প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ০৫ এপ্রিল, ২০২৪

গাজায় নিহত ছাড়াল ৩৩০০০ সংস্থার ত্রাণ স্থগিত

ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় আরো ৬২ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। এ নিয়ে গত বছর ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় নিহত ৩৩ হাজার ছাড়িয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাতে সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ পর্যন্ত নিহত হয়েছেন ৩৩ হাজার ৩৭ জন। এদের ৭০ শতাংশের বেশি নারী ও শিশু।

প্রতিবেদন মতে, গাজায় এ পর্যন্ত প্রাণ গেছে ১৩ হাজারের বেশি শিশু ও ৮ হাজার ৪০০ নারীর। বিভিন্ন ভবনের ধ্বংসস্তূপে চাপা পড়া অনেকেই নিখোঁজ হয়েছেন, তারা মারা গেছেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে হামলায় আহত হয় অন্তত ৭৫ হাজার ৬৬৮ জন। ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ভয়াবহ হামলা চালায় ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস। হামলায় ১ হাজার ১৩৯ জনকে হত্যা এবং ২৫০ জনকে জিম্মি করে নিয়ে যায় হামাস। এ ঘটনার পর নিরাপত্তা ইস্যুতে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন নেতানিয়াহু সরকার। হামাসের ওই হামার পর গাজায় পাল্টা হামলা শুরু করে ইসরায়েল। হামাসের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু পর গত বছরের নভেম্বরে কাতারের মধ্যস্থতায় ১০০ জিম্মিকে মুক্তি দেয় হামাস। অন্যদিকে এসব জিম্মিদের বিনিময়ে ইসরায়েলের কারাগারে বহুদিন ধরে বন্দি থাকা বেশকিছু ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেয় তেলআবিব।

এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের ৭ কর্মী নিহত হওয়ার পর ফিলিস্তিনের ছিটমহল গাজায় কার্যক্রম স্থগিত করেছে ত্রাণ সংস্থা ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেন (ডব্লিউসিকে)। এরপর থেকে বহু ফিলিস্তিনি হতভম্ব হয়ে ভাবছেন তাদের পরিবারগুলোকে কীভাবে খাওয়াবেন। ডব্লিউসিকের সঙ্গে কাজ করা আরেকটি মার্কিন ত্রাণ সংস্থা আনেরাও তাদের কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে। কারণ তাদের স্থানীয় কর্মী ও কর্মীদের পরিবারগুলো বাড়তে থাকা ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছে। এ দুই ত্রাণ সংস্থা মিলে গাজায় প্রতি সপ্তাহে ২০ লাখ খাবারের প্যাকেট সরবরাহ করত বলে বিবিসি জানিয়েছে। ইসরায়েলে কঠোর অবরোধ, ত্রাণ প্রবেশে বাধা ও চলমান সহিংসতায় গাজার ২৩ লাখ বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১১ লাখ দুর্ভিক্ষের মুখে আছে বলে জাতিসংঘ সতর্ক করেছে।

সোমবার রাতে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ইসরায়েলের নির্ধারিত একটি উপকূলীয় সড়ক ধরে ডব্লিউসিকের একটি গাড়িবহর দক্ষিণ দিকে যাওয়ার সময় বিমান হামলার শিকার হয়। এর কিছুক্ষণ আগে ডব্লিউসিকে একটি বার্জ থেকে শতাধিক টন খাদ্য সহায়তা নামিয়ে গাজার দিয়ের আল-বালাহ এলাকার একটি গুদামে রেখেছিল। এ বার্জটি ত্রাণবাহী চারটি জলযানের সঙ্গে গাজার উপকূলে এসেছিল। কিন্তু ত্রাণকর্মীদের ওপর ইসরায়েলের হামলার পর আরো ২৪০ টন খাদ্য ত্রাণসহ অপর জাহাজগুলো সাইপ্রাসে ফিরে যায়। নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিল সতর্ক করে বলেছে, ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সঙ্গে যা হয়েছে তাতে পুরো ত্রাণ পদ্ধতিটিই হুমকির মুখে পড়েছে ও খাদের কিনারে এসে দাঁড়িয়েছে।

ডব্লিউসিকে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীকে অভিযুক্ত করে বলেছে, ইসরায়েলি বাহিনী ‘জেনেবুঝেই’ তাদের পরিষ্কার লোগোসংবলিত গাড়িগুলোয় হামলা চালিয়েছে, ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করেই তারা পথে বের হয়েছিল। যে সাতজন নিহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে ব্রিটিশ, পোলিশ, অস্ট্রেলীয়, ফিলিস্তিনি ও যুক্তরাষ্ট্র-কানাডার একজন দ্বৈত নাগরিক আছেন। ইসরায়েলের সামরিক বাহিনীর চিফ অব স্টাফ লেফটেন্যান্ট জেনারেল হারজি হালেভি এ হামলার ঘটনাকে ‘গুরুতর ভুল’ বলে অভিহিত করেছেন আর রাতের অন্ধকারে তারা ত্রাণবহরটি ‘শনাক্ত’ করতে পারেননি বলে দাবি করেছেন। ত্রাণকর্মীদের সুরক্ষা দিতে আরো বেশি কিছু করতে ‘তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ’ নেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ লক্ষ্যে সমন্বয়ের আরো উন্নয়ন ঘটাতে তারা অবিলম্বে নতুন একটি ‘মানবিক কমান্ড সেন্টার’ প্রতিষ্ঠা করছেন বলে জানান।

কিন্তু ত্রাণ গোষ্ঠীগুলো বলছে, এসব প্রতিশ্রুতি অর্থপূর্ণ কোনো পরিবর্তনের দিকে নিয়ে যাবে কি না, তা নিশ্চিত না তারা। তারা এ-ও বলেন, এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, অক্টোবরে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি হামলা এ পর্যন্ত ১৯৬ ফিলিস্তিনি ত্রাণকর্মী নিহত হয়েছেন। নরওয়ের রিফিউজি কাউন্সিলের মহাসচিব ও জাতিসংঘ মানবিকবিষয়ক সাবেক প্রধান জ্যান এগল্যান্ড বিবিসিকে বলেন, গাজার মানুষের জন্য ডব্লিউসিকের কার্যক্রম বন্ধ মানে আরো দুর্ভিক্ষ, আরো মৃত শিশু আর চরম পুষ্টিহীনতার জন্য আরো বেশি মহামারি।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close