আলমগীর কবির
ছুটির গল্প
দলছুট একটা রঙিন ডানার প্রজাপতি আমায় ডেকে বলল, কে তুমি? ঘাসের বিছানায় শুয়ে থেকে আমি জবাব দিলাম, আমার নাম আবির।
ঘাসের বিছানায় শুয়ে থেকে আকাশ দেখছিলাম। খোলা আকাশ। আকাশের বুকে সাদা সাদা তুলোর মতো মেঘ। সাদা রঙের একেকটা প্রজাপতি নাকি? আকাশপুরে কি কোনো ফুলের বাগান আছে? উড়ে উড়ে যাচ্ছে কোথায় প্রজাপতি মেঘ?
কোথা থেকে যেন একঝাঁক চড়ুই এলো ঘাসের বনে।
আমাকে দেখে চড়ুই পাখিগুলো উড়ে গেল না। বরং কাছেই শস্যদানা খুঁটে খুঁটে খেতে থাকল।
ঘাসবনের ওপাশে মটরশুঁটির খেত। মটরশুঁটির ফল ধরার সময় এখনো হয়নি। ফুলে ফুলে ছেয়ে গেছে সারা খেত। ওপাশ থেকে চাচাতো ভাই রিফাত হঠাৎ ডেকে উঠল, আবির, আবির জলদি করে আয় এদিকে।
এক দৌড়ে ছুটে যায় রিফাতের কাছে। রিফাতের হাতে দেখি একটা ডানাভাঙা পাখি।
কোথায় পেলি?
কুড়িয়ে পেলাম। জলদি করে পানি আন।
আবার আমি এক দৌড়ে পাশের খেতে যাই। খুঁজতে খুঁজতে একসময় জলের দেখা পাই। দুই হাতে করে জল নিয়ে ফিরে আসি। ডানাভাঙা পাখির মাথায় জল ঢেলে দিই। জল খাইয়ে দিই দুজন মিলে। কোনো শিকারির কবল থেকে বেঁচে ফিরেছে হয়তো পাখিটা। ডানায় আঘাত লেগেছে।
আমরা অনেকক্ষণ পাখির সেবা করি। তারপর একটা শিমখেতের মাচায় পাখিটাকে রেখে বাড়ির পথে হাঁটতে থাকি।
আমার পরীক্ষা শেষ হতেই মা-বাবার সঙ্গে গ্রামে দাদুবাড়ি বেড়াতে এসেছি। বনজঙ্গলে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছি। মেঠোপথে খালি পায়ে হাঁটছি। ঘাসে ঘাসে এখনো শিশির লেগে আছে। শিশিরকণা বারবরে ধুয়ে দিচ্ছে পা।
পরীক্ষা শেষ। ইশকুল ছুটি। হোমওয়ার্ক নেই। গাড়ির কোনো হর্ন নেই। শব্দদূষণ নেই। বায়ুদূষণ নেই। বাতাসে কান পাতলেই পাখিদের কিচিরমিচির গান। চারদিকে সবুজ আর সবুজ। রিফাতকে ডেকে বলি, কোথায় যাবি এখন? বাড়ি?
রিফাত বলে, আরে না। চল নদীর কাছে যাই। আমাদের নদীটা ছোট। নদীর পানি এখন অনেক কমে গেছে। চল দেখি মাছ ধরা যায় কি না?
নদীর তীরে যেতেই দেখি এলাহি কাণ্ড। পানি সেচে অনেকেই মাছ ধরার প্রস্তুতি নিচ্ছে। আমি আর রিফাত সেই দলে ভর্তি হয়ে যাই। তড়িঘড়ি করে জলে নেমে পড়ি।
সারা গায়ে কাদা লেগে যাচ্ছে।
যাক, আজকে না হয় বাড়ি ফিরে মায়ের বকুনি খাব!
"