মো. জাহাঙ্গীর আলম

  ০৪ মে, ২০১৯

ঝড়ের দিনে

লাবিব ও হাবিব আপন মামাতো ভাই। দুজনেই এবার ক্লাস থ্রিতে পড়ে। লাবিব খুব ভালো ছাত্র। হাবিবও ভালো ছাত্র। দুজনে দলবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। প্রতিদিন দুজনে একই সাথে স্কুলে যায় এবং ছুটির পরে বাসায় আসে। লাবিবের বাবার একটা মালামালের দোকান আছে। সেই দোকান দিয়ে ব্যবসা করে সুন্দরভাবে সংসার চলে। লাবিবের একটি ছোট বোন আছে। লাবিব স্কুল থেকে আসলে বোনকে কোলে নেয় আর মা বাড়ির কাজকর্ম সারে। ছোট বোনকে কোলে নিয়ে মজার মজার ছড়া বলে আর বোনকে হাসিখুশিতে রাখে। যাতে মায়ের কাজের কোনো সমস্যা না হয়। মা কাজকর্ম সেরে নিশুকে কোলে নিলে লাবিব একটু পড়তে বসে। আর না হয় বাড়ির পাশে মাঠে একটু খেলতে যায়। ওদিকে হাবিব একটু অন্য টাইপের, সে খালি খেলাধুলা নিয়ে ব্যস্ত থাকে। আর হাবিবের বাবা একজন সরকারি কর্মচারী। চাকরির সুবাদে ঢাকায় থাকে। মাঝেমাঝে ছুটি পেলেই চলে আসে গ্রামে ছেলের টানে। প্রতিদিন রাতে ফোন করে শুনে হাবিব স্কুলে গিয়েছে কি না, খাওয়া দাওয়া করেছে কি না। আর হাবিবের আম্মু খুব ভালো মানুষ কিন্তু বড়লোকের মেয়ে তো একটু মডেল করে চলাফেরা করে। ছেলে কোথায় কী করে তার তেমন খোঁজখবর রাখে না। সকাল হলেই হাবিব ছুটে যায় লাবিবের বাড়িতে। দৌড়ে গিয়ে দেখে হাবিব সকালে উঠেই হাত-মুখ ধুয়ে পড়তে বসেছে। একটু পড়ে দুজনে হাঁটতে শুরু করে। সারা রাত প্রচন্ড গরম। তাই সকালবেলা হিমহিম শীতল বাতাস। নানান ফুল ফলের ঘ্রাণে মুখরিত। ঠিক সেই সময় একটু হাঁটতে ভালো লাগে। অনেক লোকে সেই সময়ে রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে। মসজিদের মুসল্লিরাও নামাজ শেষে বাসায় ফিরতে একটু রাস্তায় হাঁটাহাঁটি করে।

হাবিব ও লাবিব প্রকৃতির দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হয়।

প্রতিদিনের মতো লাবিব ও হাবিব সকালবেলা খাওয়া-দাওয়া করে স্কুলে গেল। স্কুলে গিয়ে ক্লাস শেষ করে টিফিনের সময় দুজনে একই সাথে টিফিন খায়। স্কুল ছুটি হলে বাসায় আসার সময় সেদিন প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়ে যায়। লাবিব ও হাবিব খুব ভয় পেয়ে যায়। একটা দোকানে আশ্রয় নেয়। ঝড় একটু কমে গেলে বাড়ির দিকে রওনা করে। ওদিকে লাবিবের মা-বাবা অনেক টেনশন শুরু করে দেয় ছেলে দুটি কোথাও আটকা পড়ল কি না। কিন্তু লাবিব ও হাবিব বৃষ্টিতে ভিজেই বাড়ির দিকে রওনা করে। পথের মধ্যে দেখে অনেক কাঁচাপাকা আম পড়ে আছে। হাবিবের মন আর মানল না, সে দৌড়ে গিয়ে আম কুড়াতে শুরু করলো। কিন্তু লাবিব সাহস পাচ্ছে না অন্যের আমে হাত দিতে। হাবিব বলছে, আরে ভাই আমরা এমনিতেই বৃষ্টিতে ভিজেছি, মা তো বাড়িতে গেলে বকা দেবেই কিন্তু আমরা যদি আম নিয়ে যাই না, তা হলে আমাদের আর বকা দেবে না। লাবিব ততটা বুঝতে পারেনি। হাবিবের কথায় আম কুড়াতে শুরু করে দেয়। দুজনে ব্যাগভর্তি করে অনেক কাঁচাপাকা আম দিয়ে। আম নিয়ে দুজনে খুব খুশি হাসতে হাসতে বাড়িতে আসে। প্রথমে হাবিব বাসায় পৌঁছে মায়ের কাছে গিয়ে বলে দেখো আমি কী এনেছি। মা আম দেখে খুব খুশি হয়। হাবিবের শরীর মুছে দেয় এবং ভালো জামা পরিয়ে দেয়।

