আলমগীর কবির

  ২৬ নভেম্বর, ২০২২

দুষ্ট ছেলের গল্প

গাঁয়ের সবচেয়ে দুষ্ট ছেলে, দস্যি ছেলে অয়ন। বিকেলবেলা খেলার মাঠে রাকিব, সাজু, রবিনরা ফুটবল খেলছিল। অয়নের কাছে বলটা আসতেই সে হাত দিয়ে ধরে ফেলে।

রাকিব এগিয়ে আসে।

বলটা দে।

আমাকে খেলায় নিতে হবে।

আজ আমরা ঠিক করেছি তোকে খেলায় নেব না। তুই অযথা প্রতিদিন ঝামেলা বাড়াস।

কী? আমাকে খেলায় নিবি না!

না।

দাঁড়া!

হঠাৎ করে রেগে যায় অয়ন। অয়নের হাতে ছিল খেজুরের কাঁটা। হয়তো সে এটা করবে বলে প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল। কাঁটা দিয়ে বলটা ছিদ্র করে দেয় অয়ন।

এতে বেঁধে যায় হট্টগোল।

ক্লাস টেনের জীবন ভাই এসে শেষমেশ ঝামেলা মিটিয়ে দেন।

এমনি দুষ্ট সে। কারো গাছের ফল পেড়ে খায় দল বেঁধে। কারো পুকুরের মাছ ধরে ছিপ ফেলে। তার মা-বাবার কাছে প্রতিদিন কোনো না কোনো অভিযোগ আসে। বাবা-মা অনেক বোঝান, শাসন করেন কিন্তু তার কোনো পরিবর্তন নেই।

কিছুদিন পরের ঘটনা।

অয়নের একমাত্র মামা তাদের বাড়িতে বেড়াতে আসবেন ঢাকা থেকে। ট্রেনে করে আসবেন তিনি। মামাকে রিসিভ করতে তাই স্টেশনে এসেছে অয়ন।

ট্রেন স্টেশনে আসতে আধাঘণ্টা লেট হবে। সে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে।

অয়ন চারপাশে তাকিয়ে দেখতে থাকে। স্টেশনে খুব ভিড়।

ছোট ছোট জটলা বেঁধে কেউ বসে আছে। কেউ দাঁড়িয়ে।

তার মধ্যে দুটি ছেলে অয়নের দৃষ্টি কাড়ে। একটি ছেলে তার বয়সি। অন্যটা তার চেয়ে ছোট হবে। ছেলে দুটি স্টেশনে কুলির কাজ করে।

অয়ন তাদের কাছে এগিয়ে যায়।

ছোট ছেলেটি কান্না করছে। সকাল থেকে সে এক শ টাকা উপার্জন করেছিল, সেই টাকা সে ভিড়ের মাঝে হারিয়ে ফেলেছে।

বয়সে বড় ছেলেটা তাকে সান্ত¡না দিতে থাকে। কিন্তু তার মুখে আর হাসি ফুটে না।

বয়সে বড় ছেলেটা কিছুক্ষণ ভেবে পকেট থেকে এক শ টাকা বের করে ছোট ছেলেটির হাতে দেয়। ছেলেটির মুখে এবার হাসি ফুটে।

অয়ন এ ঘটনাটি দেখে অবাক হয়ে যায়। একজন টোকাই ছেলে অন্যের মুখের হাসির জন্য নিজের টাকা দিয়ে দিচ্ছে।

অয়ন গভীরভাবে ভাবতে থাকে বিষয়টা।

সে নিজে কতজনের মন খারাপের কারণ হয়েছে।

অয়ন মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে, সে আর কখনো দুষ্টুমি করবে না। কারো কোনো ক্ষতি করবে না। পড়াশোনায় মনোযোগী হবে। তাকে কেউ আর কোনো দিন দুষ্ট ছেলে বলবে না। বলতে পারবে না।

ওই তো ট্রেনের বাঁশি বেজে উঠল। অয়নের মুখেও হাসি ফোটে। এই ট্রেনেই তার মামা আছেন। তার ম্যাজিক-মামা। মামা নিশ্চয় তার জন্য কোনো না কোনো মজার খেলনা এনেছেন। সে এখন থেকে আর কারো ক্ষতি করবে না। এই কথা মামা শুনলে কতই না খুশি হবেন!

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close