প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ২২ নভেম্বর, ২০২১

এশিয়ায় অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়াচ্ছে যুদ্ধের ঝুঁকি

বিশ্বের দুই পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার দ্বন্দ্ব-উত্তেজনা এক দিনের নয়। তবে দুই পরাশক্তির উত্তেজনার জেরে সম্প্রতি অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েছে এশিয়ার দেশগুলো। দেশগুলোর মধ্যে চলছে নীরব সামরিকীকরণ, অত্যাধুনিক সব যুদ্ধ সরঞ্জাম সংগ্রহের পাল্লা। এ অবস্থায় আঞ্চলিক নিরাপত্তার পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে স্থিতিশীলতাও। বিশেষ করে তাইওয়ান ইস্যুতে উত্তেজনা, চীনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত দ্বন্দ্ব, ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের চিরবৈরিতা, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিযোগিতা যুদ্ধের উত্তেজনাকে বাড়িয়ে তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটি ভুল হিসাব পুরো অঞ্চলে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিতে পারে। লড়াই বেঁধে যেতে পারে সীমান্ত কিংবা পুরোনো কোনো শত্রুতাকে কেন্দ্র করে।

সম্প্রতি বিশ্বের নজর কেড়েছে চীন ও তাইওয়ানের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা। চীনের শত শত যুদ্ধবিমান তাইওয়ানের আকাশে মহড়া দিয়েছে। তাইওয়ানকে নিজেদের ভূমি দাবি করা চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং নিজেই হুমকি দিয়েছেন, মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে অঞ্চলটিকে একীভূত করার।

চীনের ক্রমাগত সামরিক হুমকির মুখে চলতি সপ্তাহে নিজস্ব বিমানবাহিনীতে সর্বাধুনিক এফ-১৬-ভি ফাইটার জেট যুক্ত করেছে তাইওয়ান। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে আরো ৬৬টি ফাইটার জেট কিনেছে তাইপে, যা ২০২৩ সালে দ্বীপটির বহরে যুক্ত হবে।

শি জিনপিংয়ের অধীনে চীন সামরিক শক্তি দ্রুততার সঙ্গে বৃদ্ধি ও বিস্তার করেছে। প্রতিরক্ষা খাতে ২০২১ সালে দেশটির ব্যয় ছাড়িয়েছে ২০০ বিলিয়ন ডলার। চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মির হাতে এখন রয়েছে বিশ্বের সবচেয়ে বড় নৌবাহিনী, প্রযুক্তিগত সুবিধা, আছে স্টিলথ যুদ্ধবিমান। আছে ক্রমবর্ধমান পারমাণবিক অস্ত্র। বেইজিংয়ের দাবি, সেনাবাহিনীতে সবে আধুনিকায়ন শুরু হয়েছে। যদিও সেই শুরুর মধ্যে আছে সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্রও।

দক্ষিণ চীন সাগরে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় উঠে-পড়ে লেগেছে বেইজিং। সম্প্রতি সেখানে টহলে নামিয়েছে ৩০০ নৌযান। একই রকমভাবে কৌশলগত নৌ চলাচলের পথটায় আগ্রাসীভাবে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে অভিন্ন সীমান্ত আছে এমন দেশগুলো। অঞ্চলটিতে এক ‘সিকিউরিটি ডিলেমা’ বা নিরাপত্তার উভয় সংকটে আছে। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, বেসামরিক নৌযানের আড়ালে আধিপত্য বাড়াতে চায় চীন।

এদিকে পূর্ব এশিয়ায় চীন ও উত্তর কোরিয়ার হুমকির প্রতিক্রিয়ায় সামরিক বাহিনীকে দ্রুত আধুনিকায়ন করছে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়া। আগামী অর্থবছরে সামরিক খাতে অর্থ বরাদ্দ দ্বিগুণ করার ঘোষণা দিয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী। ২০২২ সালের মধ্যে বাড়ানো হবে ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যাও। গত মাসে নতুন একটি ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। ২০৩৩ সালে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় নিজেদের প্রথম বিমানবাহী রণতরী সংযুক্তির কথা ভাবছে দেশটি।

দক্ষিণ এশিয়ায় সীমান্ত নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে দীর্ঘদিন ভারত ও চীনের মধ্যে উত্তেজনা চলে আসছে। গত বছরের ১৫ জুন লাদাখের গালওয়ান উপত্যকায় চীনা সেনাবাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ভারতের অন্তত ২০ সেনাসদস্য নিহত হন। এরপর থেকেই এ সীমান্তে সেনাবাহিনীকে শক্তিশালী করতে নানা পদক্ষেপ নিয়েছে ভারত। এমনিতেই দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা চলছে ভারতের। তবে চীনের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর সীমান্তে সামরিক বিনিয়োগ বাড়িয়ে চলেছে ভারত।

ভারতীয় কূটনীতিকরা জানিয়েছেন, রাশিয়ার অত্যাধুনিক আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ হাতে পেতে যাচ্ছে ভারত। ভারতের লাদাখ ও অরুণাচল প্রদেশে চীনের সঙ্গে সীমান্তের কাছে এস-৪০০ মোতায়েন করা হবে। এস-৪০০ শত্রুপক্ষের সীমানায় ৪০০ কিলোমিটার অভ্যন্তরে হামলা চালাতে পারে। এস-৪০০ মোতায়েনের ফলে চীনা সেনাবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমানবাহিনীকে জবাব দেওয়ার সক্ষমতা পেতে ভারত।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সব মিলিয়ে ক্রমশ সামরিকীকরণের হুমকিতে এশিয়া পরিণত হচ্ছে ‘পাউডার কেজ’-এ। গোটা অঞ্চলে সব সময়ই উত্তেজনা থাকছে তুঙ্গে। পুরো অঞ্চল একেবারে প্রান্তসীমায় এসে পৌঁছেছে।

এ বিষয়ে অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইনস্টিটিউটের সিনিয়র বিশ্লেষক ম্যালকম ডেভিস বলেছেন, ‘এশিয়া এমন এক এলাকা, যেখানে দেশগুলো তাদের প্রতিবেশীদের শক্তির জবাব দিতে নিজেদের সামরিক শক্তি বাড়াচ্ছে, শক্তির জানান দিচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘এখানে বড় শক্তিগুলোর মধ্যে বড় এক যুদ্ধের ঝুঁকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা প্রচণ্ড এক সংকটের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। একটি ভুল হিসাব পুরো অঞ্চলকে অগ্নিগর্ভ করে দিতে পারে।’ সিএনএন অবলম্বনে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close