গাজী শাহনেওয়াজ

  ০৯ জুলাই, ২০২০

করোনার নতুন উপসর্গ : সর্দি জ্বর সেরে যাচ্ছে ১৪ দিনে

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভিমত

বিশ্বের মতো বাংলাদেশও করোনা সংক্রমণের হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। নমুনা পরীক্ষায় গত কয়েক দিন রোগী শনাক্তের হার নি¤œমুখী দেখা গেলেও মৃত্যুহারে পিছিয়ে নেই বাংলাদেশে আক্রান্তরা। তবে একজন বিশেষজ্ঞ বলেন, করোনাভাইরাসে এখন রোগীর সংখ্যা আগের চেয়ে বেড়েছে, যেহেতু এই রোগের কোনো সুনির্দিষ্ট ওষুধ নেই তাই অনেকে নমুনা দেন না ডাক্তারের কাছেও যান না। বাসায় বসেই নিজের মতো চিকিৎসা করান। সেরেও ওঠেন। তাই বাংলাদেশে এখনো প্রকৃত পক্ষে কত লোক করোনায় আক্রান্ত তার সঠিক হিসাব নেই। ওই বিশেষজ্ঞ এও বলেন শরীরের অন্য কোনো জটিলতা না থাকলে করোনা আক্রান্ত রোগী ১৪ দিনে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে ওঠেন।

করোনাতে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে উপসর্গ কি? এ নিয়ে চিকিৎসা গবেষক ও বিশ্বসংস্থা এক জায়গাতে এখনো থিতু

হতে পারেনি। এ কারণে অনেক নাগরিক করোনার উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষার দিকে ঝুঁকছেন না। আর দেশে করোনা পরীক্ষা করাতে গিয়ে ভোগান্তির কথা এরই মধ্যে বলেছেন অনেকে। এছাড়া সংক্রমিত রোগীর বদ্ধমূল ধারণা এই করোনা রোগের কোনো ওষুধ আবিষ্কার হয়নি, Ñএ রোগ নিয়ে চিকিৎসের পরামর্শের দরকার নেই। এমনি একজন শাহ আলম। তার অভিমত করোনার উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা করানোর পর আমার পজিটিভ এলো কিন্তু চিকিৎসা নেই তাহলে পরীক্ষা করানোর পেছনে না ছুটে ন?্যাচারাল পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজেকে সুস্থ করে তোলাই শ্রেয়। আর কালশীর সাবিনা সুলতানা বলেন, প্রথম দিকে যাদের করোনা হয়েছে বলতে শুনেছি তাদের মাথায় প্রচন্ড যন্ত্রণা, মুখে তিতাভাব, খেতে না পারা এবং তীব্র শ্বাসকষ্ট। বর্তমানে আমার গলায় ব?্যথা ও হালকা সর্দি-জ্বর। তিনি বলেন, আমার আত্মীয়স্বজন অনেকের সঙ্গে কথা বলে জানছি এ ধরনের উপসর্গ তাদের মধ্যেও দেখা দিয়েছে। সেই অর্থে বলা যায়, ঘরে ঘরে করোনার উপসর্গ নিয়ে অনেকেই বসবাস করছেন। কেউ চিকিৎসের পরামর্শ নিচ্ছেন। কেউ থাকছেন চুপ। তবে শহরের অনুপাতে গ্রামে করোনার প্রার্দুভাব বেশি দেখা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার সাতক্ষীরার শ্যামনগরে একজন করোনা আক্রান্ত হয়ে গতকাল বুধবার মারা গিয়েছেন। তার হ্যার্ট ও ডায়াবেটিসের সমস্যার সঙ্গে তীব্র শ্বাসকষ্ট ছিল। সদ্য প্রয়াত এই ব্যক্তির করোনা পজিটিভ ছিল। বর্তমানে তার মতো এতো জটিলতার উপসর্গ কম রোগীর মধ্যে দেখা গেছে।

তবে চিকিৎসকরাও এসব রোগীর মতো করোনার উপসর্গ নিয়ে উদ্বিগ্নতা আগের মতো ততটা দেখাচ্ছেন না। করোনা প্রথমদিকে যতটা শক্তিশালী ছিল বর্তমানে সংক্রমণের হার বেশি মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ায় অনেকটা দুর্বল হয়ে আসছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন, করোনা মানুষের মধ্যে যত সংক্রমিত হবে ততই এর কার্যক্ষমতা কমবে। তবে এটা নিয়ে চিন্তা না করে সাধারণ ফ্লু হিসেবে মেনে দৈনন্দিন কাজ চালিয়ে যেতে হবে। একজন বিশেষজ্ঞ বললেন, জ্বর নামক এই ফ্লুটি গত কয়েক বছর আগে ছিল তখন এটার স্থায়িত্ব ছিল এক সপ্তাহ। বর্তমানে করোনার এই উপসর্গ স্থায়ী হচ্ছে দুই সপ্তাহ। এতটুকু পার্থক্য।

