মেহেরাবুল ইসলাম সৌদিপ

  ০২ আগস্ট, ২০২২

অদম্য সাহসী নারী ‘পারিশা’

একাই দুই ছিনতাইকারীকে ধরে প্রশংসায় ভাসছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের মাস্টার্সে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থী পারিশা আক্তার। ঘটনার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পরপরই বেশির ভাগ মন্তব্যকারী ওই ছাত্রীর সাহসিকতায় বাহবা দিয়েছেন। এরই মাঝে সবার প্রশংসায় মধ্যমণি হয়ে উঠেছেন পারিশা।

ঘটনাটি রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকার। গত ২১ জুলাই সন্ধ্যার দিকে মিরপুর থেকে বাসে পুরান ঢাকায় যাচ্ছিলেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থী। ফোনে কথা বলার সময় বাসের জানালা দিয়ে ছোঁ মেরে মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয় এক ছিনতাইকারী। বাস থেকে নেমে ছিনতাইকারীকে ধাওয়া করেন ভুক্তভোগী তরুণী। কিন্তু পালিয়ে যায় সেই অভিযুক্ত। এরই মাঝে ওই শিক্ষার্থী ঘটতে দেখেন আরেক ছিনতাইয়ের ঘটনা। ব্যাগ নিয়ে পালাচ্ছিল আরেক ছিনতাইকারী। হাতেনাতে তাকে ধরে ফেলেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী। মাটিতে ফেলে নিজের মোবাইল হারানোর রাগ ঝাড়তে দেখা যায় ব্যাগ ছিনতাইকারীর ওপর। তখন আশপাশে জড়ো হয় বেশ কয়েকজন। ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে থামানোর চেষ্টার পরও থামানো যায়নি। যেখানে নিজের ফোন হারিয়ে নিজেই দিশাহারা, সেখানে অন্য একটি ছিনতাইয়ের ঘটনায় সাহসী ভূমিকা প্রশংসায় ভাসছেন তিনি। ওই ছাত্রীর অসীম সাহসিকতায় প্রথমে ধরা পড়ে ছিনতাইকারী। শুধু তাই নয়, ছিনতাইকারীর আরেক সহযোগীকেও কৌশলে ধরিয়ে দেন এই শিক্ষার্থী। দুই ছিনতাইকারীকে পাকড়াও করার পর পুলিশে ধরিয়ে দেন পারিশা।

ওই ঘটনার পর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী মানসিকভাবে ভেঙে পড়লেও পরবর্তীতে সামনে এসে নিজেই বলেন সেই দিনের ঘটনা। একসঙ্গে দুই ছিনতাইকারী ধরিয়ে দেওয়ার পরও থানা পুলিশের কাছ থেকে সহায়তা না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ভুক্তভোগী ওই ছাত্রী। তার বক্তব্য, একজন ছিনতাকারীকে ধরে তার কাছ থেকে তথ্য আদায় করে আরেকজনকে ধরেছেন তিনি। দুজন ছিনতাইকারীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়েছেন তিনি। এরপরও যদি পুলিশ তার ফোন উদ্ধার করতে না পারে, তবে এর চেয়ে বড় ব্যর্থতা আর কিছুই হতে পারে না।

রাজধানীতে হরহামেশা ছিনতাইয়ের ঘটনার মধ্যে এক নারীর এমন সাহসী কাজ দেখে বাহবা দিতে দেখা যায় অনেককেই। যদিও শুরুতে ভুক্তভোগীর সহায়তায় এগিয়ে আসেননি কেউ।

ছিনতাইকারী শায়েস্তা করা সেই নারীর অনুপ্রেরণা সেই প্রধানমন্ত্রী। তার ভাষ্যমতে, প্রধানমন্ত্রীর শক্তিতেই বলীয়ান সব নারী। নিজের সাহসিকতায় সবার বাহবা পাওয়ার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, সাহসী নারী তো আমাদের প্রধানমন্ত্রী। তিনি একাই দেশ চালাচ্ছেন। উনার শক্তিতেই বলীয়ান সব নারী। উনি সাহসী নারী। উনি বিশ্বদরবারে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছেন। সাহস সবার ভেতরেই থাকে। কেউ দেখান, কেউ দেখান না। দেখানোটা উচিত, দরকারও। এই ছিনতাইকারী, এই সন্ত্রাসগুলোকে রুখে দিতে এগুলোর প্রতি সোচ্চার হওয়ার জন্য আমাদের সাহসিকতা দেখাতেই হবে। নারী-পুরুষ সবাইকে সাহসিকতা দেখাতে হবে। সবাই সবাইকে একটু সহযোগিতা করুন। আমি যখন ফোনটা হারাই, সেখানে ৫০-৬০ জন মানুষ ছিল। উনারা চাইলেই ছিনতাইকারীকে ধাওয়া দিতে পারত। কিন্তু কেউ আমাকে তখন সাহায্য করেনি। তারা শুধুই ভিডিও করছিল। একটু আগেও আমাকে কেউ সাহায্য করেননি, এখন সবাই ভিডিও করছেন। সবার বিপদে নারী-পুরুষ সব একত্রে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান পারিশা।

একাই দুই ছিনতাইকারীকে পুলিশে ধরিয়ে দিয়ে আলোচিত হয়ে ওঠা পারিশা আক্তারকে এরই মধ্যে সম্মাননা ও উপহার প্রদান করে ইয়ামাহা রাইডার্স ক্লাব বাংলাদেশ। পারিশার সাহসী ও বুদ্ধিদীপ্ত আচরণ নতুন প্রজন্মের জন্য স্মৃতি আর তরুণ নারীদের অনেক অনুপ্রেরণা দেওয়ায় সম্মাননা স্মারক প্রদান করে বাইক রাইডার সংগঠনটি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close