নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ ডিসেম্বর, ২০১৭

১৪ দলের সভা

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধিতে শরিক দলগুলোর উদ্বেগ

বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া কোন কোন দেশে অর্থপাচার করেছেন, তার পূর্ণ তদন্ত দাবি করেছে কেন্দ্রীয় ১৪ দল। গতকাল সোমবার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৪ দলের এক সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি তুলে ধরেন জোটের সমন্বয়ক আওয়ামী লীগ নেতা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এদিকে বৈঠকে চাল-পেঁয়াজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জোটের শরিক দলগুলো। আর দুর্নীতি নিয়ে খালেদা জিয়ার প্রতি খোলা চ্যালেঞ্জ ছুড়েছেন জোটের শরিক জাসদ সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বৈঠক শেষে নাসিম বলেন, বিএনপি দুর্নীতির মহাকাব্য রচনা করেছিল হাওয়া ভবন তৈরি করে। খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে যে দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, তা অনুসন্ধান করতে ১৪ দল আজকের (গতকাল) বৈঠক থেকে দাবি জানাচ্ছে। জোটের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে দাবি জানানো হয়, খালেদা জিয়ার সব দুর্নীতির তদন্ত করে জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে, তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় কোথায় কোথায় অর্থপাচার করেছেন, তা জাতির সামনে তুলে ধরতে হবে। এই অর্থ পাচারের সঙ্গে খালেদা জিয়ার পরিবার কীভাবে জড়িত আছে, তা-ও সামনে আনতে হবে। বিচারের আওতায় আনতে হবে।

বিশেষ জজ আদালতে চলা দুর্নীতির দুই মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনে খালেদা জিয়ার বক্তব্যেরও সমালোচনা করেন নাসিম। তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য হলোÑন্যায়বিচারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা, ভূলুণ্ঠিত করা। তিনি বলেন, আদালতে গিয়ে জবানবন্দির নামে অসত্য মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন খালেদা জিয়া। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আক্রমণ করেছেন, এই সরকারকে আক্রমণ করেছেন। প্রকারান্তরে তিনি স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিকে উৎসাহিত করেছেন। তিনি আজ ন্যায়বিচারের কথা বলেন, ক্ষমা চাইতে বলেন। তিনি যেদিন একাত্তরের ঘাতক, পঁচাত্তরের ঘাতকদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছিলেন, সেদিন কোথায় ছিল ন্যায়বিচার? এটা আমাদের প্রশ্ন।

সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের অধীনেই আগামী সংসদ নির্বাচন হবে বলেও জানিয়ে দেন নাসিম। বলেন, সংবিধানের বাইরে যেকোনো পদক্ষেপ ১৪ দল প্রতিহত করবে। এ ব্যাপারে যারা বিতর্ক সৃষ্টি করছে, তারা আসলে প্রধানমন্ত্রীকে হত্যা করার দুরভিসন্ধি লালন করছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

খালেদা জিয়া নির্বাচনকে ভ-ুল করতে চান অভিযোগ করে নাসিম বলেন, এবারের নির্বাচন মন্ত্রী-এমপি বানানোর নির্বাচন নয়, এবারের নির্বাচন হলো জাতীয় অস্তিত্ব রক্ষার। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা রক্ষার। বাঙালি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে যে লক্ষ্য অর্জন করেছে, সে লক্ষ্যকে ধরে রাখার নির্বাচন। এই নির্বাচনে জনগণ ভুল করতে পারে না।

১৪ দল ঐক্যবদ্ধ থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এগিয়ে যাবে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, শেখ হাসিনাকে টার্গেট রেখে বিভিন্ন মহল মাঠে নেমেছে। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য মাঠে নেমেছে।

