আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ১১ আগস্ট, ২০২০

বারবার বদলাচ্ছে উপসর্গ

আরো ভয়ংকর হচ্ছে করোনা

বার বার উপসর্গ বদলে যাওয়ায় আরো ভয়ংকর হচ্ছে করোনাভাইরাস বা কোভিড-১৯। বিশ্বে প্রাণঘাতী এই ভাইরাসে আক্রান্তের সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। জ্বর, কাশির সঙ্গে করোনাভাইরাসের আরো তিনটি উপসর্গের কথা আগেই জানিয়েছে দিয়েছে মার্কিন স্বাস্থ্য সংস্থা সিডিসি। ফলে আক্রান্তের সংখ্যা যত বাড়ছে, নানা ধরনের উপসর্গও ততই সামনে আসছে। নতুন তিনটি নিয়ে সিডিসির তালিকায় এখন উপসর্গের সংখ্যা ১২টি। জ্বর, কাশির পাশাপাশি নাক থেকে ক্রমাগত পানি ঝরা, সারাক্ষণ বমি বমি ভাব এবং ডায়রিয়ার মতো অত্যন্ত সাধারণ উপসর্গগুলোও এখন করোনার লক্ষণ।

তবে অদৃশ্য এই শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়েও জেরবার গোটা বিশ্ব। গত বছরের ডিসেম্বরে চীন থেকে সংক্রমণ শুরু হওয়া প্রাণঘাতী এই ভাইরাস এ পর্যন্ত ২১৫টি দেশে ছড়িয়েছে। তবে টানা ১০০তম দিনে কোনো নতুন সংক্রমণ নেই নিউজিল্যান্ডে। করোনায় আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। দেশটিতে আক্রান্ত প্রায় ৫২ লাখ, মৃত্যু ১ লাখ ৬৫ হাজারের বেশি। এরপরই অবস্থান ব্রাজিলের। দেশটিতে আক্রান্ত ৩০ লাখ ৩৫ হাজার ৫৮২ জন, মারা গেছে ১ লাখ ১ হাজার ১৩৬ জন। ২২ লাখ নিয়ে আক্রান্তে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভারতে মৃত্যু হয়েছে ৪৪ হাজার ৪৯৯ জনের।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গতকাল সোমবার (বাংলাদেশ সময়) রাত সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৪৬ হাজার ৬২৬ জনে দাঁড়িয়েছে। মারা গেছে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ৯৭৬ জন। তবে করোনা থেকে সুস্থতার হারও কম নয়। ইতোমধ্যেই আক্রান্তদের মধ্যে অধিকাংশই সুস্থ হয়ে উঠেছে। করোনা থেকে সুস্থতার সংখ্যা ১ কোটি ২৯ লাখ ৭২ হাজার ১৩২। করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রে এক দিনে ৫৩ হাজার শনাক্ত হয়েছে। এতে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৫০ লাখ ৩৬ হাজার, নতুন ৬৭০ জনের মৃত্যুতে প্রাণহানি ১ লাখ ৬২ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে আক্রান্তদের ৪০ ভাগই উপসর্গহীন।

দেশটির সাম্প্রতিক এক গবেষণা বলছে, চারটি কারণে আক্রান্তরা উপসর্গহীন হচ্ছেন। প্রথমত মেমোরি টি-সেল, দ্বিতীয়ত শৈশবে দেওয়া বিসিজি জাতীয় টিকা, তৃতীয়ত মাস্ক ব্যবহার এবং চতুর্থত, অ্যাজমা রোগ থাকা। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) জানিয়েছে, মোট আক্রান্তের ৫০ লাখের বেশি মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ উপসর্গহীন। এর কারণ হিসেবে তারা জানায়, ভাইরাস মোকাবিলায় মানুষের শরীরে তৈরি হচ্ছে মেমোরি টি-সেল। যার কারণে করোনাভাইরাসকে চেনা শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করছে মানবদেহ। আর এজন্যই রোগ প্রতিরোধে মানবদেহের জন্য লড়াইটাও সহজ হচ্ছে। একই কথা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রমণ রোগ বিশেষজ্ঞ মনিকা গান্ধীও।

ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত স্বাস্থ্যবিষয়ক এক প্রতিবেদনে আরো বলা হয়েছে, শৈশবে নেওয়া যক্ষ্মার টিকা বিসিজি, ঠা-াকাশির জন্য নিউমোনিয়ার টিকা বা হাম-রুবেলার টিকাও করোনা প্রতিরোধের ঢাল হয়ে দাঁড়াচ্ছে। এদিকে, আমেরিকা ও ইউরোপের অনেক দেশেই করোনা রোগী শনাক্তকরণে কুকুরকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। কুকুররা ঘ্রাণ শুকেই করোনা রোগী শনাক্ত করছে। করোনা মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ব্রাজিল। দেশটিতে গত শনিবার পর্যন্ত ৩০ লাখের বেশি করোনা সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয়েছেন। ওই দিন মৃত্যু ১ লাখ ছাড়িয়েছে।

ব্রাজিলের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গত শনিবার বলেছে, গত শুক্রবার থেকে ওই দিন পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় দেশটিতে ৯ শতাধিক করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই সময়ে নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার। ব্রাজিলে করোনার সংক্রমণ মোকাবিলায় কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় বিভিন্ন সময় সমালোচনার মুখে পড়েছেন প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারো। তবে প্রেসিডেন্ট জাইর দাবি করেছেন, এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় স্পষ্ট নীতি রয়েছে তার সরকারের। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনা রোগী ও মৃত্যুর যে হিসাব ব্রাজিলের সরকার দিচ্ছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে প্রায় ছয় গুণ বেশি। এর অন্যতম কারণ পরীক্ষা কম হওয়া। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে ভারতে নতুন করে ১ হাজার সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দেশটিতে মৃত্যুর সংখ্যা ৪৪ হাজার ৩৮৬ জনে দাঁড়াল।

দেশটির কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার সকালে জানানো হয়েছে, এক দিনে ৬২ হাজারের বেশি জন করোনা শনাক্ত হয়েছে। এতে শনাক্তের সংখ্যা ২২ লাখ ১৩ হাজার ছাড়িয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত ১৫ লাখ ৩০ হাজারে বেশি করোনা রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছে বলে দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে। জানানো হয়, দেশজুড়ে করোনায় সুস্থতার হার ৬৯ দশমিক ৩৩। বর্তমানে প্রতিনিয়ত ভারতে করোনার যে সংক্রমণ তা যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিলের থেকেও বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে করোনা শনাক্ত ৫০ লাখের বেশি, ব্রাজিলে ৩০ লাখ ৩০ হাজার। এদিকে করোনা শনাক্তের হিসেবে ভারতে শীর্ষে রয়েছে মহারাষ্ট্র। শুধু এ রাজ্যটিতে আক্রান্ত ৫ লাখ ছাড়িয়েছে। এরপরে অবস্থান তামিলনাড়ু ও দিল্লির। ভারতে এক দিনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, ৬৩ হাজার ৮৫১ জন শনাক্তের পর, আক্রান্ত ২২ লাখ ১৪ হাজার ২৬৯ জন। ভারতে ১ হাজার মৃত্যু নিয়ে প্রাণহানি প্রায় সাড়ে ৪৩ হাজার।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close