মুহাম্মদ শফিকুর রহমান

  ২২ নভেম্বর, ২০২২

ফাতেহার নান্দনিক শিল্পকর্ম

কাচ বা প্লাস্টিকের বোতল যেটাই হোক। ব্যবহারের পর আমরা ফেলে দেই। অথচ এই বোতলগুলো পুনরায় ব্যবহার করা যায়। বোতল থেকেই অপূর্ব সব নজরকাড়া শিল্পকর্ম। ঘরের শোভা বৃদ্ধিতে যার ভূমিকা মোটেও কম নয়। এমনটা আমরা না ভাবলেও তিনি ভেবেছেন। বোতলে তার শিল্পকর্মের সুনাম দেশ ও দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছে। কিছুটা ভিন্নধর্মী এই শিল্পকর্ম এখন তার আয়ের মাধ্যম। সফল এই গুণী শিল্পীর নাম ফাতেহা আফরোজ। ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটি, চট্টগ্রাম থেকে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিএসসি শেষ করেছেন কিছুদিন হলো। চট্টগ্রামেই পরিবার নিয়ে তার বসবাস।

ছোটবেলা থেকেই ছবি আঁকার প্রতি তার আগ্রহ। এই আগ্রহ বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমেই বেড়েছে। কখনো ভাটা পড়েনি। কারণ মা-বাবার উৎসাহ পেয়ে এসেছেন সব সময়। কোথাও কোনো সমস্যা হলে মা-বাবাকে পাশে পেয়েছেন। মায়ের কাছে তার ছবি আকার হাতেখড়ি। কিছুদিন আর্ট স্কুলেও পড়েছিলেন।

২০১৮ সালের মাঝামাঝি সময়। তখন তিনি এইচএসসি সেকেন্ড ইয়ারে পড়েন। তুর্কিতে বসবাস করা বাংলাদেশি এক মেয়ের ক্যালিগ্রাফির সফলতা তার চোখে পড়ে। তখন ফাতেহার মাথায় এভাবে ক্যালিগ্রাফির চিন্তা আসে। গুগল ঘেটে নিজে নিজেই চেষ্টা চালিয়ে যান। কৌতূহলের বসে নিজের ক্যালিগ্রাফি ফেসবুকে পোস্ট দেন। ওমনি মানুষ তা নেওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ে। কেউ কেউ ক্যালিগ্রাফি কেনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে। ফাতেহা তাদের না করতে পারেননি। এভাবেই তার আর্ট বিক্রির শুরু।

ফাতেহা বলেন, একসময় ভাবলাম ক্যালিগ্রাফি তো অনেকেই করে। ভিন্ন কিছু করা যায় কি-না। এই ভাবনা থেকেই বোতলে শিল্পকর্ম তৈরির পথে পা বাড়ানো। ফাতেহাকে প্রথম ছবি আঁকার সরঞ্জাম কেনার জন্য তার মা পাঁচ হাজার টাকা দেন। ভিন্নধর্মী তার আর্টের মাধ্যম সবার নজর কেড়েছে। সাদামাটা বোতল, জার, চায়ের কেটলি, মগ, গ্লাস ইত্যাদি তার তুলির ছোঁয়ায় অপূর্ব হয়ে ওঠে। তিনি গত চার বছরে প্রায় ১৫০টির ও বেশি কাজ করেছেন। ফেসবুকে তার পেজের নাম ARONA এখানে অর্ডার দেওয়া যায়। প্রতি মাসে গড়ে তার আয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। প্রথম ইনকামের টাকায় তিনি বাবাকে মোবাইল, মাকে শাড়ি আর পরিবারের সবাইকে টুকটাক উপহার দেন। নিজের কাজ সম্পর্কে ফাতেহা বলেন, প্রতিনিয়ত কাজ শিখেছি, নিজেকে ইম্প্রুভ করার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমি প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু শেখার চেষ্টা করি।

বোতল অথবা জার। এসবের সাইজ বিভিন্ন রকম হয়। ফলে নানা রকম ডিজাইন ফুটিয়ে তোলা যায়। ডিজাইনে বৈচিত্র্য আনা যায়। বোতলের কাজগুলোর প্রতি মানুষের অনেক আগ্রহ। তিনি জানান, পুরোনো বোতল সংগ্রহ করেন। তারপর ধুয়ে রোদে শুকিয়ে নেন। বোতলকে রঙিন করতে তিনি গ্লাস কালার, দড়ি, টিসু, স্প্রে, পুঁতি, পাথর, এক্রেলিক কালার ইত্যাদি ব্যবহার করেন। যারা একটু সৌখিন মানুষ। ঘর সাজাতে পছন্দ করেন। তারা এগুলোর প্রধান ক্রেতা বলে তার কাছে জানা যায়। বোতল দিয়ে তিনি ফুলের টব, গাছ রাখার টব, শো-পিস ইত্যাদি তৈরি করেন। অনেকেই একটু সবুজ ভালোবাসে। পড়ার টেবিল, খাবার টেবিলে সবুজের উপস্থিতি রাখতে চান। অফিসের ডেস্কে গাছ দেখতে ভালোই লাগে। চোখ ও মনের শান্তি। এসব গাছপ্রেমী তার কাছ থেকে বোতল আর্ট নেন। ৫০০ থেকে শুরু করে দুই হাজার টাকা অবধি তার বোতল আর্টের দাম। বোতলের রং ওঠে যায় না তো? ফাতেহা বলেন, আমার কাজগুলো থেকে রং নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এখন পর্যন্ত এমন কোনো অভিযোগ পাইনি। দেশের বাইরেও গিয়েছে ফাতেহার শিল্পকর্ম। বোতল আর্ট একজন আমেরিকাতে নিয়ে গিয়েছিল তার আত্মীয়কে উপহার দেওয়ার জন্য। কাজগুলো সেখানে সবার মন জয় করে নেয় বলে তিনি জানান। ফাতেহা কাচের বোতল ছাড়াও চায়ের কেটলি, মগ এগুলোতেও কাজ করেছেন। রিকশা পেইন্টের কাজে তার যথেষ্ট সুনাম। এ পর্যন্ত দেশের ১৫টিরও বেশি জেলায় তিনি পণ্য পাঠিয়েছেন।

নিজে একজন ইঞ্জিনিয়ার। পেশার পাশাপাশি শখের কাজগুলোও তিনি অব্যাহত রাখবেন। দেশ বিদেশের বিভিন্ন এক্সিবিশনে তার শিল্পকর্ম প্রদর্শিত হয়। নিজের একক একটা এক্সিবেশন করতে চান তিনি। এটি তার স্বপ্ন। অল্প দিনে নিজের সৃজনশীলতার যতটুকু স্বাক্ষর ফাতেহা রেখেছেন। তাতে এমন স্বপ্ন তিনি দেখতেই পারেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close