প্র্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ মার্চ, ২০২৪

নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যা ফিরিয়ে আনছে তালেবান

আফগানিস্তানে ব্যাভিচারের শাস্তি হিসেবে নারীকে পাথর ছুড়ে হত্যার প্রথা আবারও চালু করতে যাচ্ছে তালেবান সরকার। সম্প্রতি রাষ্ট্রীয় টিভিতে সম্প্রচারিত এক অডিওবার্তায় তালেবানের সর্বোচ্চ নেতা মোল্লা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা এ ঘোষণা দেন। খবর টেলিগ্রাফ ও এনডিটিভির।

টেলিগ্রাফের হাতে আসা এক ভিডিওতে আখুন্দজাদা বলেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় নারীদের অধিকারের পক্ষে যে ওকালতি করছে, তা শরিয়াবিরোধী। আপনারা বলেন, পাথর মেরে হত্যা করা নারী অধিকারের লঙ্ঘন। কিন্তু আমরা শিগগিরই ব্যভিচারের শাস্তি কার্যকর করব। আমরা নারীদের জনসমক্ষে বেত্রাঘাত করব। আমরা তাদের জনসমক্ষে পাথর মেরে হত্যা করব। আখুন্দজাদা আরো বলেন, কাবুল দখল নিয়েই তালেবানের কাজ শেষ হয়নি, এটি শুরু মাত্র।

তালেবান কারা : পশতু ভাষায় তালেবান মানে হচ্ছে ছাত্র। আফগানিস্তান থেকে যখন সোভিয়েত সৈন্যরা পিছু হটল, তখন ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে উত্তর পাকিস্তানে এ তালেবান আন্দোলনের জন্ম। এ আন্দোলনে মূলত পশতুন অর্থাৎ পশতুভাষীদের প্রাধান্য। ধারণা করা হয়, মাদরাসাগুলোয় প্রথম এরা সংগঠিত হয়। এ মাদরাসাগুলো পরিচালিত হতো সৌদি অর্থে এবং সেখানে খুবই কট্টর সুন্নি মতাদর্শের ইসলামই প্রচার করা হতো। পাকিস্তান ও আফগানিস্তান- এ দুই দেশের সীমান্তের দুদিকেই আছে বিস্তীর্ণ পশতুন অধ্যুষিত অঞ্চল। তালেবান এসব অঞ্চলে খুব দ্রুতই প্রভাবশালী হয়ে ওঠে। তালেবান নেতৃত্ব প্রতিশ্রুতি দেয়, ক্ষমতায় গেলে তারা শান্তি এবং স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনবে এবং কঠোর শরিয়া শাসন জারি করবে।

তালেবান নেতৃত্বের কাঠামো : দক্ষিণ-পশ্চিম আফগানিস্তান থেকে তালেবান খুব দ্রুত তাদের প্রভাব সম্প্রসারিত করে। ১৯৯৫ সালের সেপ্টেম্বরে তারা ইরান সীমান্তবর্তী আফগান প্রদেশ হেরাত দখল করে নেয়। আর এর ঠিক এক বছর পর তারা আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল দখল করে। তারা প্রেসিডেন্ট বুরহানউদ্দীন রাব্বানির সরকারকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করে নিজেদের সরকার প্রতিষ্ঠা করে। বুরহানউদ্দীন রাব্বানি ছিলেন আফগান মুজাহিদীন বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতাদের একজন। ১৯৮০-এর দশকে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে এ আফগান মুজাহিদীনরা প্রতিরোধ সংঘটিত করেছিল। ১৯৯৮ সাল নাগাদ তালেবান আফগানিস্তানের প্রায় ৯০ শতাংশ অঞ্চলে তাদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে।

