প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ মার্চ, ২০২৪

তুরস্কের স্থানীয় নির্বাচন কাল

এরদোয়ানের অগ্নিপরীক্ষা

তুরস্কে আগামীকাল রবিবার অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় নির্বাচন। এই ভোটে আঙ্কারা-ইস্তাম্বুলসহ সব সিটিতে মেয়র পদের পাশাপাশি প্রাদেশিক কাউন্সিলর ও মিউনিসিপ্যাল সদস্যদের নির্বাচিত করবেন ভোটাররা। তবে নির্বাচনে সবার নজর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র ও সবচেয়ে বৃহত্তম শহর ইস্তাম্বুলে মেয়র পদে কে আসছেন সেইদিকে। বলা হয়ে থাকে, এই শহরে যিনি মেয়র পদে আসীন হন, ভবিষ্যতে তুরস্ক যায় তার হাতে। বর্তমান প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান এক সময় ইস্তাম্বুলের মেয়র ছিলেন। এখন ইস্তাম্বুলের মেয়র পদে থাকা একরাম ইমামোগলু বিরোধী দলের নেতা। এতে গুরুত্বপূর্ণ শহরটির প্রশাসনিক ক্ষমতা হাতছাড়া রয়েছে এরদোয়ানের। তাই ইস্তাম্বুলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেতে শহরটির মেয়র পদ পুনর্দখলে সর্বাত্মক চেষ্টা চালাচ্ছেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। রবিবারের ভোটকে তার জন্য দেখা হচ্ছে অগ্নিপরীক্ষা হিসেবে। খবর রয়টার্সের।

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান ১৯৯৪ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচিত হন। সে সময় থেকে ২০১৯ পর্যন্ত তিনি ও তার মিত্ররা ইস্তাম্বুল শাসন করে এসেছে। তবে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পর ওই বছর বিরোধী দল রিপাবলিকান পিপলস পার্টির (সিএইচপি) প্রার্থী একরাম ইমামোগলু মেয়র নির্বাচিত হলে গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চলের প্রশাসনিক ক্ষমতা এরদোয়ানের হাত থেকে বের হয়ে যায়।

বিশ্লেষকদের মতে, ১ কোটি ৬০ লাখ মানুষের শহর ইস্তাম্বুলের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পাওয়ার আশা ছাড়েননি এরদোয়ান। শহরটি রক্ষণশীল মুসলিম ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এরদোয়ানের জন্য ইস্তাম্বুল একটি মান সম্মানের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এবারের ভোটে ইস্তাম্বুলের মেয়র পদে এরদোয়ানের দল একেপির পক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন সাবেক পরিবেশমন্ত্রী মুরাত কুরুম। অন্যদিকে দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য লড়াই করছেন বর্তমান মেয়র ইমামোগলু। আগামী ২০২৮ সালে এরদোয়ানের প্রেসিডেন্ট পদের মেয়াদ শেষে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ রয়েছে তার। সে পর্যন্ত নিজের গ্রহণযোগ্যতা ধরে রাখতে মেয়র পদে পুনর্নিবাচিত হওয়ার আশাবাদী ইমামোগলু।

এদিকে এবার ইস্তাম্বুলে মেয়র পদে প্রার্থী দিয়েছে তুরস্কের ৬০০ সদস্যের পার্লামেন্টে তৃতীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ দল কুর্দিপন্থী ডিইএম পার্টি। ২০১৯ সালের মেয়র নির্বাচনে তারা ইমামোগলুকে নীরব সমর্থন দিয়েছিল। এবার তারা নিজেরাই প্রার্থী দেওয়ায় ইমামোগলুর ভোট ভাগ হয়ে যাবে।

যদিও নির্বাচন-পূর্ববর্তী জরিপগুলোতে সিএইচপি দলটি এরদোয়ানের একেপির চেয়ে অল্প ব্যবধানে এগিয়ে আছে। বিশেষ করে রাজধানী আঙ্কারা, ইস্তাম্বুল ও বন্দরনগরী ইজমিরে এগিয়ে রয়েছে বিরোধী দল সিএইচপি। যা অবশ্যই এরদোয়ানের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর কুর্দিরা প্রার্থী দেওয়ায় কিছুটা হলেও সুযোগ দেখছেন এরদোয়ান।

ওয়াশিংটন ইনস্টিটিউটের তুরস্কবিষয়ক বিশ্লেষক সোনার কাপাগতায় বলেন, একেপির প্রার্থীরা আঙ্কারা-ইস্তাম্বুলের মতো গুরুত্বপূর্ণ শহরগুলোতে জিততে না পারলে তাতে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের রাজনৈতিক দৈন্যতা প্রকট হয়ে দাঁড়াবে। অন্যদিকে ইমামোগলু জয়ী হলে ভবিষ্যতে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে নিজেকে একজন গ্রহণযোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবেন তিনি।

২০০৩ সালে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট পদে ক্ষমতাসীন হন এরদোয়ান। তারপর থেকে ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার শীর্ষে রয়েছেন তিনি। মাঝে ২০১৯ সালে ইস্তাম্বুলের মেয়র পদ তার দলের হাতছাড়া হয়ে যাওয়ায় কিছুটা ধাক্কা খেয়েছেন এরদোয়ান। তবে গত বছর পার্লামেন্ট নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়ে ফের প্রেসিডেন্ট হয়ে সেই ধাক্কা কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন তিনি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এবার স্থানীয় নির্বাচনে বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রণ ফিরে পেলে ২০২৮ সালের পরও ক্ষমতায় থাকার সুযোগ খুঁজবেন এরদোয়ান। প্রয়োজনে সংবিধানও পাল্টে নেবেন তিনি।

এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুরাত ইয়েৎকিন বলেন, ২০১৯ সালের ইস্তাম্বুলের মেয়র নির্বাচনে দলের পরাজয় এরদোয়ানের খ্যাতিতে একটি দাগ। তার আগে তিনি ছিলেন অপ্রতিরোধ্য। এবার ইস্তাম্বুলে তার দল জিতলে আজীবন ক্ষমতায় থাকার সুযোগ পাবেন এরদোয়ান।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close