শাহীন সুলতানা

  ০৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪

তুবার নীল সোয়েটার

তুবার বন্ধু মিথিলা। এক সপ্তাহ ধরে স্কুলে আসেনি। সেজন্য তুবার মন ভালো নেই। অন্য বন্ধুরা ক্লাসে এলেও মিথিলার জন্য মনটা খারাপ হয়ে আছে তুবার।

গতকাল সানজিদা ম্যাম বলেছিলেন, মিথিলার শরীরের বিভিন্ন অংশ আগুনের আঁচ লেগে ঝলসে গেছে। এ জন্য সে স্কুলে আসেনি।

কদিন ধরে তীব্র শীত। পাতলা কাঁথা আর দু-একটা ছেঁড়া কম্বলে ঘুম আসে না মিথিলার। তাই শীত নিবারণের জন্য সকালবেলা বাড়িতে সেদিন আগুন জ্বালানো হয়েছিল। চারদিকে সবাই গোল হয়ে বসে আগুন পোহাচ্ছিল। চাচাতো বোন শিরিন, মেরিনা আর সোহেলীর সঙ্গে যোগ দেয় মিথিলা।

হঠাৎ মাহিন দৌড়ে আগুনের কাছে আসতেই মিথিলা আটকাতে যায় মাহিনকে। ছোট ভাইটাকে রক্ষা করতে গিয়ে সে নিজেই পা পিছলে আগুনের মধ্যে পড়ে যায়। আগুনে তার ডান হাত, মুখ ও পায়ের কিছু অংশ পুড়ে যায়।

মিথিলার বাবা নেই। হেডস্যার লতিফুর রহমানের বাড়ির পাশেই মিথিলাদের বাড়ি। ঘটনার দিন সকালে মিথিলার মায়ের উচ্চ স্বরে কান্নাকাটির শব্দ শুনতে পেয়ে হেডস্যার লতিফুর রহমান ও স্কুলের দারোয়ান কাকু আসাদ আলী মিলে দ্রুত মিথিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।

সেখান থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে মিথিলাকে বাড়ি আনা হয়। তারপর থেকে মিথিলা আর স্কুলে আসেনি। সানজিদা ম্যাম বলেছিলেন, আগামী পরশু মঙ্গলবার তোমাদের সবাইকে নিয়ে মিথিলাকে দেখতে যাব।

ম্যামের কথায় তুবা শান্তি পেয়েছিল মনে। স্কুল থেকে ফিরেই মায়ের কাছে মিথিলার আগুনে পুড়ে যাওয়ার যে ঘটনা বলেছে তুবা। ঘটনা শুনে মা চমকে উঠেছিলেন। যখন শুনলেন মিথিলার বাবা নেই আর ওরা খুব গরিব, তখন মায়ের চোখে জল চিকচিক করে উঠল।

তুবা বলল, মামণি, আমার বন্ধু মিথিলা অনেক গরিব। ওর বাবা নেই। ওরা দুভাই-বোন। ওর ছোট ভাইয়ের নাম মাহিন। ওদের ভালো শীতের কাপড় নেই বলেই ওরা রোজ সকালে পাতা জ্বালিয়ে আগুন পোহায়। বেশি শীত পড়লে রাতেও আগুন জ্বালিয়ে রাখে।

ওদের বাবা থাকলে এতটা কষ্ট হতো না তাই না মামণি? মামণি মাথা নাড়ে আর তুবার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

তুবা বলে, মামণি, এ বছর আব্বু আমার জন্য যে গোলাপি আর নীল সোয়েটার কিনে এনেছে তার মধ্য থেকে নীল সোয়েটারটি আমার বন্ধু মিথিলাকে দিতে চাই। নীল রং মিথিলার অনেক পছন্দ। তুমি কি চাও মামণি?

মা বললেন, শুধু তোমার বন্ধুকে কেন সোয়েটার দেবে তুবা সোনা? মিথিলার ছোট্ট ভাই মাহিনের জন্যও আমি সোয়েটার কিনে দেব কাল। মিথিলার চিকিৎসার কিছু টাকাও তুমি তোমার ক্লাস টিচার সানজিদা ম্যামের কাছে জমা দিতে পারো।

আমরা প্রত্যেকেই যদি আমাদের আশপাশের এমন অসহায় ও দরিদ্র মানুষের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিই তাহলে আর কেউই দুর্ঘটনার শিকার হবে না। তোমার বন্ধুর মতো অসংখ্য অসহায় শিশুর কষ্ট অনেকটাই লাঘব যাবে। এমন কথায় তুবা খুশিতে মাকে জড়িয়ে ধরল।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close