হাসান শান্তনু

  ২৪ জুলাই, ২০১৭

তিন কারণে ফল বিপর্যয়

চলতি শিক্ষাবর্ষের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফল বির্পয়ের জন্য বিশেষজ্ঞরা তিনটি কারণ চিহ্নিত করছেন। এগুলো হলো-হঠাৎ করে খাতা মূল্যায়নের নতুন পদ্ধতি চালু, ইংরেজি বিষয়ের দক্ষ শিক্ষকের সছলট ও অধিকাংশ শিক্ষকের সৃজনশীল পদ্ধতিতে পাঠদান আয়ত্ত করতে না পারা। তাদের অভিযোগ, শিক্ষক সংকট দূর করতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কার্যত কোনো উদ্যোগ নেই। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে চলতি বছরের কুমিল্লা ও যশোর শিক্ষা বোর্ডসহ এইচএসসি পরীক্ষার সার্বিক ফলে।

ইংরেজিতে পাস করতে না পারায় গতবারের মতো এবারও ফল বিপর্যয় ঘটেছে কুমিল্লা বোর্ডে। একই কারণে বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে যশোর বোর্ডও। গত বছর পাসের হারে চমক সৃষ্টি করে শীর্ষে থাকা এ বোর্ড এবার আটটি বোর্ডের মধ্যে চতুর্থ অবস্থানে নেমে এসেছে। এবার সববোর্ড মিলিয়ে কমেছে পাসের হার ও জিপিও-৫ এর সংখ্যা। মাদরাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডও ফলে চমক দেখাতে পারেনি। জানা যায়, এবার সারাদেশে পাসের হার ৬৮ দশমিক ৯১ শতাংশ। যা গতবারের চেয়ে ৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ কম। গত বছর

এ পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ। এবার সিলেট শিক্ষাবোর্ডে পাস করেছেন ৭২ শতাংশ পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৭০০ জন। অন্যদিকে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ডে এবার পাসের হার সর্বনিম্ন ৪৯ দশমিক ৫২ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ৬৭৮ জন।

এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নে এবারই প্রথম নতুন পদ্ধতি প্রয়োগ করেন পরীক্ষকরা। প্রস্তুতি ও নির্দেশনা ছাড়া এ পদ্ধতি শুরু করায় পাসের হার কমেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ‘হুট’ করে নেয়া খাতা মূল্যায়ন পদ্ধতির নেতিবাচক প্রভাব পরীক্ষার ফলে পড়েছে বলে অভিযোগ করেন অনেক অভিভাবক। তাদের দাবি, গত এক যুগ ধরে শিক্ষা ব্যবস্থায় ঘন ঘন পদ্ধতি বাতিলের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। পরীক্ষার খাতা ভালোভাবে মূল্যায়ন করার কারণেই এ ফল হয়েছে বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। তিনি বলেন, ‘এবার পাস কম করায় আমরা বিস্মিত হইনি। গত মাধ্যমিক (এসএসসি) পরীক্ষায়ও একই ঘটনা ঘটেছিল।’

শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানায়, এবার উত্তরপত্র মূল্যায়নে অবমূল্যায়ন বা অতিমূল্যায়ন রোধে বোর্ডসমূহ বেশকিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করে। প্রধান পরীক্ষকগণের মাধ্যমে উত্তরমালা প্রণয়ন করা হয়। প্রণীত উত্তরমালার আলোকে উত্তরপত্র মূল্যায়ণের জন্য পরীক্ষকগণকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করা হয়। পরীক্ষকদের উত্তরপত্র মূল্যায়নের গুণগত মান যাচাইয়ের জন্য একটি প্রশ্নমালা প্রধান পরীক্ষকগণকে সরবরাহ করা হয়েছে। প্রত্যেক পরীক্ষকের মূল্যায়নকৃত উত্তরপত্রের ১২ শতাংশ উত্তরপত্র প্রধান পরীক্ষকের পুনঃমুল্যায়ন করার বাধ্যবাধকতা ছিল।

শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের অভিযোগ, এ বছর ২৬ টি বিষয়ে ৫০টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছে, গত বছর ১৯টি বিষয়ের ৩৬টি পত্রে সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে পরীক্ষা হয়েছিল। গত বছরের তুলনায় সৃজনশীল প্রশ্ন পদ্ধতিতে বিষয় বেড়েছে ৭টি ও পত্র বেড়েছে ১৪টি। শিক্ষা পদ্ধতিতে সবচেয়ে ওলটপালট করা পরিবর্তনের নাম ‘সৃজনশীল ব্যবস্থা’। ২০০৫ সালে এ পদ্ধতি চালু হলে বারো বছরে ৫৬ শতাংশ শিক্ষক এটি আয়ত্ত করতে পেরেছেন। এ পদ্ধতিতে পড়ানোর মতো দক্ষ শিক্ষকের সংকট প্রকট। এ পদ্ধতির ভীতি কাটছে না শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারকরা সৃজনশীল পদ্ধতির পক্ষে বললেও বাস্তবতা ও মাঠপর্যায়ের চিত্র ভিন্ন। শিক্ষার্থীরা সৃজনশীল ভীতির কারণে ঝরে পড়ছে।

এবারই প্রথম মূল্যায়নপত্রের মাধ্যমে পরীক্ষার খাতা মূল্যায়িত হওয়ায় এইচএসসি বা সমমান পরীক্ষায় পাসের হার গত বছরের তুলনায় কমেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদরাও। তারা বলছেন, ফলাফলে বিচলিত হবার কিছু নেই। পাসের হার নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট। অন্যদিকে ২০১৬ সালের তুলনায় এবার বিজ্ঞান বিভাগে ২৩ হাজার ৫০১ জন পরীক্ষার্থী বেশি অংশগ্রহণ করেছে, তাদেও মধ্যে ১৯ হাজার ৭৪৪ জন বেশি পাস করেছে এবং ০ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি পাস করেছে। সব শিক্ষা বোর্ডে ছাত্রের তুলনায় ২ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাত্রী বেশি পাস করেছে আর অনুত্তীর্ণ ছাত্রীর সংখ্যা ছাত্রের চেয়ে ৪৩ হাজার ১১১ জন কম।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist
Error!: SQLSTATE[42S02]: Base table or view not found: 1146 Table 'protidin_sangbad.news_hits_counter_2020_04_07' doesn't exist