দুর্নীতি নিয়ে খালেদাকে ইনুর খোলা চ্যালেঞ্জ : সংবাদ সম্মেলনে জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু দুর্নীতি নিয়ে খালেদা জিয়াকে খোলা চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন। সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে খালেদা জিয়ার কালোটাকা সাদা করা এবং তার ছেলে কোকোর ঘুষের টাকা বিদেশ থেকে ফেরত আনার কথা উল্লেখ করে তিনি এ চ্যালেঞ্জ দেন। তিনি বলেন, দুর্নীতির বিষয়ে আমরা খোলা চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি দুটি ঘটনায়। খালেদা জিয়া ক্ষমতায় থাকতে জরিমানা দিয়ে কালোটাকা সাদা করেছেন। তার প্রয়াত ছোট ছেলের নামে ২০ কোটি টাকার বেশি সিঙ্গাপুর থেকে বাংলাদেশে জমা হয়েছে। দুটি ঘটনার সঙ্গে সরকার জড়িত নয়।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে বাংলাদেশে কাজ পেতে বহুজাতিক কোম্পানি সিমেন্স সে সময়ের প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকে ঘুষ দিয়েছে বলে বিদেশের আদালতে প্রমাণ হয়েছে। আর এই ঘুষের ২০ কোটি টাকা ২০১২ সালে সিঙ্গাপুর থেকে ফেরত আনে দুদক।

ইনু বলেন, আমেরিকান সরকারের মামলার মধ্য দিয়ে আরাফাত রহমান কোকোর বিরুদ্ধে রায় হয়েছিল। আজকে আমি ওপেন চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি, মওদুদ ভাইসহ যারা কথা বলেন, তারা কালোটাকা সাদা করল কেন? কোকোর ২০ কোটি টাকা কোথা থেকে এলো তার কৈফিয়ত দিয়ে অন্য কথা বলবেন।

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া ও বিএনপি তাদের শাসনামলে মহা দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছিল। তারা (বিএনপি) দুর্নীতিকে একটা আর্টে (শিল্প) রূপান্তর করে। দুর্নীতি সিন্ডিকেটে রূপ নেয়। তারা মানুষও খুন করে। একাত্তরের খুনি, পঁচাত্তরের বঙ্গবন্ধুর খুনি, একুশে আগস্টের খুনি। জঙ্গি-সন্ত্রাসের খুনিদের আস্তানা হচ্ছে বিএনপি। খালেদা জিয়া সেই সিন্ডিকেটের প্রধান। আমরা দাবি করছি, খালেদা জিয়ার দুর্নীতির সব ঘটনা গভীরভাবে তদন্ত করে দেশবাসীকে জানানো হোক।

ইনু বলেন, সরকার বাংলাদেশকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়-অসাম্প্রদায়িক পথে গণতন্ত্র ও উন্নয়নের ধারায় নিয়ে যাচ্ছে।

দ্র্রব্যমূল্য নিয়ে উদ্বেগ : বৈঠকে চাল ও পেঁয়াজের মূল্য নিয়ে অধিকাংশ জোট নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। জাতীয় পার্টি (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, বৈঠকে দেশের বিরাজমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং কয়েকটি দ্রব্যের অতি মূল্য নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, আমাদের দেখতে হবে কেন এ সময়ে দ্র্রব্যের সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকার পরও দাম বৃদ্ধি পেল। তা যথাযথভাবে জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি বলেন, বিভিন্ন পৌরসভায় অস্বাভাবিক হোল্ডিং ট্যাক্স বৃদ্ধি কাম্য নয়। এটার পুনর্বিবেচনা চাই। সামগ্রিকভাবে বাজার মনিটরিং জোরদার করা এবং দ্রব্যমূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।

তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী বলেন, জেরুজালেমকে ইসরায়েলের রাজধানী করায় আমরা ক্ষোভ ও নিন্দা জানাই। ফিলিস্তিনের পক্ষে আমরা আমাদের অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করছি। বিশ্ব জনমতের ভিত্তিতে এ সমস্যা সমাধানের আহ্বান জানাই।

বৈঠক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার অর্থ পাচার নিয়ে ১৪ দল নেতারা বলেন, খালেদা জিয়ার অর্থ পাচার নিয়ে আমরা কথা বলার চেয়ে সরকারের বিভিন্ন সংস্থা এ বিষয়ে আরো সোচ্চার হওয়া উচিত। সরকারের দায়িত্বশীলদের এসব দুুর্নীতি খুঁজে বের করতে হবে।

সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দীলিপ বড়–য়ার সভাপতিত্বে বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেনÑজাসদের শরীফ নুরুল আম্বিয়া, গণতন্ত্রী পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন, আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ হোসেন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, আবদুস সোবহান গোলাপ, অসীম কুমার উকিল প্রমুখ।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist