কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জ ও টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

  ২৮ মার্চ, ২০২৪

ঈদযাত্রায় সড়কে ভোগান্তির শঙ্কা

* ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি আর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি স্থান চিহ্নিত * ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কে যানজট হতে পারে

ঈদযাত্রায় প্রতিবারই ভোগান্তি হয় সড়কপথে। এ ভোগান্তির কারণ হয় যানজট। বাস বা প্রাইভেটকার একই স্থানে থেমে থাকে দীর্ঘক্ষণ। এতে ঘরমুখো মানুষের যাত্রা যেন শেষ হয় না। শেষে ক্লান্তি নিয়ে স্বজনের কাছে যায় নাড়ির টানে বাড়ি ফেরা মানুষ। এবার দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৮৯টি স্থান ও ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের টাঙ্গাইলের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এদিকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, তিন চাকার যান চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ঈদযাত্রায় এবার ভোগান্তি হতে পারে ৮৯টি স্থানে। এর মধ্যে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ৪১টি আর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের ৪৮টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করছে হাইওয়ে পুলিশ। উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মানুষের ঈদযাত্রায় প্রতিবারই ভোগান্তির কারণ হয় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ। এবারও সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর থেকে রূপগঞ্জের ভুলতা পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার মহাসড়ক যাত্রীদের ভোগান্তির কারণ হতে পারে। যানবাহনের চাপ বেড়ে গেলে মেঘনা টোলপ্লাজায় লম্বা সময় আটকে থাকার শঙ্কা করছেন গাড়িচালকরা।

নারায়ণগঞ্জ অংশের ১৫টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশে ১১টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার ঢাকা-সিলেট ও ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশ ঘুরে দেখা হয়। এ সময় কাঁচপুর সেতুর নিচে শ্যামবাজার বাসস্ট্যান্ড ও তারাব চৌরাস্তা, রূপসী বাসস্ট্যান্ড, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়ে মহাসড়ক দখল করে লেগুনা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় যাত্রী ওঠানামা করতে দেখা যায়।

যাত্রামুড়া বাজার ও তারাব থেকে ভুলতা পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ দখল করে অলস বাস ও ট্রাক পার্কিং করা ছিল। রূপসী, বরপা, ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড়গুলো রিকশা, ইজিবাইক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও লেগুনার দখলে ছিল। এ ছাড়া ভুলতা উড়ালসড়কের নিচের মহাসড়ক দখল করে গড়ে তোলা অন্তত ১২টি অবৈধ স্ট্যান্ডে শত শত যানবাহন পার্কিং করে রাখতে দেখা যায়। উড়ালসড়কের নিচের মহাসড়কের দুই পাশ ছিল হকারদের দখলে।

মহাসড়কটির ১২ কিলোমিটার জুড়েই তিন চাকার ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায়। উল্টো পথে যান চলাচল ও যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা তো ছিলই। ঢাকা থেকে কিশোরগঞ্জে চলাচলকারী যাতায়াত পরিবহনের বাসচালক ইমরান হোসেন বলেন, ঈদযাত্রার আগেই ১২ কিলোমিটার সড়কে তারা যানজটে ভুগছেন। ঈদে ঘরমুখী মানুষ বড় ভোগান্তিতে পড়বেন।

মহাসড়কটির নারায়ণগঞ্জ অংশের দায়িত্বে থাকা ভুলতা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ (পরিদর্শক) আলী আশ্রাফ মোল্লা বলেন, ‘ভুলতা ও গোলাকান্দাইল মোড় এরই মধ্যে হকারমুক্ত করা হয়েছে। অবৈধ স্ট্যান্ড, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা, তিন চাকার যান চলাচল বন্ধসহ যানজটের সব কারণ চিহ্নিত করে এরই মধ্যে সেগুলোর প্রতিকারে কাজ শুরু করেছি।’

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লা অংশে ২৮টি স্থানকে যানজটপ্রবণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ মহাসড়কের নারায়ণগঞ্জ অংশের যে ১১টি স্থানে যানজটের আশঙ্কা করা হচ্ছে, এর মধ্যে ঢাকার সাইনবোর্ড বাসস্ট্যান্ড, কাঁচপুর সেতুর পূর্ব ঢাল, মদনপুর মোড়, মোগরাপাড়া মোড় ও মেঘনা টোলপ্লাজা অন্যতম।

