাটট্রিক আটটি। শ্রীলঙ্কার চারজন বোলার মোট সাতটি হ্যাটট্রিক করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে হ্যাটট্রিক করেছেন তিনজন বোলার। দুজন করে বোলার হ্যাটট্রিক করেছেন নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, জিম্বাবুয়ে ও ভারতের। টেস্ট ও ওয়ানডেতে ভারতের হ্যাটট্রিকের দীর্ঘ অপেক্ষা ঘুচিয়েছিলেন একজনই, তিনি হরভজন সিং।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist