প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২৪ জুন, ২০২২

বন্যা স্থিতিশীল কমেনি দুর্ভোগ

হবিগঞ্জে বন্যা স্থিতিশিল, উলিপুর ও সিরাজগঞ্জে পানি কমলেও, বাড়ছে সংকট। ফরিদপুরে ৫৬টি গ্রামের ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জে নদণ্ডনদীর পানি কমতে শুরু করলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। হাওরে পলি জমায় পানি নামতে সময় লাগবে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মিনহাজ আহমেদ শোভন জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল থেকে খোয়াই নদীর পানি কমছে। প্রতি ঘণ্টায় ১০ সেন্টিমিটার করে কমছে কালনি-কুশিয়ারা নদীর পানি। সবমিলে বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল।

তিনি বলেন, ‘বৃষ্টি না হলে বন্যা পরিস্থিতির আর অবনতি হবে না। তবে হবিগঞ্জের ভাটি এলাকা কিশোরগঞ্জের বিভিন্ন হাওর টইটুম্বুর। এ ছাড়া বানের পানিতে হাওরে পলি জমেছে। তাই পানি নামবে খুব কম গতিতে। আতঙ্ক কমলেও কমেনি দুর্ভোগ। রাস্তাঘাট তলিয়ে থাকায় এখনো পানিবন্দি জেলার ছয় লাখ মানুষ।’

স্থানীয় প্রশাসনের দাবি, হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ, বানিয়াচং, লাখাই, নবীগঞ্জ, হবিগঞ্জ সদর ও মাধবপুর উপজেলার ৫১টি ইউনিয়ন বন্যায় আক্রান্ত হয়েছে। সরকারি হিসাবে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত লোকের সংখ্যা ৭৯ হাজার ৭২০ জন। জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান জানান, ২২৫টি আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন ২৩ হাজার ২৩৫টি পরিবার। দুর্গতদের জন্য ৭০০ টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে।

উলিপুর (কুড়িগ্রাম) : কুড়িগ্রামের উলিপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। উপজেলার হাতিয়া ইউনিয়নের বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধ তলিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকে পড়ায় বানভাসিদের দুর্ভোগ আরো চরম আকার ধারণ করেছে। ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তা নদী বেষ্টিত উপজেলার বজরা, থেতরাই, গুনাইগাছ, দলদলিয়া, হাতিয়া, বুড়াবুড়ি, বেগমগঞ্জ ও সাহেবের আলগা ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দুর্গতরা বাঁধের রাস্তা, উঁচু ও নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে বানভাসিরা। বয়োবৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে তারা পড়েছেন চরম বিপাকে। বিশুদ্ধ পানি, খাদ্য, শুকনো খাবার, ওষুধ ও শিশু খাদ্য ও গবাদীপশুর খাবারের সংকটে পড়েছে বানভাসিরা। এ ছাড়াও বীজতলা, পাটখেতসহ রবি-শস্য এবং কাঁচা-পাকা রাস্তাঘাট পানির নিচে তলিয়ে গেছে। ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগ।

কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গতকাল সকাল ৬টায় ব্রহ্মপুত্র নদের পানি চিলমারী পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩৭ সেমি ও ধরলা নদীর পানি কুড়িগ্রাম সদর পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেমির ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। তবে তিস্তা নদীর পনি কাউনিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ৩০ সেমির নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ৫৮টি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ১৫টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পাঠদান বন্ধ রয়েছে।

ফরিদপুর : ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, ২৪ ঘণ্টায় গোয়ালন্দ পয়েন্টে পদ্মা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার শূন্য পয়েন্ট ১৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফরিদপুর সদর উপজেলা ও চরভদ্রাসন উপজেলা দুটির চর অধ্যুষিত ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ৫৬টি গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকার প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। এ দুটি উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় ১০০০ একর ফসলি জমিতে পানি প্রবেশ করেছে। ফরিদপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী পার্থ প্রতিম সাহা বলেন, কোনো এলাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ভাঙনকবলিত হলে খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। আগামী পাঁচ দিনে তেমন কোনো পানি বৃদ্ধি পাবে না বলে জানান ফরিদপুরের পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ কর্মকর্তা।

সিরাজগঞ্জ : সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার কমলেও তা এখনো বিপৎসীমার ৪৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অপর দিকে কাজিপুর পয়েন্টে পানি আট সেন্টিমিটার কমে বিপৎসীমার ৫৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সিরাজগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, জেলায় শতাধিক বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হলেও ৪৩টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। জেলার কাজিপুর, সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, চৌহালি ও শাহজাদপুর উপজেলার ৩৮টি ইউনিয়নের ৯ হাজার ১০৩টি পরিবারের ৪৪ হাজার ৬২ মানুষ পানিবন্দি জেলা ত্রাণ কর্মকর্তা আকতারুজ্জামান জানান। রাস্তা, ব্রিজ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা না গেলেও জেলায় ৫৬৫ বর্গকিলোমিটার এলাকা বন্যাকবলিত হয়ে পড়েছে। দুর্গতদের জন্য ৭৭১ টন চাল ১৩ লাখ ৮ হাজার ৫০০ টাকা মজুদ আছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close