নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২০ এপ্রিল, ২০২৪

বিশ্বে গুরুত্ব বাড়ছে বাংলাদেশের

বাংলাদেশ এখন গ্লোবাল সাউথের মুখপাত্র। তাছাড়া অর্থনৈতিক এবং ভূরাজনৈতিক কারণে বিশ্বায়নের সঙ্গে ক্রমাগত সংযুক্তি বিশ্বের পরাশক্তিগুলোর কাছে বাংলাদেশকে আরো বেশি গ্রহণযোগ্য করে তুলেছে। তাই ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপের মতো দেশগুলো বাংলাদেশের প্রতি দৃষ্টি দিচ্ছে। বিষয়টিকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক সাফল্য বলেই মনে করছেন কূটনীতিকরা।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্ধারিত সৌদি আরব ও গাম্বিয়া সফর বাতিল হয়েছে। তবে আগামী ২৪ এপ্রিল থাইল্যান্ড সফরে যাচ্ছেন তিনি। মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কারণে সফর বাতিল না হলে টানা ১০ দিনে তিন দেশ সফরে থাকতেন প্রধানমন্ত্রী। যদিও দেশগুলো এখনো চায় বাংলাদেশের সরকারপ্রধান সফর বাতিল না করুন।

এর পরপরই পাইপলাইনে রয়েছে ভারত, চীন, জাপান এবং কোরিয়া। পরাশক্তি থেকে শুরু করে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলো চাইছে বাংলাদেশকে তাদের পাশে। কারণ হিসেবে কূটনীতিকরা বলছেন, প্রতি এক দশকে বাংলাদেশ ১ শতাংশ করে প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক অগ্রগতির কারণে বাংলাদেশ পুরোপুরিভাবে বিশ্বায়নের সঙ্গে এখন সম্পৃক্ত।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির বলেন, যেহেতু বাণিজ্যিক জাতি হিসেবে আস্তে আস্তে আবির্ভূত হচ্ছি আমাদের যোগাযোগটা অন্যের সঙ্গে বাড়ছে। ফলে আমরা যখন অন্যের সঙ্গে সংযুক্ত হই অন্যদের আকর্ষণ তৈরি হয়। কৌতূহল হয়- এরা কারা, কী করছে। এই যে ক্রমাগত সংযুক্তি বিশ্বায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের ভূমিকা আছে বলে মনে করি।

বাংলাদেশের সবার সঙ্গে বন্ধুত্বের পররাষ্ট্রনীতিও এই বিশ্বের আগ্রহের কারণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা।

সাবেক কূটনীতিক শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, অন্য দেশ যেমন চাইছে চীন তাদের সাহায্য করুক, ভারত তাদের সাহায্য করুক। এখানে হয়েছে উল্টোটা। আমাদের সবাই খুঁজে বেড়াছে। বলছে, আসেন, আমাদের সঙ্গে সম্পর্ক করেন। এটা বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক এবং রাষ্ট্র হিসেবে বিরাট অর্জন।

সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির আরো বলেন, একদিকে চীন একদিকে ভারত আরেকদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আসিয়ান দেশগুলো। এরা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক অংশীদার হবে। এই প্রেক্ষাপটে দেখতে পাচ্ছি, ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বলেন যারা সনাতনী অর্থনীতির নেতৃত্ব দিয়েছে তারা এখন এই অঞ্চলের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে।

গত এক দশকে এসডিজি, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলা, নারীর ক্ষমতায়নের মতো বিষয়গুলোয় বাংলাদেশের সাফল্য এই আগ্রহের অন্যতম কারণ।

এদিকে, ৫০ বছরে বাংলাদেশের সফলতা চোখে পড়ার মতো বলে মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) এর চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান। তিনি বলেছেন, এ সময় বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে আর্থসামাজিক উত্তরণ ঘটেছে। গত বৃহস্পতিবার সিপিডি আয়োজিত ‘ফিফটি ইয়ার্স অব বাংলাদেশ-ইকোনমি, পলিটিক্স, সোসাইটি অ্যান্ড কালচার’ শীর্ষক বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডিতে সংস্থার নিজস্ব কার্যালয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। বইটি সম্পাদনা করেছেন সিপিডির চেয়ারম্যান ড. রেহমান সোবহান ও অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. রওনক জাহান।

ড. রেহমান সোবহান বলেন, এর আগে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ নিয়ে এ রকম আরেকটি বই প্রকাশ করা হয়েছিল। তখন ২৫ বছরের বাংলাদেশের অর্থনীতি নিয়ে এতটা উচ্চাশা ছিল না। সেখানে গার্মেন্টস সেক্টরে কতগুলো ভ্যালু অ্যাড হতে পারে সে বিষয়ে চিন্তা করা হয়নি। রেমিট্যান্স নিয়ে এত চিন্তাভাবনা করা হয়নি। এখন পরবর্তী ২৫ বছরে এসব পার্থক্য খুঁজে বের করা হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতি ভালো অবস্থায় রয়েছে।

এ সময় অন্য বক্তারা বলেন, ৫০ বছরে বাংলাদেশের সফলতা যেমন চোখে পড়ার মতো, তেমনি সমাজে অসমতা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতি ও উন্নয়নের নিরিখে শ্রমিকের মজুরি বাড়েনি। তারা আরো বলেন, দেশে সামষ্টিক ও ব্যক্তিগত উদ্যোগের মিলনে উন্নয়ন হয়েছে। সরকার ও বাজারের মধ্যে একধরনের মিথোজীবিতার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। এটাই উন্নয়নের চালিকা শক্তি। ফলে সম্পদ বা সুশাসনের অভাব দেশের উন্নয়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close