শরীফ সাথী

  ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭

পিকনিক

অজপাড়া গাঁয়ের নাম পাটাচোরা। তিন দিকে কুলকুল রবে নদীর স্রোত গ্রামটিকে ঘিরে আছে। গ্রামের ভেতর দিকে খাল পেরিয়ে মাটির রাস্তা শহরমুখী। নৌকায় পেরিয়ে উপরে উঠলেই পাশের গ্রামের পাকা রাস্তা। শ্যামল মাটির ঘ্রাণে সবুজ অরণ্যে পাখির গানে মুখরিত সারা গ্রাম। গ্রামের দখিন কোণে দুই নদীর মিলনস্থলে সবুজ সমারোহে ছাওয়া মায়াবতী মমতাময় তীরধরা দ্বীপ। তীরধরার কাছেই মাথাভাঙ্গা নদীর পাশে রুপালি জলের ক্ষুদ্র ঢেউয়ে দোল খাওয়া সবুজ তীর ঘেঁষে পাটাচোরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়। শীর্ষ ও সাহিত্য এ স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ওরা দুজন। স্কুলে এসেই শীর্ষ সাহিত্যকে বলল, কাল তুই পিকনিকে না গিয়ে হুট করে নানার বাড়ি গেলি কেন? সাহিত্য মনের গহিন কোণে সব ব্যথা জমা রেখে মুচকি হাসার চেষ্টা করল। শীর্ষ বলল, জানিস, পিকনিকে গিয়ে কত আনন্দ করলাম? কত কিছু দেখলাম? সাহিত্য বলল, সত্যিই, ঐতিহাসিক মুজিবনগর খুব সুন্দর না?

শীর্ষ সানন্দে বলল, সুন্দর মানে কী? ওখানে না গেলে বাংলাদেশটা কী তাইতো অজানা থেকে যেত। সাহিত্য বলল, তাহলে বল্ না শীর্ষ, ঐতিহাসিক মুজিবনগর সম্বন্ধে? খুব শুনতে ইচ্ছে করছে। বল্ না শীর্ষ? শীর্ষ মনের স্মৃতির পাতা উল্টিয়ে সব বলতে শুরু করল। প্রথমে স্কুলে আসার আগে তোদের বাড়ি হয়ে তোর মাকে জিজ্ঞাসা করলাম, সাহিত্য কই খালাম্মা? তোর মা জানাল, তুই সকালেই নানার বাড়ি গেছিস? মনটা ভার করে স্কুলে এলাম। সবাই স্কুল থেকে দল বেঁধে (ছাত্র-ছাত্রী) নৌকায় করে পার হয়ে নদীর ওপারে পাকা রাস্তায় ভাড়া করা বাসে উঠলাম। বাসটি খুব করে সাজানো, যা দেখলেই বোঝা যায়, স্কুল থেকে সবাই মিলে পিকনিক করতে যাচ্ছে। সবাইকে গুছিয়ে নিয়ে ধীরে ধীরে চলল বাস ঐতিহাসিক মুজিবনগরের দিকে। আর আমরা সবাই খুশি। স্কুলের বার্ষিক পিকনিকে যাচ্ছি কত আনন্দ! যেতে যেতে দু’চোখ ভরে অনায়াসে দেখলাম পাকা রাস্তার দুই ধারে গাছ-গাছালিতে ভরা, নিদারুণ বৈচিত্র্যময় সবুজে গড়া। দূরে সবুজ শ্যামল মাঠের কী অপরূপ হাসি মুখ, সুখ-সুখ অনুভূতি ছড়িয়ে। দূরের আকাশ মায়াবী নীল চাদরে মুড়িয়ে, ভালো লাগা ভালোবাসার মায়া চারপাশে জড়িয়ে। সব পথ ধীরে ধীরে পাড়ি দিয়ে বৈচিত্র্যময় ঐতিহাসিক মুজিবনগর স্পটে ঢুকতেই সুউচ্চ গেট পেরিয়ে বাস পার্কিংয়ে দাঁড়াল। নামতেই চোখে পড়ল অসংখ্য বাসের সারি, ট্রাক, ছোট ছোট যানবাহনে ভরা। বিশাল আ¤্রকাননে লোকে-লোকারণ্য। প্রথমে সড়কের বামদিকে মনোরম লোকেশনে সজ্জিত বিশাল পার্ক। বিনোদনের জন্য নিবেদন করেছে আল্পনায় আঁকা ফুলেল ছায়ায় গোলটেবিলে বসার স্থান।

