নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১৮ এপ্রিল, ২০২৪

মন্ত্রিসভা বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী

মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতিতে সজাগ দৃষ্টি রাখার আহ্বান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মধ্যপ্রাচ্যে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতি কোনদিকে মোড় নেয়, তা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে মন্ত্রিসভার সদস্যদের নির্দেশ দিয়েছেন। একইসঙ্গে অগ্রিম পরিকল্পনা করে রাখার জন্যও নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। গতকাল বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে মন্ত্রিসভার নিয়মিত বৈঠকে শেখ হাসিনা এ নির্দেশনা দেন।

বৈঠক শেষে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন জানান, মধ্যপ্রাচ্যে যে বাস্তবতা তৈরি হয়েছে, তা গভীর পর্যবেক্ষণে রাখতে মন্ত্রীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দীর্ঘ মেয়াদে এমন পরিস্থিতি চলতে থাকলে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট খাতগুলোয় কী ধরনের পদক্ষেপ নিতে হতে পারে, তার একটি রূপরেখা তৈরি করে সেটি প্রধানমন্ত্রীকে জানাতে বলেছেন। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে উদাহরণ দিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, যদি মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির কারণে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যায়, সেক্ষেত্রে আমাদের কী ধরনের উদ্যোগ নিতে হবে, তা আগে থেকেই চিন্তা করে রাখা। অর্থাৎ যেকোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় আগে থেকে প্রস্তুতি রাখা, যাতে তাড়াহুড়া করে সিদ্ধান্ত নিতে না হয়। যেকোনো ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী রিয়েক্টিভ না হয়ে প্রো-অ্যাক্টিভ হতে বলেছেন।

এদিন প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনারদের পারিতোষিক ও বিশেষাধিকার আইন-২০২৪-এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি মহেশখালী সমন্বিত উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০২৪-এর নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইনের খসড়ায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ক্ষেত্রে আপিল বিভাগের বিচারপতির সমান এবং নির্বাচন কমিশনারদের জন্য উচ্চ আদালতের বিচারপতির সমপরিমাণ বেতন-ভাতা নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, মাতারবাড়ী উন্নয়নকাজকে শৃঙ্খলায় নিয়ে আসতে আইনটি করা হয়েছে- যাতে বিদেশি বিনিয়োগে সহায়তা পাওয়া যায়। আইনটিতে কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় কক্সবাজার জেলার মহেশখালীতে থাকবে। তবে কর্তৃপক্ষ গভর্নিং বোর্ডের অনুমোদনক্রমে প্রয়োজনে দেশের যেকোনো স্থানে প্রধান কার্যালয়ের একটি লিয়াজোঁ অফিস করতে পারবে বলে জানান তিনি। আইনের উদ্দেশ্য, প্রয়োজনীয় নির্দেশনা, পরামর্শ ও উপদেশ প্রদান এবং কর্তৃপক্ষ ও নির্বাহী পরিষদের কার্যাবলি অনুমোদনের জন্য প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে গভর্নিং বোর্ড গঠিত হবে।

এদিকে বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া সিদ্ধান্তগুলো দ্রুত বাস্তবায়নের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত সিদ্ধান্ত এখনো কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, তার কারণও জানতে চেয়েছেন তিনি। এ বিষয়ে মাহবুব হোসেন জানান, মন্ত্রিপরিষদের বৈঠক অনুমোদন পাওয়া ১৬টি আইন রয়েছে, যা এখনো আইন আকারে উপস্থাপনের জন্য সংসদে পাঠানো সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয়ের একটি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ৪টি আইন রয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নাধীন রয়েছে বলে মন্ত্রিপরিষদকে অবহিত করা হলে কেন বাস্তবায়নাধীন রয়েছে, এখনো কেন বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি, তা বিস্তারিত আকারে জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। মন্ত্রিপরিষদ সচিব আরো জানান, যেসব আইনের খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের পরও সংসদে উপস্থাপনের জন্য পাঠানো কেন সম্ভব হয়নি, সে বিষয়েও দ্রুত জানাতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। কবে নাগাদ এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে বা আদৌ সম্ভব হবে কি না, তা-ও জানাতে বলেছেন তিনি। প্রয়োজনে সেসব সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হলেও যেন তা মন্ত্রিপরিষদকে জানানো হয়, সংশ্লিষ্টদের এ নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক মুজিবনগর দিবস উপলক্ষে রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। গতকাল বুধবার সকাল ৭টায় বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরের সামনে রক্ষিত জাতির পিতার প্রতিকৃতিতে এ পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় স্বাধীনতার স্থপতি এ মহান নেতার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। পরে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দলীয় প্রধান হিসেবে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে আরেকটি পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পাশাপাশি বনানী কবরস্থানে সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ এবং এম মনসুর আলীর কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।

১৯৭১ সালের এই দিনে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের প্রথম সরকার গঠন করা হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে নিরস্ত্র বাঙালিদের ওপর পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যা শুরু হলে ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন, যা ইপিআর (বর্তমান বিজিবি) ওয়্যারলেসযোগে এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে সারা দেশে প্রচার করা হয় এবং ১৭ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা স্বাধীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের জন্য মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলায় সমবেত হন।

তৎকালীন মেহেরপুর মহকুমার বৈদ্যনাথতলা ছিল মূলত একটি আমের বাগান, বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার গঠনের পর এর নাম হয় মুজিবনগর। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করা হয় এবং বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। তাজউদ্দীন আহমদকে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করা হয়। ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী এবং এ এইচ এম কামারুজ্জামানকে মন্ত্রিসভার সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। মুজিবনগরের অস্থায়ী সরকারের সফল নেতৃত্ব ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাঙালিকে চূড়ান্ত বিজয় এনে দেয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close