হাফিজ মুহাম্মদ

  ১৩ জানুয়ারি, ২০২৪

রাজপুরীর গল্প

অনেক দিন আগের কথা?। এক রাজ্যে ইরাবতী নামের এক নদী ছিল। রাজা চন্দ্রশেখর সেই রাজ্য পরিচালনা করতেন। ফলে কোনোপ্রকার বিশৃঙ্খলা ছিল না। তা হবেই-বা কীসের জন্য? কারণ ওই রাজার পূর্বপুরুষরা ছিলেন সৎ ও ন্যায়পরায়ণ। রাজ্যের উজির-নাজির, পায়-পয়াদা, প্রজা- সবাই রাজার হুকুম তামিল করত। আর যারা আইন অমান্য করত, তাদের ভয়ানক শাস্তি দেওয়া হতো?। গ্রামে গমবি নামের এক প্রজা ছিলেন একটু ব্যতিক্রম। সে ছিল নাছোরবান্দা। রাজ্যের শাসনব্যবস্থা কোনোভাবেই পালন করত না। উল্টো জনগণকে বিভ্রান্ত করে চলত। রাজদরবারে প্রায়ই তার নামে অভিযোগ আসত। এক দিন রাজা কর্মচারীদের ডেকে পাঠালেন তাকে তুলে আনতে। কারণ এবার তার উচিত শিক্ষা হবে? যাকে বলে, ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড!

যেই কথা, সেই কাজ। গমবিকে হাজির করা হলো। মৃত্যুদণ্ড দেওয়ার আগেই তাকে একবার জিজ্ঞেস করা হলো- আচ্ছা, তোমার শেষ ইচ্ছা কী? আর তুমি কী খেতে চাও? তখন গমবি জবাব দেয়- আমার শেষ ইচ্ছে ইরাবতী নদীতে গোসল করতে চাই! আর একটু কোরমা, পোলাও, পায়েস খেতে চাই। অবশেষে রাজার লোকরা সব বন্দোবস্ত করল। তাকে যখন ইরাবতী নদীতে গোসল করতে নিয়ে যাওয়া হয়, তখন ঘটল এক অ-ঘটন? ডুব দেওয়া মাত্র আর ফিরে এলো না সে! একদম নিরুদ্দেশ হয়ে গেল...। ব্যাপার কী? রাজার লোক এবার কিছুটা হতাশ হলো! সারা দিন কেটে গেল আর কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি। তারা ভাবল বোধ হয় পানিতে ডুবে মারা গেছে! যাই হোক, তা অনেক ভালোই হয়েছে? এবার রাজাকে বলব, আপনার হুকুম যথাযথভাবে পালন করেছি। তারা রাতের বেলা রাজাকে জানাল- আমরা ফাঁসির কাজ সম্পন্ন করেছি, জাহাপনা...। রাজ্যে আর কোনো সমস্যা নেই? আপনি এখন টেনশনমুক্ত। এবার ঠিক আগেরমতো রাজ্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা কাজ শুরু হলো।

এদিকে প্রায় ছ-মাস কেটে গেল। আর গমবি ফিরে আসেনি। আসবে বা কীসের জন্য? ইরাবতী নদীর কাহিনি একটু ভিন্ন বটে! শোনা যায়- সেখানে নাকি মাঝে মাঝে ভুতুড়ে ঘটনা ঘটে, তাই বলতে গেলে অনেক কথা। যাই হোক, গমবি যখন গোসল করতে গিয়েছিল, তখন জলকন্যারা তাকে তাদের দেশে নিয়ে যায়। সেখানে কিন্তু এই দুনিয়ার মতো আরেক দুনিয়া আছে। এবার গমবি সব ঘুরে-ফিরে দেখল। আর মনে মনে কিছুটা ভয়ও পেল। বুকটা যেন দুরু-দুরু কাঁপছে। প্রথমে জলকন্যারা তাকে স্বাগতম জানিয়ে বলল- ভয় পাওয়ার কিছু নেই? তুমি এখন থেকে আমাদের রাজ্যে থাকবে। আমরা প্রতি বছর দুনিয়া থেকে যেকোনো একজনকে এনে আমাদের রাজ্যে সদস্য বানাই। যারা ভালো ব্যবহার করে তারা এখানে থাকে। আর যারা খারাপ ব্যবহার করে তাদের শাস্তিস্বরূপ আবারও দুনিয়াতে পাঠিয়ে দিই। এবার জলকন্যারা তাকে রাজ-দরবারে নিয়ে গেল। অবশেষে তাদের দেশের নাগরিকত্ব পেল। প্রায় দুমাস কেটে গেল?। তবে বেশ, কষ্টের দুনিয়া থেকে একটু সুখেই আছে! কিন্তু সুখ কী বেশি দিন কপালে সয়? না...! এক দিন গমবি আবারও দুনিয়ার মতো একটা ভুল করে ফেলল। তার ভুল ছিল মিথ্যা কথা বলা।

গমবি হাতজোড় করে ক্ষমা চাইল, কিন্তু তাকে কোনোভাবেই ক্ষমা করা হলো না। বরং আবার জলকন্যাদের দেশ থেকে দুনিয়ায় বের করে দিল। গমবি এবার হতাশ হয়ে পড়ল এবং ডুকরে কাঁদতে লাগল। যেন ছোটখাটো একটা নদী বয়ে গেল। তখন কোনো উপায় খুঁজে পেল না। অবশেষে রাজা চন্দ্রশেখরের রাজপুরীতে হাজির হলো। সবাই বলতে লাগল, গমবি ফিরে এসেছে। রাজা কিছুটা বিচলিত হয়ে বলল- আচ্ছা, তোমাকে তো ফাঁসিতে দণ্ডায়মান করা হয়েছে? আর তুমি কীভাবে ফিরে এলে? তখন গমবি ঘটনাগুলো সাফ সাফ খুলে বলল। অবশেষে রাজার কাছে ক্ষমা চাইল। দুনিয়াতে সে সুন্দরভাবে জীবনযাপন করতে চায়। এবার গমবির কথা শুনে রাজার কিছুটা দয়া হলো। সঙ্গে সঙ্গে সব মঞ্জুর! তবে ঘটনা এখানেই শেষ নয়? কারণ রাজার কিছু কর্মচারী রাজাকে মিথ্যা বলেছে; তারা যেন গমবিকে ফাঁসি দিয়েছে? এই মিথ্যা বলার অপরাধে রাজা তাদের কঠোর শাস্তি দিল। অবশেষে রাজপুরীতে শান্তি ফিরে এলো।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close