দু’চোখ ভরে সবাই মিলে নয়নাভিরাম প্রকৃতি দেখা, শুধুই দেখা আর অম্লান করে রাখা প্রকৃতির মায়াবী সৌন্দর্য। মুজিনগরের মূল বাউন্ডারির ভেতরে আমবাগানের ছায়া। ছায়ার বুকে মায়া সুখে আগলে রেখেছে মানুষের সমাগম। পাখিদের সুমিষ্ট গানে মুখরিত সারা মুজিবনগর। আমবাগানে পিকনিক করতে আসা মানুষগুলোর জন্য রয়েছে দলে দলে গোল চত্বর বানিয়ে বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে মনের সুখে গান গাওয়ার উন্মুক্ত নিরিবিলি পরিবেশ। হই-হুল্লোড়, আনন্দ-উৎসব সর্বক্ষণ মুজিবনগরকে মাতিয়ে রেখেছে। অপরূপভাবে সাজানো মুজিবনগর রূপের ঝলকে, পলকে পলকে, স্মৃতির পটভূমি তৈরি করে চলেছে। কী নেই ওখানে? শহীদ মিনারের দর্শনীয় স্মৃতিস্তম্ভ। চোখ কি ফেরানো যায়? জাদুর বাক্স থেকে একে একে বের হবে যতদূর তাকাবে, যতদূর যাবে তার প্রতিটি প্রান্তরই মুখরিত আলোড়িত আলোচিত-আন্দোলিত আবেগী জাদুর মতো মনে হবে। চারপাশে সজ্জিত বিভিন্ন নকশার ভবন। পোস্ট অফিস, থানা, মসজিদ, পিকনিকে আসার লোকজনের জন্য রান্নাবান্না করার স্থান। কী নেই মুজিবনগরে? হরেক রকম ফুলে ফুলে সাজানো বিস্তীর্ণ অরণ্যভূমি। হেলিকপ্টার ওঠা-নামার স্থান। আর সবচেয়ে অবাক করার স্থান বাংলাদেশই তো রয়েছে তার পুরোটা রূপের বর্ণনা সঙ্গে নিয়ে। বিশাল আকৃতির বাংলাদেশের মানচিত্র। কী আঁকানো নেই সেখানে? বঙ্গোপসাগর, ভেতরে সৌন্দর্যের বিবরণ, নদী-নালা। কোন জেলায় কেমন মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস তা নিদারুণভাবে বর্ণনা করে ছবিতে প্রকাশ। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে দোলা দিচ্ছে একেকটি মূর্তির প্রতিকৃতি। দর্শনীয়ভাবে ফুটিয়ে তোলা প্রতিটি প্রতিচ্ছবি। কিভাবে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছি। পাকিস্তানিদের অনাচার, অবিচারের লোমহর্ষক হৃদয়বিদারক চিত্র। রাষ্ট্রগঠনের প্রথম চিত্রায়িত ছবিসহ অসংখ্য বিবরণী ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সারা মানচিত্র ঘিরে। বাস্তবতার জ্বলজ্বলে প্রতিচ্ছবি দেখলেই যেন বলে ওঠেÑএই আমার সই হবি? জানিস সাহিত্য, তোকে একটি কথা না বলে আর পারছি না। ওখানে এমনভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মূর্তিটি স্থাপন করা হয়েছে, যা দেখলেই স্মৃতির দুয়ার খুলে যায়, হৃদয়ের কোণে দোলা দেয়। প্রতিটি শিরায় রক্তের অবাধ চলাচল বেড়ে যায়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist