মনিরুল ইসলাম

  ২৪ নভেম্বর, ২০২২

সৌদির বাজপাখি ওয়াইসে প্রতিহত আর্জেন্টিনা

ম্যাচ শুরুর আগে আর্জেন্টিনা পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পাবে এমনটা নিশ্চয়ই ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি কেউ। সবার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল আর্জেন্টিনা কত গোলে জিতবে, মেসি কত গোল করবে। সৌদি আরবকে নিয়ে ছেলেখেলায় মাতবে। এমনটা ব্রাজিল কিংবা অন্যান্য দলের ভক্ত-সমর্থকেরও ভাবনায় ছিল। কিন্তু বাস্তবতার চিত্রনাট্য একেবারেই উল্টো। কল্পনার সঙ্গে মেলেনি একটুখানিও। টানা ৩৬ ম্যাচ অপরাজিত থাকা আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারাল তুলনামূলক বিচারে দুর্বল সৌদি আরব। আকাশ থেকে মাটিতে নামিয়ে দিল। সৌদি আরবের ছন্দময়, গতিময় ফুটবলের কাছে ধরাশায়ী আলবেসিলেস্তা শিবির। তাতে জন্ম দিয়েছে নতুন এক অঘটনের!

এই দিনে অবশ্যই আর্জেন্টিনার তরুণ ফুটবলারদের চেষ্টার কোনো ত্রুটি ছিল না। গোল করার জন্য শেষ অবধি মরিয়া ছিল তারা। ললাটলিখন ভালো ছিল না। তাই জয়ের বন্দরে পৌঁছাতে পারেনি। সৌদি আরবের গোলকিপার মোহাম্মদ আল-ওয়াইস ‘চীনের প্রাচীর’ হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন যেন। একের পর এক মুহুর্মুহু আক্রমণ প্রতিহত করে ম্যাচ সেরা হয়ে গেলেন ওয়াইস। রাতারাতি ‘হিরোর’ তকমা পেয়ে যান ৩১ বছর বয়সি এই গোলকিপার।

তিনি সোদি আরবেরর নামকরা ক্লাব আল হিলালের গোলপোস্টের নিচে অতন্দ্রপ্রহরীর দায়িত্বভার সামলাচ্ছেন। পূর্বে ক্লাব আল শাবাব ও আল আহলিতেও খেলেছিলেন। ২০১৮ সালে রাশিয়াতে অনুষ্ঠিত ফিফা বিশ্বকাপে প্রাথমিক দলে সুযোগ পেয়েছিলেন। উরুগুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ খেলার সুযোগও হয়েছিল। এবার কাতারে প্রথম ম্যাচে ৬ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার এই গোলকিপার চমকে দিয়েছেন গোটা ফুটবল দুনিয়াকে। তার অবিশ্বাস্য, অচিন্তনীয় নজরকাড়া কয়েকটি সেভ চোখেমুখে ঘোরলাগার মতোই ছিল। যার জন্য তিনি প্রশংসার জোয়ারে ভাসছেন সবার। জিতেছেন ম্যাচ সেরা পুরস্কার, সঙ্গে অগণিত ফুটবলপ্রেমীদের হৃদয়ও।

তার এমন বিস্ময়াভিভূত পারফর্ম দেখে ভূয়সী প্রশংসা করে; দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেল২৪-এর সিনিয়র ক্রীড়া সাংবাদিক সাদমান সাকিব বলছিলেন, ‘এক কথায় মনোমুগ্ধকর গোলকিপিং করেছিলেন ওয়াইস। নিশ্চিত কয়েকটি গোল তিনি সেভ করে আর্জেন্টিনার জয়রথ থামিয়ে দিয়েছেন। তাই সৌদির জয়ের সিংহভাগ কৃতিত্ব আমি তাকেই দিচ্ছি। এমন গোলকিপিং একটা দলকে অনেকখানি এগিয়ে দেয়।’

আর্জেন্টিনার পরাজয়ের কারণ জানতে চাওয়াতে তিনি বলেন, ‘আর্জেন্টিনা সৌদির কৌশলের কাছে হেরেছে। মূলত সৌদি কোচ অফসাইডের ফাঁদ পেতেছিল। যাতে আটকা পড়েছিল আর্জেন্টিনার ফুটবলাররা। অন্যদিকে একটা দলের যখন কয়েকটা গোল বাতিলের খাতায় চলে যায়। তখন সে দলের মনোবল অনেকটা ভেঙে যায়। আমার মনে হচ্ছিল, মেসিদের এমন হয়েছে।’

হিসাব বলছে ম্যাচের মোট ১৫টি শট সেভ করেছেন ওয়াইস। নির্ঘাত গোল এমন শটও ঠেকিয়ে দিয়েছেন। এক পর্যায়ে তার এমন জাদুকরী দক্ষতায় মেসিদের হতাশায় নিমজ্জিত করে তুলেছিল।

মেসির কণ্ঠে তাই বেদনার সুর, ‘এমন পরিস্থিতিতে আমার দলের খেলোয়াড়রা কখনো পড়েছে কি না, বলতে পারছি না। এমন ধাক্কা বহু দিন আমরা খাইনি। বিশ্বকাপে এমন শুরু আমাদের জন্য প্রত্যাশিত ছিল না।’

এই পরাজয়ের হতাশা, মলিনতা, দুঃখ ভুলে সামনে আগামী শনিবার মেক্সিকোর বিপক্ষে ঘুরে দাঁড়ানো-ই বড় চ্যালেঞ্জ। নাকি পরাজয়ের গ্লানিবোধ নিয়ে এবারের আসরে থেকে বিদায় হবে। সেটাই এখন দেখার বিষয়।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close