নিজস্ব প্রতিবেদক

  ২২ মার্চ, ২০২৪

ফুটপাত ছাড়িয়ে সড়কেও ব্যবসা

রাজধানীর সড়ক মহাসড়ক তো বটেই; অলিগলিজুড়েও গড়ে উঠেছে বড় বড় শপিং মল। তবু কোনো কোনো এলাকার ফুটপাতে স্বাচ্ছন্দ্যে হেঁটে চলার কথা কল্পনাও করা যায় না। একই অবস্থা কোনো এলাকার সড়কেরও। অবস্থা এমনই যে, যেখানে ফুটপাত, সেখানেই হকার। যেখানে হকার, সেখানেই লাইনম্যান। আর যেখানে লাইনম্যান, সেখানেই চাঁদাবাজি। কেবল ফুটপাত নয়, অনেক এলাকার সড়ক দখল করে চলছে চাঁদাবাজি। গবেষণা বলছে, দুই সিটিতে প্রতি বছর ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজি হয় কমবেশি ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকা।

সম্প্রতি রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকার ফুটপাত এবং সড়কে হকারদের কাছ থেকে চাঁদা তুলতে দেখা যায় এক ব্যক্তিকে। তাকে অনুসরণ করা হয় প্রায় এক ঘণ্টা। এই সময়ের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক দোকান থেকে চাঁদা তুলতে দেখা যায় তাকে। অনুসরণ করতে গিয়েই হঠাৎ দেখা মেলে আরেকজনের। একই হকারদের কাছ থেকে দ্বিতীয় দফা চাঁদা তুলছেন তিনি।

এবার তৃতীয় ব্যক্তির আগমন। দোকান ঘুরে ঘুরে তিনিও ব্যস্ত চাঁদা তুলতে। তবে অনেকটাই কৌশলী। কিছুক্ষণের মধ্যেই আসে চতুর্থ ব্যক্তি। হকারদের সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়া যায়, এই ব্যক্তি নিউমার্কেটের একজন লাইনম্যান।

এবার আসা যাক গুলিস্তানে। গোলাপশাহ মাজারের সামনে দেখা গেল ফুটপাত এবং সড়কে থাকা দোকানে রেকারিংয়ের নামে জরিমানা করা হচ্ছে ১২০০ টাকা করে। হকারদের দাবি দোকান প্রতি লাইনম্যানের চাঁদার বাইরেও গুনতে হচ্ছে অতিরিক্ত টাকা।

কয়েক দিন আগে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র এই সড়কটিতে একপাশে ঘোড়া দাঁড়ানোর জায়গা এবং অন্যপাশে রিকশা দাঁড়ানোর জায়গা উদ্বোধন করেন। সেই জায়গাটিও এখন হকারদের দখলে।

একই অবস্থা মিরপুরেও। এখানকার বেশিরভাগ ফুটপাত বছরের পর বছর হকারদের দখলে থাকলেও কিছু সড়ক স্থায়ীভাবে হারিয়ে গেছে। যেমন নিচের ছবির সড়কটি। এটি মিরপুর ১০ নম্বরে। এই সড়ক দিয়ে এখন আর কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারে না।

অবস্থা দেখে বোঝার উপায় নেই এটি রাস্তা নাকি মার্কেট। যদিও কাগজে-কলমে এটি রাস্তাই আছে। স্থানীয়রাও বলছেন, এক সময় এটি রাস্তাই ছিল। সরকারি এই রাস্তাটি ভাড়া দেওয়া হয়েছে হকারদের কাছে। কিন্তু সরকারি রাস্তা ভাড়া দিলো কারা? মুখ খুলতে নারাজ হকাররা। অথচ দিনের পর দিন, মাসের পর মাস তারা নিয়মিত দিয়ে যাচ্ছেন চাঁদা। এখানে একটি দোকান নিতে ভিটে ভাড়া দিতে হয় ৫০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা। আর ফুটপাত বাণিজ্যের পেছনে আছে কয়েকজন কাউন্সিলর। হকাররা জানান, প্রতিদিন ৩০০ টাকা করে দিতে হয় তাদের। যা পুলিশ এবং রাজনীতিবিদদের মধ্যে ভাগাভাগি হয়। এমনকি স্থানীয় সংসদ সদস্যও তাদের কাছে অসহায়।

