নিজস্ব প্রতিবেদক

  ০৯ আগস্ট, ২০২০

বঙ্গমাতার জন্মদিনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

স্বাধীনতার প্রেরণা জোগাতেন মা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জীবনে-মরণে জাতির পিতার উপযুক্ত সঙ্গী ছিলেন বঙ্গমাতা। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক সহযোদ্ধা হিসেবে সার্বক্ষণিক প্রেরণা জুগিয়েছিলেন তিনি। সারা জীবন জাতির পিতার আদর্শ ধারণ করে, স্বাধীনতা অর্জনে নিজেকে বিলিয়ে দেওয়া বঙ্গমাতার জীবনাদর্শ বড় শিক্ষা হতে পারে। গতকাল শনিবার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিবের ৯০তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বিশেষ ভার্চুয়াল আলোচনায় এসব কথা বলেন তার মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ সময় ‘জয়তু বঙ্গমাতা’ শীর্ষক স্মারক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি। জয়ীতা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটির মুখবন্ধ লিখেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। বইটির সম্পাদক কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ ও পদ্মা ব্যাংকের চেয়ারম্যান চৌধুরী নাফিজ সরাফাত এবং প্রকাশক জয়ীতা প্রকাশনীর ইয়াসিন কবীর জয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাঙালির সব লড়াই সংগ্রামের নেপথ্য অনুপ্রেরণার অফুরান উৎস হয়ে যিনি কাজ করেছেন, তিনিই বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব। একাধারে এই মহীয়সী নারী সামলেছেন সংসার, তেমনি বাবার রাজনৈতিক জীবনেও ছায়ার মতো ছিলেন মুক্তির মন্ত্রণাদাতা হিসেবে। কালজয়ী এই নিভৃতচারী মহাপ্রাণের ৯০তম জন্মবার্ষিকীতে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় আয়োজিত বিশেষ ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। একযোগে এই অনুষ্ঠান চলে শিশু একাডেমি ও গোপালগঞ্জেও। গণভবন থেকে এতে যুক্ত ছিলেন বঙ্গমাতার জ্যেষ্ঠ তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা ইন্দিরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী রওশন আক্তার।

অনুষ্ঠানে বঙ্গমাতার কর্মময় জীবনের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র পরিবেশন করা হয়। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেগম মতিয়া চৌধুরী। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি।

ভার্চুয়াল এই অনুষ্ঠানেই দুস্থ ৩ হাজার ২০০ নারীকে সেলাইমেশিন, ১ হাজার ৩০০ নারীকে নগদের মাধ্যমে ২ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা ও ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ল্যাপটপ বিতরণ করেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা তার মায়ের ত্যাগ ও সংগ্রামের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘বিলাসিতা থেকে সন্তানদের রক্ষায় কখনো প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনে থাকেননি ফজিলাতুন নেছা। আব্বার আদর্শ ধারণ করেই তার জীবনকে তিনি চালিয়ে গেছেন। আমি মনে করি, মেয়েদের তার আদর্শেই চলা উচিত। যেন নিজের ত্যাগের মাধ্যমে সংসার, দেশ ও প্রতিষ্ঠানকে সুন্দর করা যায়।’

অভিজ্ঞ রাজনৈতিক নেতাদের চেয়েও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত তার মায়ের মাথা থেকেই আসত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জীবনে-মরণে বঙ্গমাতা শুধুই ত্যাগের মহিমা গড়ে গেছেন।

প্রধানমন্ত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুর হাতে সৃষ্টি। পাকিস্তান আমলে বাঙালি সেনারা কখনো প্রমোশন পেত না। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধু অনেককে মেজর জেনারেল করেছিলেন। সেই মেজর জেনারেল জিয়া থেকে শুরু করে মেজর হুদা, নূর, কর্নেল ফারুক, কর্নেল রশিদ প্রমোশন পেয়েছিলেন। কর্নেল ফারুক তো আমাদের বাড়িতে ডিউটি করতেন, তারাই আমার মা-বাবাকে হত্যা করলেন।’

তিনি বলেন, ‘মেজর ডালিম, তার বউ ও শাশুড়ি প্রায়ই আমাদের বাড়িতে যাতায়াত করতেন। ২৩ জুলাই যখন বাংলাদেশ ছেড়ে আমি ও রেহানা জার্মানিতে যাব, সেদিন জয়ের জন্মদিন। আমাদের বাড়িতে ঘটা করে কারো জন্মদিন পালন হতো না। ঘরোয়াভাবে জন্মদিন পালন করছি। সেদিনও মেজর ডালিম, তার স্ত্রী ও ডালিমের শাশুড়ি এসেছিলেন। এমন কোনো দিন নেই তারা আমাদের বাড়িতে না আসতেন। তাদের দাওয়াত করা লাগত না। তারা এমনিতেই এসে হাজির হতেন। সেই বাবার হাতে গড়া সেনা সদস্যরাই মা-বাবার বুকে গুলি চালিয়েছেন। আমার মা সেদিন বাঁচতে চাননি। সাহসিকতার সঙ্গে বলেছিলেন আমার স্বামী যেখানে আমি সেখানেই যাব। এ কথা বলার পর সেখানেই তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। বাবার উপযুক্ত সঙ্গী হয়েই তিনি চলে গেলেন। বাবার আদর্শটা আমার মা মনেপ্রাণে ধারণ করেছিলেন। সেটা ধারণ করেই তার জীবনটাকে তিনি উৎসর্গ করেছেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একজন সাধারণ বাঙালি নারীর মতো স্বামী-সংসার, আত্মীয়স্বজন নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও বাংলাদেশের মহাসংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতার পর দেশ পুনর্গঠনে তিনি অনন্য ভূমিকা রেখে গেছেন।

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের রাজনৈতিক সাফল্যেও বঙ্গমাতা উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। জাতির পিতা রাজনৈতিক কারণে প্রায়শই কারাগারে বন্দি থাকতেন। এই দুঃসহ সময়ে তিনি হিমালয়ের মতো অবিচল থেকে একদিকে স্বামীর কারামুক্তিসহ আওয়ামী লীগ পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। অন্যদিকে সংসার, সন্তানদের লালন-পালন, শিক্ষাদান, বঙ্গবন্ধুকে প্রেরণা, শক্তি ও সাহস জুগিয়ে স্বাধীনতা এবং মুক্তির সংগ্রামকে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে অনন্য ভূমিকা পালন করেছেন।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close