লাবিব বাড়িতে ঢুকে মাকে ডাকে, মাগো তুমি কোথায়। মা লাবিবের ডাক শুনে দৌড়ে গিয়ে লাবিবকে জড়িয়ে ধরে বলে বাবা তুমি ঝড়ের সময় কোথায় ছিলে। তোমার কোনো কষ্ট হয়নি তো, তুমি ভয় পেয়েছো না কি বাবা। লাবিব, না মা আমি আর হাবিব আসার পথে কালু চাচার দোকানের কাছাকাছি আসামাত্রই প্রচন্ড ঝড় শুরু হয়ে যায়। আমরা দুজনে ঝড়ের সময় কালু চাচার দোকানেই ছিলাম। ঝড় কমে গেলে আমরা একটু বৃষ্টিতে ভিজে ভিজে বাড়িতে আসার সময় দেখো মা, কী এনেছি। মা, কী এনেছো বাবা। লাবিব খুব খুশি। ব্যাগ খুলে মাকে দেখাচ্ছে। ব্যাগভর্তি কাঁচাপাকা আম। মা দেখে চমকে গেলো। বললো, বাবা তুমি এগুলো কোথায় পেলে। লাবিব দেখে মায়ের মুখটা কালো হয়ে গেছে। মা আর কোনো কথা বলছে না। লাবিব মাকে ডাকছে, মাগো ও মা তুমি কথা বলছো না কেন। মা এবার রেগে বলছে, লাবিব তুমি যেখানে আম পেয়েছো, ঠিক সেখানেই রেখে আসবে। কারণ আমাদের ইসলাম ধর্মে বলা আছে, কারো জিনিস না বলে নেওয়া যাবে না। রসুল (স.) বলেছেন, কারো জিনিস না বলে নিয়ে আসা বা খাওয়াকে চুরি করে খাওয়ার সমতুল্য। লাবিব মায়ের মুখে এমন কথা শুনে সত্যি অবাক হয়ে যায় এবং শপথ করে বলে, মাগো আমি আজ থেকে আর কোনো দিন কারো জিনিস না বলে নেবো না। কারো ফলফলান্তি, টাকা-পয়সা রাস্তাঘাটে পড়ে থাকলেও আমি হাত দিয়ে ছুঁয়েও দেখবো না, মা তুমি আর রাগ করে থেকো না। আমি এখনি আমগুলো যেখানে পেয়েছি, সেখানে রেখে আসবো। লাবিবের কথা শুনে মা এবার খুব খুশি হলেন। আর কোনোদিনও এমন কাজ করবে না, কারো জিনিস না বলে হাত দেবে না। তোমার কী খেতে মন চায়। আমাকে বলবে, আমি তোমার বাবাকে বলে কিনে দেওয়ার চেষ্টা করব। এবং বললেন বাবা আমি দোয়া করি আল্লাহ্ তোমাকে অনেক বড় করুন। সরল-সহজ পথে পরিচালিত করুন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close