ক্রীড়া প্রতিবেদক

  ২২ জানুয়ারি, ২০১৯

রাজশাহীর মধুর প্রতিশোধ

রাজশাহী কিংস ১০০ রান করতে পারবে তা নিয়েই জেগেছিল সংশয়। ২৮ রানের মধ্যে টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেললে এমন শঙ্কা জাগাটা অমূলক নয়। সব শঙ্কা উড়ে গেছে ‘অখ্যাত’ লরি ইভান্সের ব্যাটে। ইংলিশ এই অলরাউন্ডারের দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরিতে দলীয় সংগ্রহ ১০০ তো বটেই, ১৫০ ছাড়িয়ে গেছে রাজশাহী কিংস।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ও রাজশাহী কিংসের ম্যাচের ব্যবধান গড়ে দিয়েছে ইভান্সের বিধ্বংসী সেঞ্চুরিটা। বিপিএলের চলতি আসরটা জমে উঠলেও কোথায় যেন একটা খচখচানি ছিল। কাল কুমিল্লার বিপক্ষে ১০৪ রানের হার না মানা ইনিংস খেলে সেটা দূর করে দিয়েছেন ইভান্স। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট ক্যারিয়ারে এই ইনিংসটাই তার সেরা ব্যাটিং। এই ইনিংসটা খেলার পথে চতুর্থ উইকেটে তাকে যোগ্য সঙ্গটাই দিয়েছেন রায়ান টেন ডেসকাটে।

চতুর্থ উইকেটে ডেসকাটেকে নিয়ে ১৪৮ রানের অবিচ্ছন্ন জুটি গড়ে তোলেন ইভান্স। এই জুটি গড়ার পথেই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস বোলারদের বেধড়ক পিটিয়েছেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। ৬২ বলের হার না মানা ইনিংসে ইভান্স চার মেরেছেন ৯টি, ছয়ের সংখ্যা ৬টি। কম যাননি তার সঙ্গী ডেসকাটেও। দুটি ছক্কার পাশাপাশি তিনটি ছক্কা হাঁকিয়েছেন তিনি। শেষাবধি ৪১ বলে ৬২ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকলেন ডেসকাটে।

ওপেনার ইভান্স ও পাঁচে নামা ডেসকাটের ব্যাটিং দৃঢ়তায় শুরুর ভয়াবহ বিপর্যয়টা সামলে উঠেছে রাজশাহী কিংস। পরে দুজন মিলে বোলারদের এনে দেন লড়াই করার শক্তিশালী সংগ্রহ। অথচ ইনিংসের প্রথম ৩৭ বলে ২৮ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে রীতিমতো কাঁপছিল রাজশাহী। ৭ বলে ৫ রানে ফিরে গেছেন শাহরিয়ার নাফীস। রানের খাতা খুলতে পারেননি রাজশাহীর তরুণ নেতৃত্ব মেহেদী হাসান মিরাজ। ৭ বলে ২ রান নিয়েছেন মার্শাল আইয়ুব।

নির্ধারিত ওভার শেষে আর কোনো উইকেট না খুইয়ে ১৭৬ রানের চ্যালেঞ্জিং সংগ্রহ তুলেছে রাজশাজী কিংস। জবাব দিতে নেমে ইনিংসের ১০ বল বাকি থাকতেই ১৩৮ রানে গুটিয়ে গেছে কুমিল্লা। ৩৮ রানের জয়ে কুমিল্লার বিপক্ষে প্রথম লেগে হারের মধুর প্রতিশোধই নিল রাজশাহী। টুর্নামেন্টের চলতি আসরে এটা মিরাজদের চতুর্থ জয়। তাদের সমান সমান ম্যাচে এ নিয়ে তৃতীয় হারের স্বাদ পেল তামিম-ইমরুলদের কুমিল্লা।

