নিজস্ব প্রতিবেদক

  ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২১

নোংরা ‘সিটে’ স্বাস্থ্যঝুঁকি

বাস নামেই গণপরিবহন, আসলে গণদুর্ভোগের আরেক নাম। অনেক দুর্ভোগের মতো রাজধানীর গণপরিবহনও যাত্রীবান্ধব ও সুবিধাজনক নয়। বিশেষ করে আসন বা সিটগুলো ময়লা জমে তেলচিটচিটে হয়ে থাকে। এতে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। শুধু ‘মাস্ক ছাড়া বাসে ওঠা নিষেধ’ লিখেই স্বাস্থ্যবিধি মানায় দায় সারছে কর্তৃপক্ষ। ফলে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিপরীতে ঝুঁকি নিয়েই বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে নগরবাসীকে।

এদিকে কোনো বাসই নারীদের স্বস্তিমতো বসার উপযোগী নয়। বনশ্রী থেকে মিরপুরে নিয়মিত যাতায়াত করা শিমু খান বলেন, বাসগুলো একদমই যাত্রীবান্ধব ও সুবিধাজনক নয়। নারীদের জন্য সেটা আরো কষ্টকর। সিট অ্যারেঞ্জমেন্ট নিয়েও আপত্তি তার। তিনি বলেন, নারীদের জন্য সিট ইঞ্জিনের পাশে রাখা, এটা আমার খুবই আপত্তির জায়গা।

শিমু আরো বলেন, বাসে উঠলেই নারীদের বলা হয় ড্রাইভারের পাশে ইঞ্জিনের ওপরে মেয়েদের সিট, সেখানে বসেন। অথচ সে জায়গাটা প্রচন্ড গরম থাকে। এমনকি গরমের কারণে ঠিকঠাক বসাও যায় না। আর সেখানে বসতে অস্বীকৃতি জানালে চালক-হেলপারসহ যাত্রীদের কটূক্তি, খারাপ আচরণ সহ্য করতে হয়।

সেইসঙ্গে সিটগুলো এমনভাবে সেট করা, কোনোভাবেই স্বস্তি নিয়ে বসার সুযোগই নেই। দুজন যাত্রী যদি পা সমান করে বসতে চান, সেটা সম্ভব হবে না। বাসের সিট অ্যারেঞ্জমেন্টে এখন কিছুটা পরিবর্তন এলেও এখনো কিছু বাস রয়েছে, যেখানে ইঞ্জিনের ওপর কেবল একটি কাঠের তক্তার মতো বিছানো। শক্ত এ কাঠের ওপর বসে থাকাটা অত্যন্ত অস্বাস্থ্যকর। এছাড়া বাসগুলোতে নারীদের যাতায়াত সব সময়ই বিপজ্জনক। যৌন হয়রানির কারণে পাবলিক বাস সব সময়ই নারীর কাছে এক আতঙ্ক। সেই সঙ্গে রয়েছে বাসের কাঠামো। যেটা অনুচ্চারিত থেকে গেছে এত বছর। নারী যাত্রীরা বলছেন, সিট চাপিয়ে সংখ্যা বাড়ানো হয় বাসে। এ কারণে সিটে বসতে হয় বাঁকা হয়ে। এ ছাড়া রয়েছে নারীর জন্য নির্ধারিত চালকের পাশের জায়গা, যেখানে বসতে হয় ইঞ্জিনের ওপরে।

এই বিষয়ে চিকিৎসকরা বলছেন, বাসে যেভাবে নারীদের বসতে হয় সেটা শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে এটা মারাত্মক আকার ধারণ করে।

ইঞ্জিনের ওপরে বসে থাকা অবশ্যই একটি ‘এনভায়রনমেন্টাল হ্যাজার্ড’ উল্লেখ করে ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরো সায়েন্স ও হাসপাতালের নিউরো সার্জারি বিভাগের অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ জাহেদ হোসেন বলেন, সমস্যা তো হবেই। পা যখন ছড়িয়ে বসা যাবে না, সেখানে কিছু সমস্যা তৈরি তো হবেই। সেটা তাৎক্ষণিক যতটা না বোঝা যাবে, তার চেয়ে বেশি ভোগান্তি হবে বয়স বাড়ার পর। পা ব্যথা হবে, মাসল সঠিকভাবে কাজ করবে না, মাসলক্র্যাম্ব করবে- এগুলো ভবিষ্যতে বড় ভোগান্তি তৈরি করবে।

আর স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. বিলকিস চৌধুরীর মতে, গরম ইঞ্জিনের ওপর দিনের পর দিন যদি কোনো গর্ভবতী নারীকে যাতায়াত করতে হয়, তাহলে তার গর্ভের সন্তান জরায়ুর ভেতরেই মারা যেতে পারে। এটা অনেক বড় এক সমস্যা, যেটা এতদিন খুব একটা উচ্চারিত হয়নি। অথচ নিজের অজান্তে বা সামাজিক এক অরাজকতার জন্য গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হচ্ছে তার জন্ম নেওয়ার আগেই।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close