আন্তর্জাতিক ডেস্ক

  ৩১ জুলাই, ২০২০

হজে করোনা মুক্তি ও বিশ্ব শান্তির জন্য প্রার্থনা

‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইক লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা, ওয়াননিমাতা লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাকা’ (আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সব সাম্রাজ্যও তোমার) ধ্বনিতে আরাফাত ময়দান কাঁপিয়ে পালিত হয়েছে হজের আনুষ্ঠানিকতা। ফজরের নামাজ আদায় শেষেই হাজিরা সমবেত হন আরাফাত ময়দানে।

গতকাল বৃহস্পতিবার সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতে অবস্থান করেন তারা। একসঙ্গে আদায় করেন জোহর ও আসরের নামাজ। এবার মসজিদে নামিরাহ থেকে হজের খুতবা দেন ৯২ বছর বয়সি শায়খ ড. আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া।

হাজিরা যখন আরাফাতের ময়দানে, তখন কাবা শরিফের গায়ে নতুন গিলাফ পরানো হয়। এই গিলাফ বা কিসওয়া তৈরিতে ব্যবহৃত হয় কালো রঙের ৬৭০ কেজি খাঁটি রেশম।

সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় গিয়ে মাগরিব ও এশার নামাজ আদায় করেন হাজিরা। রাতে অবস্থান করেন সেখানেই। মুজদালিফায় ফজরের নামাজ আদায় করে আজ শুক্রবার সকালে তারা ফিরবেন মিনায়। সেখানে শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে সর্বোচ্চ ৫০ জন একত্রে জামারাতুল আকাবায় পাথর নিক্ষেপ করবেন। নিক্ষেপের নুড়িপাথর হজ কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যাগের মাধ্যমে এবার সরবরাহ করবে। এরপর আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় হাজিরা পশু কোরবানি করবেন। সবশেষে মাথা মুন্ডন এবং তাওয়াফে জিয়ারত করবেন হাজিরা।

এদিকে করোনা মহামারির বাস্তবতায় পুরোপুরি অচেনারূপে গত বুধবার শুরু হয় পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা। যেখানে প্রথমবারের মতো অন্য দেশ থেকে হজ পালনে সৌদি আরব যেতে পারেননি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা। এবার শুধু যারা সৌদি আরবে অবস্থান করছেন তারাই হজের সুযোগ পেলেন। সৌদি আরবের ও সেখানে অবস্থান নেওয়া অন্য দেশের নাগরিকসহ ১০ হাজার হাজির পদচারণায় মিনার মাঠে শুরু হয় পবিত্র হজের আনুষ্ঠানিকতা।

হজে অংশ নেওয়া সবার বয়সই ২০ থেকে ৫০-এর মধ্যে। এবার কোনো হাজিকে কাবা শরিফ স্পর্শ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। পাঁচ ফুট দূরে থেকে তাওয়াফ, নামাজে অংশগ্রহণ, সাঈসহ হজ পালন করা হয়।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হাজিরা পবিত্র মক্কা নগরী থেকে পাড়ি জমান মিনার দিকে। মিনার তাঁবুতে রাত কাটান। তার আগে সবাইকে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী সাত দিন আইসোলেশন পালন করতে হয়। প্রতিটি তাঁবুতে এবার দুই থেকে চারজন হজযাত্রীর একত্রে থাকার সুবিধা রয়েছে যাতে কোভিড-১৯ বিধানের আওতায় সামাজিক নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত হয়। এরই মধ্যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা থেকেও এবারের সীমিত আকারের ব্যতিক্রমী হজের সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে। সেটি অনুসরণ করেই মক্কা মদিনা, মিনা, মুজদালিফা ও আরাফাতের ময়দানে নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা।

গতকাল স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২৮ মিনিটে সালাম দিয়ে হজের খুতবা শুরু করেন তিনি। খুতবার শুরুতে আল্লাহতায়ালার প্রশংসা ও হজরত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর দরুদ পাঠ করেন।

খুতবায় তিনি বৈশ্বিক মহামারি থেকে মুক্তি, গোনাহ মাফ, আল্লাহর রহমত কামনাসহ সমসাময়িক প্রসঙ্গ নিয়ে বিশ্ববাসীর প্রতি নানা নির্দেশনামূলক বক্তব্য দেন।

এ বছর পবিত্র হজের আরবি খুতবা অন্যান্য ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষায়ও অনুবাদ করে সম্প্রচার করা হয়। দুটি সম্প্রচার মাধ্যমে হজের খুতবা ১০টি ভাষায় অনুবাদ করে প্রচার করা হয়। বাংলা ছাড়াও বাকি ৯টি ভাষা হলো-ইংরেজি, মালয়, উর্দু, ফার্সি, ফ্রেঞ্চ, মান্দারিন, তুর্কি, রুশ ও হাবশি। হজ চলাকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যাতে না ছড়ায়, সে লক্ষ্যে বিভিন্ন সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নিয়েছে সৌদি সরকার। পর্যাপ্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বিনা অনুমতিতে মক্কা ও এর আশপাশের এলাকায় প্রবেশে কড়া নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। যারা ২০ জুলাই থেকে ২ আগস্ট পর্যন্ত বিনা অনুমতিতে হজের রোকন অঞ্চলে প্রবেশ করবেন, তাদের জন্য ১০ হাজার রিয়াল জরিমানার বিধান করা হয়েছে।

এছাড়া পবিত্র হজে নিরাপত্তার কাজে প্রথমবারের মতো নারী পুলিশ মোতায়েন করেছে সৌদি আরব। এছাড়া অনুমোদন ছাড়া হজে অংশ নিতে গিয়ে গত বুধবার ২৪৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন মক্কায়। গ্রেফতারের পাশাপাশি এভাবে যারা হজ করতে আসবেন, তাদের ১০ হাজার রিয়াল জরিমানাও গুনতে হবে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close