নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৩ মে, ২০২৪

মিল্টন তিন দিনের রিমান্ডে

* তিন মামলা, হচ্ছে আরো দুটি * মিল্টনের স্ত্রীকেও ডাকবে ডিবি

রাজধানী ঢাকার মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ আশ্রমের চেয়ারম্যান মিল্টন সমাদ্দারের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল বৃহস্পতিবার তাকে আদালতে হাজির করে ৭ দিনের রিমান্ডের আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট তোফাজ্জল হোসেনের আদালত মিল্টনের ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। মিরপুর মডেল থানার সাধারণ নিবন্ধন শাখার কর্মকর্তা পুলিশের উপপরিদর্শক জালাল উদ্দীন এ তথ্য জানিয়ে বলেন, প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে জাল মৃত্যুসনদ তৈরির অভিযোগে মিরপুর মডেল থানার মামলায় মিল্টনের ৭ দিনের রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। এ মামলায় তার ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়।

জালাল উদ্দীন আরো বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। জাল মৃত্যুসনদ তৈরির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে প্রথম মামলা হয়। এরপর তার আশ্রমের টর্চার সেলে মারধর করার অভিযোগে একটি মামলা হয়। সর্বশেষ তার বিরুদ্ধে মানব পাচার আইনে আরো একটি মামলা হয়েছে। এছাড়া মানব পাচার ও অবৈধভাবে আটক রাখার অভিযোগে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে আরো দুটি মামলা প্রক্রিয়াধীন। তবে জাল-জালিয়াতির অভিযোগে করা মামলায় মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। এর আগে দুপুরে মিল্টনকে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। মিরপুর মডেল থানায় করা মামলায় তাকে আদালতে তোলে পুলিশ। এরপর তাকে ঢাকা সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। বিকেল সোয়া ৩টায় এজলাসে তোলা হয় আসামিকে।

এর আগে বুধবার রাতে রাজধানীর মিরপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে মিল্টন সমাদ্দারকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। এদিকে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ। তিনি অভিযোগগুলো অস্বীকার করতে পারেনি। তার বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তিনটি মামলা হয়েছে। রিমান্ডে আসার পর তার যে অপকর্মগুলো রয়েছে, সব তদন্ত করে বের করা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে তার স্ত্রীকেও ডেকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। কেউ তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলা করলে তার স্ত্রীকেও গ্রেপ্তার করা হবে। হারুন অর রশীদ বলেন, কেউ মারা গেলে মরদেহ দাফনের পর চিকিৎসা ও সিটি করপোরেশনের সই-সিল জাল করে মৃত্যুসনদ দিতেন মিল্টন। সেই সিলগুলো উদ্ধার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ঢাকার মিরপুরে ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ নামে একটি আশ্রয়কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন মিল্টন সমাদ্দার। তার ভাষ্য, সেখানে আশ্রয়হীন বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেওয়া হয়। সম্প্রতি সাভারে জমি কিনে আশ্রয়কেন্দ্রের স্থায়ী নিবাস বানানো হয়েছে। মিল্টন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে অসহায় বৃদ্ধ ও শিশুদের আশ্রয় দেওয়ার বিষয়ে প্রচার চালান। এ-সংক্রান্ত ভিডিও চিত্র দেন। ফেসবুকে তাকে অনুসরণ করেন ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। সম্প্রতি মিল্টন সমাদ্দারের বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হয়। এরপর থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাকে নিয়ে শুরু হয় সমালোচনার ঝড়। এরপর মুখ খুলতে থাকেন ভুক্তভোগীরা। মিল্টন ফেসবুকে ভিডিও চিত্র দিয়ে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

এদিকে মিল্টন সমাদ্দারের ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এইজ কেয়ার’ এখন ভিন্ন রূপ ধারণ করেছে। আশ্রমের ভেতরে বাইরে সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর দক্ষিণ পাইকপাড়া এলাকায় অবস্থিত মিল্টন সমাদ্দারের আশ্রম এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভবনের মূল ফটক বন্ধ। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মী মনির হোসেন জানান, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, আশ্রমের ভেতরে যেন কেউ প্রবেশ না করে। তাই গণমাধ্যমকর্মীদেরও এখন প্রবেশাধিকার নেই। এ কর্মী আরো জানান, মিল্টন আটক থাকলেও আশ্রমের ২০ বৃদ্ধকে সকালের নাশতা দেওয়া হয়েছে। দুপুরের খাবারও পেয়েছেন দুপুর ১টায়। স্থানীয়রা বলেন, বৃদ্ধাশ্রমটিতে নিয়মিত যাতায়াত ছিল, এমন ব্যক্তিরা এখন আর এদিকে ভিড়ছেন না। এদের একজন বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘আগে তো অনেক লোক আসতেন। গতকাল (বুধবার) রাত থেকে তেমন কেউ আসেননি। আগে দেখতাম অটোরিকশা দিয়া লোকজন আসতেন। বাবা-মাকে দেখার জন্য।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close