তালেবানের প্রথম দিকের জনপ্রিয়তার মূলে ছিল কিছু বিষয় : তারা দুর্নীতি দমনে সাফল্যে দেখিয়েছিল, আইনশৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছিল, তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত রাস্তা দিয়ে এবং অঞ্চলে নিরাপদে ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ করে দিয়েছিল। তবে তালেবান একইসঙ্গে তাদের জারি করা কঠোর শরিয়া শাসনের অধীনে প্রকাশ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের মতো শাস্তি চালু করে। অপরাধী কিংবা ব্যাভিচারীদের প্রকাশ্যে হত্যা করা হতো, চুরির দায়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের হাত কেটে নেওয়া হতো। আর পুরুষদের দাড়ি রাখা এবং মেয়েদের পুরো শরীর ঢাকা বোরকা পরা বাধ্যতামূলক করা হয়। তালেবান টেলিভিশন, সংগীত এবং সিনেমা নিষিদ্ধ করে। ১০ বছরের বেশি বয়সি মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার দরকার নেই বলে নিয়ম জারি করে। তালেবানের বিরুদ্ধে বহু ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ধ্বংসের অভিযোগ ওঠে। তাদের সবচেয়ে ভয়াবহ কাণ্ড ছিল ২০০১ সালে আফগানিস্তানের মধ্যাঞ্চলে বিখ্যাত বামিয়ান বুদ্ধের মূর্তি ধ্বংস করা। এর বিরুদ্ধে তখন আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দার ঝড় উঠেছিল।

এদিকে ২০২১ সালের আগস্টে গোটা বিশ্ব যখন আফগানিস্তানে আবার তালেবানের ক্ষমতায় ফিরে আসা দেখছিল, কাবুলের দুই বোন তখন দেশটির লাখো নারীর মতোই অনুভব করতে পেরেছিলেন, নতুন শাসকরা তাদের জীবনকে আবার লৌহবেষ্টনীর মধ্যে আটকে দিচ্ছে। তারা ওই পরিস্থিতিতে পিছু না হটার সিদ্ধান্ত নেন। নারীদের স্বাধীনতার টুঁটি চিপে ধরতে দেখবেন না বলে স্থির করেন। প্রতিরোধের অস্ত্র হিসেবে দুই বোন বেছে নিলেন তাদের কণ্ঠকে। গান গেয়ে প্রতিবাদ শুরু করলেন তারা। তালেবান শাসনে যেখানে কেউ গান গাইলেই হতে পারে গ্রেপ্তার; সেই গুরুতর বিপদ মাথায় নিয়েও দুই বোন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গানে গানে ‘লাস্ট টর্চ’ শীর্ষক আন্দোলন শুরু করেন। গান শুরুর আগে রেকর্ড করা একটি ভিডিওতে দুই বোনের একজন বলেন, ‘আমরা গান শুরু করতে চলেছি। তবে এতে আমাদের জীবনের মূল্য দিতে হতে পারে।’ কাবুলের মসনদে তালেবান আবার আসীন হওয়ার কয়েকদিন পরই তাদের এ ভিডিও প্রকাশ হয়। খুব দ্রুতই তা ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হয়।

বিবিসি জানায়, সংগীতের কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই দুই বোন গানের জগতে এক দুর্দান্ত অধ্যায়ের সূচনা করেছেন। পরিচয় গোপন করার জন্য বোরকা পরে প্রকাশ্যে আসেন তারা। দুই বোনের মধ্যে ছোটজন শাকায়েক (আসল নাম নয়) বলেন, আমাদের লড়াই শুরু হয়েছে তালেবানের পতাকাতলে এবং তালেবানের বিরুদ্ধে। তালেবান ক্ষমতায় আসার আগে আমরা কখনো একটি কবিতাও লিখিনি। ক্ষমতায় ফেরার পর তালেবানের দৃষ্টিভঙ্গি ষ্পষ্ট হতে ২০ দিনেরও কম সময় লেগেছিল। দৈনন্দিন জীবনে শরিয়া আইন আরোপ এবং শিক্ষায় নারীর প্রবেশাধিকার সীমিত করা তাদের অগ্রাধিকারের বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল। নারীরা কাবুলসহ বড় বড় শহরের রাস্তায় নেমে প্রতিরোধ গড়ে তুললেও তা কঠোরভাবে দমন করা হয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close