বন্দরবান, লামা ও থানচি প্রতিনিধি

  ০৬ এপ্রিল, ২০২৪

পাহাড় থমথমে, দোকানপাট বন্ধ, অভিযান চলবে

* কেএনএফের আরো বড় হামলার আশঙ্কা র‌্যাবের * আলীকদমের ২৬ মাইলে নতুন করে হামলা * থানচিতে আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ, লোকসমাগম কম

বান্দরবানের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) আগামীতে আরো বড় ধরনের হামলা চালাতে পারে বলে আশঙ্কা করছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব)। একইসঙ্গে তাদের নির্মূলে সর্বাত্মক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন। গতকাল শুক্রবার সকালে বান্দরবান জেলা পরিষদ অডিটোরিয়ামে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান।

এদিকে জেলার রুমা ও থানচি উপজেলার পর এবার আলীকদমের ২৬ মাইলের ডিম পাহাড় এলাকায় পুলিশ ও সেনাবাহিনীর একটি যৌথ তল্লাশিচৌকিতে হামলা চালিয়েছে অস্ত্রধারী দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার রাত ১টায় এ হামলা চালানো হয়। আলীকদম থানার ওসি তবিদুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এছাড়া জেলার থানচিতে সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার রাতেও পুলিশ-বিজিবির সঙ্গে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ঘণ্টাব্যাপী গোলাগুলি ঘটনা ঘটেছে। এতে শুক্রবার সকাল থেকে দোকানপাট বন্ধ রাখেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। এলাকাজুড়ে জনমনে থমথমে আতঙ্ক বিরাজ করেছে। থানচি থানা ওসি জসিম উদ্দিন এ তথ্য সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

বান্দরবানে সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন জানান, জেলার রুমা থেকে অপহরণ হওয়া সোনালী ব্যাংকের ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনের ল্যাপটপ ব্যবহার করে সশস্ত্র সংগঠনের সদস্যরা সাইবার হামলার চালাতে চেয়েছিল। তিনি বলেন, ‘র‌্যাবের নিজস্ব কৌশলে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় রুমা থেকে অক্ষত অবস্থায় ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধার করা হয়েছে। তাকে অপহরণের পর পাহাড় ও ঝিরিপথে দীর্ঘক্ষণ হেঁটে নিজেদের আস্তানায় নিয়ে যায় কেএনএফ সদস্যরা। এরপর থেকে ব্যাংক ম্যানেজারকে উদ্ধারে বিভিন্ন সংস্থার সহযোগিতায় অভিযানে নামে র‌্যাব। টানা ৩০ ঘণ্টা অভিযানের পর কেএনএফ সন্ত্রাসীরা র‌্যাবের পাতা ফাঁদে পা দেয়, অপহৃত ব্যাংক ম্যানেজারকে মোটরসাইকেলে করে রুমার একটি জায়গায় রেখে চলে যায়। সেখান থেকে র‌্যাব তাকে উদ্ধারের পর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে।’

বৃহস্পতিবার সন্ধায় র‌্যাবের অভিযানে ব্যাংক ম্যানেজার নেজাম উদ্দীনকে বান্দরবানের রুমা বাজার ও বেথেল পাড়া মধ্যবর্তী একটি স্থান থেকে উদ্ধার করা হয়। এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে শতাধিক অস্ত্রধারী ব্যক্তি বান্দরবানের রুমা সোনালী ব্যাংকের উত্তর দিক (বেথেল পাড়া) থেকে অতর্কিত হামলা চালায়। তারা অস্ত্রের মুখে পুলিশ, আনসার ও অন্যদের জিম্মি করে। পরে সোনালী ব্যাংকের ভল্ট ভেঙে টাকা লুটের চেষ্টা চালায়। কিন্তু সেই চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে ম্যানেজার নেজাম উদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘ব্যাংক ম্যানেজারকে জীবিত উদ্ধারের কারণে আমরা হার্ডলাইনে যাইনি। তবে আজকে থেকে আমরা বিভিন্ন বাহিনীর সহযোগিতায় সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করব। কেএনএফ সন্ত্রাসীরা নিজেদের অবস্থান জানান দিতে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। ভবিষ্যতে হয়তো তারা আরো বড় ধরনের হামলা করতে পারে। সন্ত্রাসীদের ছাড় দেওয়া হবে না, সিসিটিভি ফুটেজ শনাক্ত করে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।’ তিনি জানান, ‘অপহরণের পর সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ব্যাংক ম্যানেজারকে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের সুযোগ দেয়, কোনো প্রশাসনিক বা আইনি সহায়তা যাতে না নেয়, সেজন্য সতর্ক করে। পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ হওয়ায় ওই সূত্র ধরে র‌্যাব তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করে।’

