প্রতিদিনের সংবাদ ডেস্ক

  ৩০ জুলাই, ২০২১

সতর্ক সংকেত বহাল

ভারী বর্ষণে দুর্ভোগ ক্ষয়ক্ষতি

গতকাল সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে, ঢাকা, বরিশাল, রাজশাহী, চট্টগ্রাম ও খুলনা বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

লঘুচাপের প্রভাবে গতকাল সকাল ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশাল বিভাগের কোনো কোনো জায়গায় অতি ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ সময় সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয়েছে মোংলায় ২৪৫ মিলিমিটার। এছাড়া চট্টগ্রামে ১৪৯, কুতুবদিয়া ৯৬, কক্সবাজারে ৮৭, খেপুপাড়ায় ৭৫, পটুয়াখালীতে ৭৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।

আবহাওয়া অফিস গতকাল জানিয়েছে, প্রবল মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলো জারি করা ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত বহাল রাখা হয়েছে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরগুলোকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে।

পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, বাংলাদেশের দক্ষিণণ্ডপশ্চিমাঞ্চল ও এর কাছাকাছি এলাকায় অবস্থানরত সুস্পষ্ট লঘুচাপটি বর্তমানে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ও এর কাছাকাছি পশ্চিমবঙ্গ এলাকায় অবস্থান করছে। এটি দক্ষিণণ্ডপশ্চিম দিকে অগ্রসর হচ্ছে। মৌসুমি বায়ুর অক্ষের বাড়তি অংশ পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, বিহার, পশ্চিমবঙ্গ, সুস্পষ্ট লঘুচাপের কেন্দ্রস্থল বাংলাদেশ হয়ে আসাম পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। মৌসুমি বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রবল অবস্থায় বিরাজ করছে।

বৃষ্টিপাতে চট্টগ্রাম নগরীর অধিকাংশ এলাকা পানিতে নিমজ্জিত, বান্দরবানের নিম্নঞ্চল ডুবে গেছে, সেখানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এছাড়া পটুয়াখালী ও খুলনায় বৃষ্টিপাতে ব্যাপক দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া গেছে। পদ্মা নদী উত্তাল থাকায় শিমুলিয়া বাংলাবাজার নৌরুটে ফেরি বন্ধ করা হয়েছে। প্রতিনিধি ও ব্যুরোর পাঠানো রিপোর্ট

চট্টগ্রাম : গতকাল বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, বহদ্দারহাটের সিটি মেয়র এম রেজাউল করিমের বাড়ির নিচতলা থেকে ফ্লাইওভারের নিচের সড়কের একাংশ কোথাও হাঁটু কোথাও কোমর পানিতে ডুবে আছে। একই পূর্ব ষোলশহর ওয়ার্ডের এক কিলোমিটার, বারাইপাড়া, চেয়ারম্যান ঘাটা, বাকলিয়া প্রভৃতি এলাকার ঘরবাড়িতে পানি প্রবেশ করেছে। নগরীর কাপাসগোলা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক, হালিশহর, চকবাজার প্রভৃতি এলাকার চিত্র একই। এসব এলাকায় সড়কগুলো হাঁটুপানিতে ডুবে থাকতে দেখা গেছে। বিভিন্ন জরুরি কাজে ঘরের বাইরে ব্যাংক, হাসপাতাল, টিকা কেন্দ্র, কাঁচাবাজার এবং অফিসমুখী মানুষকে গন্তব্যে পৌঁছতে দুর্ভোগের সীমা ছিল না। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৬৬ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করেছে বলে জানায় আবহাওয়া অফিস।

খুলনা : তিন দিনের টানা ভারী বর্ষণে খুলনার উপকূলবর্তী পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিম্নাঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। চিংড়ি ঘের, আমন বীজতলা ও ফসলি জমি তলিয়ে যায়। বেশ কয়েকটি কাঁচাঘরও ধসে পড়ে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, টানা বর্ষণে পাইকগাছা পৌরসভা, গদাইপুর, রাড়ুলী, চাঁদখালী, লস্কর, কপিলমুনি ও হরিঢালীসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল পানিতে তলিয়ে গেছে।

রাড়ুলী ইউপি চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ গোলদার জানিয়েছেন, রাড়ুলীর মালোপাড়ার ৮/১০টি মাটির ঘর ভেঙে কপোতাক্ষ নদে চলে গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, খুলনার কয়রা উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থই থই করছে চারদিকে। ঘের বাঁচাতে ব্যস্ত সময় পার করছে মৎস্য চাষিরা। কেউ মাটি দিয়ে রাস্তা উঁচু করছে, কেউ বা নেট জাল দিয়ে মৎস্য ঘের রক্ষা করতে ব্যস্ত রয়েছেন।

উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি গ্রামের মৎস্য চাষি হরষিত মন্ডল বলেন, আমার উপার্জনের উৎস মৎস্য ঘের। কিন্তু দুই দিনের বৃষ্টিতে সব ভেসে গেছে। সকাল থেকে ঘেরের রাস্তায় নেটজাল দিচ্ছি। বৃষ্টি থামছে না। থামলে হয়তো ঘেরটি বাঁচাতে পারতাম।

কয়রা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, দুর্ভোগ যেন পিছু ছাড়ছে না। কখনো নোনা পানির তোড়ে আবার কখনো অতিবৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। পুরো ইউনিয়নের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। বিশাল এ এলাকার পানি নিষ্কাশন কিছুসংখ্যক স্লুইসগেট দিয়ে সম্ভব হচ্ছে না।

তিনি আরো বলেন, কয়রায় শুষ্ক মৌসুমে নেই সেচব্যবস্থা। বর্ষা মৌসুমে নেই পানি নিষ্কাশনের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। ধসে যাওয়ার সাড়ে তিন বছরেও নির্মাণ হয়নি কয়রা সদরের গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন স্লুইসগেট। পানি নিষ্কাশনের খালগুলো অবৈধ দখলদার আর ইজারাদার বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ ও নেটণ্ডপাটা দিয়ে পানির প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করছে।

বান্দরবান : তিন দিনের টানা বর্ষণে ডুবল বান্দরবান শহরের নিম্নাঞ্চল। এছাড়াও ডুবেছে লামা, আলীকদম এবং নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সড়ক ও নিম্নাঞ্চল। এতে বন্ধ হয়ে গেছে সব ধরনের যান চলাচল। ভারী বর্ষণে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে জেলাজুড়ে। এছাড়াও পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন প্রায় অর্ধলাখ মানুষ। নতুন করে প্লাবিত হচ্ছে বিভিন্ন এলাকা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বান্দরবান পৌরসভার আর্মিপাড়া, মেম্বারপাড়া, হাফেজঘোনা, শেরেবাংলা নগর, বনানী সমিল এলাকা, ইসলামপুর, কালাঘাটার ড্রাইভার পাড়া, ক্যাচিংঘাটাসহ শহরের নিম্নাঞ্চল ডুবে গেছে। বৃষ্টি না থামায় এসব এলাকার অবস্থার অবনতি হচ্ছে। এছাড়াও লামাণ্ডআলীকদমের লাইনঝিরি, শিলেরতুয়া, সিবাতলী, দরদরাঝিরি এলাকা, রুমা, থানচি এবং নাইক্ষ্যংছড়ির বিভিন্ন সড়ক ও নিম্নাঞ্চল ডুবে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

জেলা প্রশাসক ইয়াসমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, ‘বন্যাদুর্গতরা বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র ও বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। এছাড়াও সব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে স্কুলণ্ডকলেজ পরিষ্কার করে খুলে দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

কলাপাড়া (পটুয়াখালী) : পটুয়াখালী কুয়াকাটা সংলগ্ন বঙ্গোপসাগর উত্তাল রয়েছে। বাতাসের চাপ ও পানির উচ্চতা ৩ থেকে ৪ ফুট বৃদ্ধি পেয়েছে। উত্তাল ঢেউয়ের ঝাপ্টায় ক্ষতণ্ডবিক্ষত হচ্ছে কুয়াকাটা সৈকতের বেলাভূমি। টানা ভারী বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল। সবচেয়ে বড় ক্ষতির মুখে পড়েছে মাছ ও মৌসুমি সবজি চাষিরা। তলিয়ে গেছে অধিকাংশ বীজতলা।

মুন্সীগঞ্জ : বৈরী আবহাওয়ায় শিমুলিয়াণ্ডবাংলাবাজার নৌরুটে সব ধরনের ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌণ্ডপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) শিমুলিয়াঘাট ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মো. ফয়সাল গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

তিন বলেন, ‘সকাল থেকে নৌরুটে সাতটি ফেরিযোগে যানবাহন ও যাত্রী পারাপার হলেও দুপুর ১২টার দিকে পদ্মায় তীব্র স্রোত ও বাতাসে নদী উত্তাল হতে শুরু করলে ফেরি চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বাতাসের কারণে যে পর্যন্ত নদী উত্তাল থাকবে, সেই পর্যন্ত ফেরি চলাচল বন্ধ থাকবে।’

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close