কঠিন লক্ষ্যে ব্যাট করতে নামা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের ইনিংসটা দেখিয়েছে উত্থান-পতন দুটোই। কুমিল্লা কখনো ম্যাচে ফিরেছে, কখনো বা বিপাকে পড়েছে। ক্ষণে ক্ষণে ম্যাচের রং বদলানো লড়াইটা ১৬ ওভার পর্যন্ত রোমাঞ্চ জাগিয়ে তুলেছিল। কিন্তু ক্রিকেটপ্রিয়াসুদের রোমাঞ্চের জল ঢেলে দেন রাজশাহী কিংসের দুই পেসার কামরুল হাসান রাব্বি ও মুস্তাফিজুর রহমান।

কাল মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুজনই বল হাতে আগুন ঝরিয়েছেন। ৪ উইকেট তুলে নেওয়া রাব্বি ১৮তম ওভারে বল করতে এসে ধস নামিয়েছেন কুমিল্লার লোয়ার অর্ডারে। ২৪ বলে ২৫ রান করা তামিম ইকবালকে সাজঘরে পাঠিয়ে কুমিল্লাকে প্রথম ধাক্কাটাও দিয়েছেন তিনিই। তিন ওভারে মাত্র ১০ রান দেওয়া রাব্বি ম্যাচ সেরার দাবিদার। যদিও সেরার স্বীকৃতি পেয়েছেন তিনিই, যার ব্যাটে এবারের বিপিএল দেখেছে তিন অঙ্কের ম্যাজিক ফিগার।

ইভান্স ম্যাচের নায়কবনে যাওয়া রাব্বি ও মুস্তাফিজ দুজনকেই থাকতে হলো পার্শ্ব নায়কের চরিত্র নিয়ে। কাটার মাস্টার কুমিল্লার ১০ নম্বর উইকেট নিয়েছেন। ম্যাচে তার শিকার সংখ্যা এই একটিই। তাতে অবশ্য মুস্তাফিজের বোলিং মাহাত্ম্য বোঝানো কঠিন। এদিন বল হাতে কী দুর্দান্তই না ছিলেন বাঁ-হাতি পেসার। ৩.২ ওভারে মাত্র ৮ রান দিয়েছেন মুস্তাফিজ। তন্মধ্যে তার তৃতীয় ওভারেই ম্যাচটার ভাগ্য প্রায় নির্ধারণ হয়ে গেছে।

শেষ চার ওভারে জয়ের জন্য কুমিল্লার সামনে ছিল ৪৫ রানের কঠিন সমীকরণ। ১৭তম ওভারে শহীদ আফ্রিদিকে অস্বস্তিতে রেখে মুস্তাফিজ দিলেন মাত্র ২ রান। তাতেই কুমিল্লার আস্কিং রেটটা হয়ে ওঠে প্রায় আকাশচুম্বি। চাপটা সামলে নিতে পরের ওভারের প্রথম বলেই রাব্বিকে উড়িয়ে মেরেছিলেন পাকিস্তানি কিংবদন্তি অলরাউন্ডার। কিন্তু দুর্ভাগ্য আফ্রিদির, সীমানা দড়ির খুব কাছে ক্রিশ্চিয়ান জোঙ্কারের দুর্দান্ত ক্যাচে তার ১৯ রানের সম্ভাবনাময় ইনিংসটার অপমৃত্যু ঘটিয়ে দিয়েছে। উইকেটে জমে ওঠা তার সঙ্গী লিয়াম ডসনও (১৭) সাজঘরে ফিরে গেছেন রাব্বির শিকার হয়েছে।

উইকেটে থিতু হয়ে আউট হয়েছেন কুমিল্লার দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও এনামুল হক বিজয়। দলের আস্কিং রেটের চাপটা এই দুজনই বাড়িয়ে দিয়ে গেছেন। যদিও দুই ওপেনারই দলের পক্ষে সর্বোচ্চ রান করেছেন। ২৪ বলে ২৫ রান করেছেন তামিম। ২৩ বলে ২৬ রান এসেছে বিজয়ের ব্যাট থেকে। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য রান করা শামসুর রহমান শুভ, জিয়াউর রহমান ও অধিনায়ক ইমরুল কায়েস দুই অঙ্ক ছুঁয়েই বিদায় নিয়েছেন। মাঝেরজন ১২ রানে ফিরেছেন। বাকি দুজনই করেছেন সমান ১৫ রান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close