লামা প্রতিনিধি জানান, জেলার রুমা, থানচির পর আলীকদমের ২৬ মাইলে হামলা চালিয়েছে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা। এ ঘটনার তথ্য নিশ্চিত করে আলীকদম থানার ওসি তবিদুর রহমান বলেন, উপজেলার ২৬ মাইলের ডিম পাহাড় এলাকায় চেকপোস্টে তল্লাশি করার জন্য একটি গাড়িকে থামার সংকেত দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গাড়িটি না থেমে চেকপোস্টের দিকে ছুটে আসছিল, তখন দায়িত্বরত পুলিশ ও সেনাসদস্যরা গাড়িটি লক্ষ করে গুলি ছোড়েন। এ সময় গাড়ি থেকেও পাল্টা গুলি চালালে উভয় পক্ষের মধ্যে বেশকিছু সময় গোলাগুলি হয়।

থানচি প্রতিনিধি জানান, ‘বৃহস্পতিবার রাতে থানচি বাজারসংলগ্ন বিজিবি পোস্ট ও থানচি থানা ঘেরাওয়ের চেষ্টা করে। এ সময় হাসপাতাল রোড এবং মৈত্রী শিশু সদন রোড থেকে আসা একদল সশস্ত্র সন্ত্রাসী গুলিবর্ষণ করে। টানা ৪৫ মিনিট পুরো বাজারসহ ঘেরাও এলাকায় পাল্টাপাল্টি গুলিবিনিময় হয়েছে। তবে এ ঘটনায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি।’ থানচি থানা ওসি জসিম উদ্দিন বলেন, ‘রাতে বেলা তংক্ষ্য ও শাহজাহানপাড়া রোড দিয়ে ৮০ থেকে ৯০ জন একটি সশস্ত্র সন্ত্রাসী দল এবংও হাসপাতাল রোড দিয়ে আসা দুটি দল মিলে প্রথমে বাজার ও ব্যাংকের সামনে দায়িত্বরত পুলিশ বাহিনীকে আক্রমণ করেন। তারা থানা লক্ষ করে এলোপাতাড়ি গুলি ছোড়ে। জানমাল রক্ষায় আমরাও পাল্টা গুলিবর্ষণ করেছি।’ ওসি জসিম আরো জানান, ‘জনগণ আতঙ্কে আছে। বিভিন্ন সূত্রে জানতে পারি, সন্ত্রাসীরা থানচি বাজার কাছাকাছি ও দেড় কিলোমিটার মতো জায়গাতে অবস্থান করেছে।’

থানচি বাজার কমিটি সহসভাপতি জয়নাল আবেদিন জানান, বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনা পর শুক্রবার সকাল থেকে আমরা আতঙ্কে আছি। ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করেছে। সামনে মাহে রমজানের ঈদ ও পহেলা বৈশাখ নিয়ে মানুষের বেচাকেনা করার কথা। কিন্তু এখন সবাই আতঙ্কে দিন কেটেছে।’ ব্যবসায়ীরা জানান, যেকোনো পরিস্থিতে ব্যাংক খোলা থাকলে তাদের জন্য ভালো হবে। সামনে ঈদ, তাদের মোবাইল ব্যাকিং মাধ্যমে লেনদেন করতে গেলে অনেক টাকা খরচ হবে। থানচি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান অংপ্রু ম্রো বলেন, গত কয়েকদিন; বিশেষ করে বৃহস্পতিবার রাতে পর থেকে এলাকায় থমথমে অবস্থায় আছেন। এখন প্রত্যেক নাগরিকের জোর দাবি হচ্ছে নিরাপত্তা জোরদারের জন্য। আমরা এখন নিরাপত্তাহীনতা ভুগছি।’ এলাকায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানান তিনি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close