প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ১১ মে, ২০২২

বিক্ষোভের আগুনে জ্বলছে শ্রীলঙ্কা

মন্ত্রী-এমপিদের ওপর হামলা, পালালেন রাজাপাকসে

নজিরবিহীন অর্থনৈতিক সংকটে পড়া শ্রীলঙ্কা জ¦লছে বিক্ষোভের আগুনে। অব্যাহত বিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে পদত্যাগ করলে হাজার হাজার বিক্ষোভকারীর হামলার মুখে সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে সপরিবারে পালিয়ে যান তিনি। শুধু তাই নয়, দেশটির মন্ত্রী-এমপিসহ রাজনীতিবিদরা হামলার শিকার হচ্ছেন। মারধর করে কয়েকজনের কাপড়চোপড়ও খুলে নেয় বিক্ষোভকারীরা। এছাড়া অর্ধশতাধিক রাজনীতিবিদের বাড়িতে আগুন দিয়েছে বিক্ষোভকারীরা। দেশব্যাপী কারফিউ সত্ত্বেও এসব বিক্ষোভ-সহিংসতায় গত দুই দিনে প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত সাতজন, আহত হয়েছেন দুই শতাধিক। এখন মাহিন্দা রাজাপাকসের ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন বিক্ষোভকারীরা। তবে বিক্ষোভ দমনে কারফিউয়ের পাশাপাশি সেনা ও পুলিশ বাহিনীকে জরুরি ক্ষমতা দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। গতকাল মঙ্গলবার পাওয়া এই ক্ষমতাবলে বিনা পরোয়ানায় গ্রেপ্তারের সুযোগ পাবে নিরাপত্তা বাহিনী। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।

শ্রীলঙ্কায় বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হলেও গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সমর্থকরা বাইরে থেকে রাজধানীতে প্রবেশের চেষ্টা এবং বিক্ষোভকারীদের ওপর চড়াও হলে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। এ সংঘর্ষে সাত বিক্ষোভকারী নিহত এবং দুই শতাধিক আহত হওয়ার পর পদত্যাগে বাধ্য হন প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসে। তবে তাতেও শান্ত হয়নি বিক্ষোভকারীরা। দেশটির প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসেরও পদত্যাগ চাচ্ছেন তারা।

কারফিউ উপেক্ষা করে হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গত সোমবার রাভভর সরকারি দলের নেতাদের বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে আগুন ধরিয়ে দেয়। বিক্ষোভকারীরা পদত্যাগকারী প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের সরকারি বাসভবনের প্রধান ফটক ভেঙে ঢোকার চেষ্টা করলে সেনাবাহিনী তাকে সেখান থেকে উদ্ধার করে।

বিক্ষোভকারীরা রাজাপাকসের পৈতৃক ভিটায় অগ্নিসংযোগ করে। জ্বালিয়ে দিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন এমপি ও একজন বিচারপতির বাড়িও।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে দেখা গেছে, জ্বলন্ত বাড়িগুলো ঘিরে উল্লাস করছে মানুষজন। প্রেসিডেন্টের সরকারি বাসভবনের চারপাশের এলাকাতেও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এদিকে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন টেম্পল ট্রিতে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে আশ্রয় নিয়েছিলেন মাহিন্দা রাজাপাকসে। কিন্তু দুতলা ওই ভবনে হামলা চালায় বিক্ষোভকারীরা। পরে সেনাবাহিনী সেখানে অভিযান চালিয়ে মাহিন্দা রাজাপাকসে এবং তার পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করে। ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়, সেনা হেলিকপ্টারে করে একটি সামরিক ঘাঁটিতে গিয়ে আশ্রয় নেয় রাজাপাকসে পরিবার।

তবে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভি জানিয়েছে, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রাজাপাকসে দ্বীপরাষ্ট্রটির উত্তর-পূর্ব অংশের ত্রিনকোমালি নৌঘাঁটিতে আশ্রয় নিয়েছেন। পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যদের হেলিকপ্টারে করে নৌঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে রাজধানী কলম্বো থেকে প্রায় ২৭০ কিলোমিটার দূরের এই নৌঘাঁটিও বাইরে থেকে ঘিরে ফেলেছে বিক্ষোভকারীরা।

এমপিদের পালানো ঠেকাতে বিমানবন্দর অবরোধ : শ্রীলঙ্কায় চলমান বিক্ষোভ-সহিংসতার মধ্যে সংসদ সদস্যরা যেন দেশ ছেড়ে পালাতে না পারেন, সেজন্য দেশটির প্রধান বিমানবন্দর অবরোধ করেছেন সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা। কাতুনায়েকে অবস্থিত শ্রীলঙ্কার প্রধান বিমানবন্দর অবরোধ করেছে একদল তরুণ। বন্দরনায়েক আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের প্রবেশদ্বারে গাড়ি রেখে অবস্থান নিয়েছে তারা। চলমান বিক্ষোভের মধ্যে এমপিদের দেশত্যাগ ঠেকাতে এ ব্যবস্থা নিয়েছে বিক্ষোভকারীরা।

এর আগে সোমবার বিক্ষোভে অগ্নিগর্ভ শ্রীলঙ্কায় এক এমপির অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন আরেকজন। শ্রীলঙ্কার পুলিশ জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা কলম্বো উপকণ্ঠে সরকার দলীয় এমপি অমরাকীর্তি আথুকোরালার গাড়িতে হামলা চালালে তিনি দুজনকে গুলি করেন। এতে একজন মারা যান। এরপর সরকারবিরোধী বিক্ষোভকারীরা তাকে ঘিরে ধরেন। পরে নিজের পিস্তল দিয়ে আত্মহত্যা করেন ওই সংসদ সদস্য।

সেনা-পুলিশের হাতে জরুরি ক্ষমতা : পদত্যাগ করা প্রধানমন্ত্রী মাহিন্দা রাজাপাকসের ছোট ভাই প্রেসিডেন্ট গোটাবায়া রাজাপাকসে পরোয়ানা ছাড়াই জিজ্ঞাসাবাদ ও গ্রেপ্তারের ক্ষমতা দিয়েছেন নিরাপত্তা বাহিনীকে।

মঙ্গলবার সরকারি নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সেনাবাহিনী কাউকে গ্রেপ্তার করলে পুলিশের কাছে হস্তান্তরের আগে ২৪ ঘণ্টা নিজেদের হেফাজতে রাখতে পারবে। ব্যক্তিগত সম্পত্তি এবং যানবাহনে তল্লাশি চালাতে পারবে।

নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ‘একজন পুলিশ অফিসার কর্তৃক গ্রেপ্তার যেকোনো ব্যক্তিকে নিকটস্থ থানায় নিয়ে যাওয়া হবে।’

জরুরি ক্ষমতার অপব্যবহারের সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন কয়েকজন বিশ্লেষক। কলম্বোভিত্তিক থিংক ট্যাংক সেন্টার ফর পলিসি অল্টারনেটিভ কর্মকর্তা ভবানি ফনসেকা বলেন, ‘জরুরি ক্ষমতা এবং কারফিউ উভয়ই বলবৎ থাকা অবস্থায় এর অপব্যবহার নজরদারিতে রাখবে কে?’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close