এসময় জহিরুল ইসলাম মানিক নামে এক নেতার কথাও বলেন হকাররা। যিনি এই পুরো এলাকা নিয়ন্ত্রণ করেন। মাসের টাকা মাসে বাড়িতে বসেই পেয়ে থাকেন। এমনকি এই রাস্তা বন্ধের পেছনেও তার হাত আছে। এই চাঁদার হার আবার রোজার মাসে পাল্টে যায়। স্বাভাবিক সময়ে যে হারে চাঁদা দিতে হয়, ঈদের সময় তা বেড়ে যায় কয়েকগুণ- এমন দাবি করেছেন বাংলাদেশ হকার্স লীগের সভাপতি আবুল কাসেম। তিনি বলেন, যেখানে চাঁদা আছে ১০০, সেখানে হয়ে যায় ৪০০। যেখানে আছে ১ হাজার সেখানে হয়ে যায় কমপক্ষে আড়াই থেকে ৩ হাজার।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাত বছরে আগের গবেষণা বলছে, ঢাকার সড়কে গড়ে উঠা ফুটপাতের চাঁদার টাকা সবাই পায়।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ বছরে আগের এক গবেষণা বলছে, ফুটপাতকেন্দ্রিক চাঁদাবাজির টাকা যায় পুলিশ, রাজনৈতিক ব্যক্তি এবং লাইনম্যানদের পকেটে। বছরে চাঁদাবাজি হয় ৩ হাজার ৭০০ কোটি টাকারও বেশি।

তবে রমজানে যানজটে হিমশিম খাওয়ায় এই মাসে কোনো ব্যবসায়ীকে সড়কে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে দেওয়া হবে না বলে জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) ট্রাফিক বিভাগ। গতকাল বৃহস্পতিবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত ‘পবিত্র রমজান মাসে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ও নির্দেশনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানানো হয়।

ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মুনিবুর রহমান বলেন, রমজান মাসে কোনো ব্যবসায়ী সড়কে যাতে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড পরিচালিত করতে না পারেন সেজন্য তারা কঠোর ব্যবস্থা নিয়েছেন।

মুনিবুর রহমান বলেন, রমজানে বেলা সাড়ে ৩টায় অফিস ছুটি হয়। কিন্তু দেখা যায়, ইফতারের আগ পর্যন্ত অধিকাংশ যানবাহন তড়িঘড়ি করে গন্তব্যস্থলে রওনা হয়। এতে শহরের গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইন্টারসেকশনে অযাচিত যানজট তৈরি হয়। তাই অফিস ছুটির সময় অর্থাৎ বেলা সাড়ে ৩টা থেকে বা এর কাছাকাছি সময় থেকে বাসার উদ্দেশে রওনার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান তিনি। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ রুটের সড়কের পাশে গাড়ি পার্কিং করা হয়, যা সড়কের প্রশস্ততা কমিয়ে দেয়। যানবাহন চলাচল বাধাগ্রস্ত করে। রমজানের শুরু থেকে ট্রাফিক বিভাগ পার্কিংয়ের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে। সড়কের পাশে অযাচিত পার্কিং না করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে, বলেন ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের অতিরিক্ত কমিশনার।

নির্ধারিত বাস স্টপেজে না দাঁড়িয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কের টার্নিং পয়েন্টে যাত্রীরা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকেন উল্লেখ করে তিনি আরেও বলেন, এতে সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। যানবাহনের গতি অনেক কমে যায়। যাত্রীদের গণপরিবহনে চলাচলের ক্ষেত্রে নির্ধারিত স্টপেজে গিয়ে অপেক্ষার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অনেক স্টপেজে যাত্রী থাকে না। কিন্তু গণপরিবহনগুলো দীর্ঘ সময় ধরে স্টপেজে অবস্থান নেয়। এতে যানজট তৈরি হয়।

ট্রাফিক পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, পাশের বিভিন্ন ইউনিট থেকে যানবাহন অযাচিতভাবে ডিএমপি এলাকায় প্রবেশ করে যানজট তৈরি করে। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সদস্যদের এ বিষয়ে কড়াভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ডিএমপি এলাকায় ভারী যানবাহন প্রবেশের নির্দিষ্ট সময়সীমা আছে। অনেক সময় এই সময়সীমা না মেনে চালকেরা চলার চেষ্টা করেন, যা যানজটের সৃষ্টি করে। নির্ধারিত সময়সীমার বিষয়টি মেনে চলতে হবে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close