অবশ্য মহাসড়কটি ছয় লেনে উন্নীত করার পর বেশ কিছু ইউটার্ন ও ইউলুপ তৈরি করা হয়েছে। দূরপাল্লার যানবাহনের জন্য চারটি দ্রুতগতির লেন রয়েছে। তা ছাড়া কাঁচপুরে ওভারপাস এবং সাইনবোর্ড, মৌচাক, শিমরাইল, মদনপুর ও মদনগঞ্জে পদচারী-সেতু তৈরির পর এখন আগের মতো যানজটের আশঙ্কা নেই।

সরেজমিনে মহাসড়কটির সাইনবোর্ড থেকে মোগরাপাড়া পর্যন্ত সার্ভিস লেনে এলোমেলো গাড়ি পার্কিং ও তিন চাকার যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এটি ঈদযাত্রায় সার্ভিস লেন ধরে চলাচলকারী যানবাহনগুলোর জন্য যানজটের কারণ হতে পারে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের কুমিল্লা অংশে ১৭টি স্থানে যানজট হতে পারে বলে ২১ মার্চ সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) এক সভায় উঠে আসে। স্থানগুলো হলো- মেঘনা টোলপ্লাজা, বলদাখাল, গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাসস্ট্যান্ড, ইলিয়টগঞ্জ, সুয়াগাজী বাজার, কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলা কমপ্লেক্সের সামনের এলাকা, নুরজাহান হোটেলের সামনের অংশ, নন্দনপুর কোটবাড়ী ইউটার্ন, জাগুরঝুলি, আলেখারচর, সেনানিবাস মোড়, নাজিরাবাজার ইউটার্ন, নিমসারবাজার ইউটার্ন, চৌদ্দগ্রামবাজার ও বিসিক মোড়।

ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করা নিয়ে গতকাল কুমিল্লা অঞ্চল হাইওয়ে পুলিশের একটি সভা হয়েছে। কুমিল্লা অঞ্চলের হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল বলেন, ‘এ জেলার যানজটপ্রবণ এলাকাগুলো আমাদের চিহ্নিত করা আছে। ঈদযাত্রার সময় সেখানে নজরদারি বাড়বে।’

টাঙ্গাইলের সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কে উত্তরবঙ্গগামী ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তির আশঙ্কা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সড়ক দুই লেনবিশিষ্ট। পাশাপাশি রাস্তার দুপাশের ছোট-বড় বাজার ও সংযোগ সড়কে বাড়তি যানবাহনের চাপে ভোগান্তি বাড়বে। এ ছাড়া এ সড়কে ৬ লেনের কাজ চলমান থাকায় যানবাহন চলাচল বিঘ্ন হতে পারে।

হানিফ পরিবহনের চালক আবদুর রহমান বলেন, এ রাস্তায় অনেক চালক আছেন, যারা ওভারটেক করার সময় রংসাইড দিয়ে প্রবেশ করে। ফলে যানজট লেগে যায়। আমরা চাই, ঈদ সিজনে এ রাস্তায় এক লেনে চলাচল হোক। তাহলে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত অনায়াসেই যাওয়া যাবে।

ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষের ভোগান্তি কমাতে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা জানিয়েছেন টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার। পুলিশ সুপার বলেন, দুর্ভোগ লাঘবের জন্য যাত্রীরা যানজটে আটকা পড়লে মহাসড়কের পাশে পেট্রল পাম্প, হোটেল রেস্তোরাঁগুলোর শৌচাগার যাতে ব্যবহার করতে পারেন সেজন্য তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত সাড়ে ১৩ কিলোমিটার সড়কের পাশে পাম্প বা রেস্তোরাঁ নেই। তাই ওই অংশে ২৫টি অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করা হবে।

এ ছাড়া ইফতার ও সাহরিতে যাতে অসুবিধা না হয়, সেজন্য এলেঙ্গা থেকে সেতু পর্যন্ত যানজটে আটকে পড়া মানুষের মাঝে পানি ও শুকনা খাবার সরবরাহের জন্য জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

রাস্তার কাজ প্রসঙ্গে মোনায়েম গ্রুপের প্রজেক্ট ম্যানেজার মো. রবিউল আওয়াল বলেন, আমাদের কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে। এখন প্রায় ২৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ঈদের আগে আমরা চার কিলোমিটার রাস্তা ছেড়ে দেব।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close