করোনার উপসর্গ কি এখন বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে জানতে চাইলে সাবেক পিজির মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডা. সাবরিনা সুলতানা বলেন, মাত্রাতিরিক্ত জ্বরের পরিবর্তে বেশির ভাগ রোগীর কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে গলায় ব্যথা ও হালকা কাশি, সামান্য জ¦র। এসব উপসর্গ নিয়ে যারা নমুনা পরীক্ষা করাচ্ছেন তাদের দেখা যাচ্ছে পজিটিভ আসছে। আবার অনেকে পরীক্ষা করানো থেকে বিরত থেকে ঘরোয়া চিকিৎসা নিচ্ছেন। ১৪ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করে দেখছেন ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছেন। তিনি যে পজিটিভ ছিলেন কি ছিলেন না নিজেও জানেন না।

আর হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের সাবেক সহযোগী আধ্যাপক ডা. শহীদুল আলম বলেন, করোনার বর্তমানে যে উপসর্গ তাতে সংশ্লিষ্ট রোগীকে চারটি কাজ থেকে বিরত থাকতে হবে; যার মধ্যে চিকিৎসকের কাছে এই রোগ নিয়ে না যাওয়া, হাসপাতালে ভর্তি হওয়া থেকে বিরত থাকা, করোনা ভালো হয়, কারো প্রচারণায়Ñ এমন কোনো ওষুধ না খাওয়া এবং গত পাঁচ বছর ধরে যে অভ্যাস নেই তা চালু করা থেকে বিরত থাকা।

তিনি বলেন, যে চারটি কারণের কথা বলছি এর অর্থ এই নই যে; চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া যাবে না। এক্ষেত্রে যে রোগীর ডায়াবেটিস রয়েছে অথবা হার্টের সমস্যা কিংবা লিভারের সমস্যা রয়েছে এ সময়ে (করোনা প্রার্দুভাব) ওই রোগীকে বিরাজমান রোগের ওষুধের প্রতি বেশি যতœশীল হওয়া এবং চিকিৎসকের পরামর্শে সেগুলো নিয়মমাফিক সেবন করা।

পিজির মেডিকেল অফিসার ডা. সাদিউল ইসলাম বলেন, করোনার সংক্রমণ এড়াতে প্রত্যেককে আবশ্যই মাস্কস, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দিয়ে বার বার হাত পরিষ্কার করা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সম্ভব হলে সার্জিক্যাল ক?্যাপ মাথায় পরে বাসা থেকে বের হওয়া। এগুলো মানলে কিছুটা হলেও গণসংক্রমণ থেকে নিজেকে রক্ষা করা যেতে পারে। এর জন্য জনসচেতনতা অনেক বেশি প্রয়োজন বলে মত দেন এই চিকিৎসক।

বিশ্বস্বাস্থ্যের তথ্য মতে, গত বছর থেকে শুরু হওয়া করোনায় বিশে^ আক্রান্ত হয়েছেন কোটির বেশি মানুষ, মারা গেছেন পাঁচ লাখের বেশি এবং সুস্থতার হারও কম নয়। গত মঙ্গলবার দেশে করোনাভাইরাসে মারা গেছে ৫৪ জন। গতকাল বুধবার মারা গেছে ৪৬ জন। তবে বিশ্বে এ রোগে মারা গেছেন সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। এই দেশে মারা গেছে লক্ষাধিক। ভারতের একজন চিকিৎসক নাম ব্যবহার না করার শর্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা রোগীর ওপরে অযাচিত ওষুধ প্রয়োগের কারণে মৃত্যু হার বেশি যা ভারতীয় চিকিৎসা গবেষকদের গবেষণায় বের হয়েছে। এমনি একটি ওষুধ অক্সিক্লোরোকুইন ওষুধ। পরে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ওষুধটি নিষিদ্ধ করে দিয়েছে।

"

প্রতিদিনের সংবাদ ইউটিউব চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুন
আরও পড়ুন
  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়
close